সন্দীপ্তা ভঞ্জ: ভালবাসার যেমন জাত-পাত-ধর্ম হয় না, তেমন কোনও লিঙ্গও হয় না। সমকামী প্রেমকে সুপ্রীম কোর্ট অনেক আগেই স্বীকৃতি দিয়েছে, কিন্তু বর্তমানেও মফঃস্বল হোক কিংবা শহরের বুকে, সমকামপ্রেমীরা কি মুক্ত বিহঙ্গের মতো উড়তে পারে? সমাজ তথা পারিবারিক লাঞ্চনা-বঞ্চনার মাঝে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়েও মুক্তির স্বাদ নিতে পারে? সেরকমই একটি প্রশ্ন ছুঁড়েছে রামকমল মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘সিজনস গ্রিটিংস’।
আচ্ছা বিশ্ব যতবার ভালবাসার গল্প বুনেছে, তাতে কেন সবসময়ে বিপরীত লিঙ্গের প্রতিই আকর্ষণ, প্রেম-সম্পর্কের গল্প দেখানো হয়েছে? কেন নারীর প্রেমেই পড়তে হবে একজন পুরুষকে? কিংবা এক পুরুষের প্রেমেই পড়তে হবে নারীকে! হির-রাঞ্ঝা, রোমিও-জুলিয়েট, ল্যায়লা-মজনু, আজন্মকাল ধরে এই জুটিরগুলোর উদাহরণই তো আমরা শুনে এসেছি, কিংবা শোনানো হয়েছে। ব্রাত্য থেকে গিয়েছে সেই নামগুলো যারা সমলিঙ্গের প্রেমে পড়েছেন। কেন? সমাজের মুখে গভীর প্রশ্ন ছুঁড়েছে সমসাময়িক কিছু বলিউড ছবি। সেই তালিকাতেই এবার সংযোজিত হল ‘সিজনস গ্রিটিংস’।
মা-মেয়ের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে ছবির গল্প। রোমিতা এবং সুচরিতা, তাঁদের জীবনের নানা টানাপোড়েনের কথা উঠে এসেছে ছবিতে বারবার। পনেরো বছর ধরে বাবা মা’র দূরত্ব দেখে আসা এক মেয়ে নিজের মতো করেই বেড়ে উঠেছে। সে স্বাধীনচেতা। হিন্দু হয়েও মুসলিমের প্রেমে পড়েছে। ধর্ম, স্থান-কাল দেখে যেমন রোমিতা প্রেমে পড়েনি, সেরকমই প্রেমিকের কাছে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে সে তাঁর সম্পর্কের জন্য ধর্ম পরিবর্তন করতে পারবে না। অন্যদিকে, মা সুচরিতার চরিত্রের মধ্যে দিয়ে পরিচালক এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিতে চেয়েছেন- ‘আমি যেমন, আমাকে তেমন ভাবেই মেনে নিক এই সমাজ।’ এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, ছবির ক্লাইম্যাক্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষকে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানিয়ে রামকমল এই ছবি তৈরি করেছেন। সেই এসেন্স ছবির বেশ কিছু ফ্রেমে রয়েছে। যেমন, ঋতুপর্ণ তাঁর প্রত্যেকটি ছবিতে সেটসজ্জার ক্ষেত্রে ভীষণ নিখুঁত ছিলেন। বিশেষত, ইন্টিরিয়রের ক্ষেত্রে। রামকমলের ‘সিজনস গ্রিটিংস’-এও তাঁর ছোঁয়া মিলল। একটি দৃশ্যে মা সুচরিতা (লিলেট দুবে) এবং মেয়ের (সেলিনা জেটলি) কথোপকথন ‘উনিশে এপ্রিল’-এ দেবশ্রী এবং অপর্ণা সেনের কথা মনে করিয়ে দিল। শৈলেন্দ্র কুমারের আবহ সংগীতের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ্য।
[আরও পড়ুন:লকডাউনের মাঝেই প্রকাশ্যে ‘মিসেস সিরিয়াল কিলার’-এর ট্রেলার, খুনীর চরিত্রে জ্যাকলিন]
উল্লেখ্য, এখনও যে আমাদের সমাজ খুব একটা উদার সমকাম প্রেম নিয়ে, তা কিন্তু নয়! কারণ, বাইরে সমকামিতা নিয়ে যতই বুলি আওড়ানো হোক না, পারিবারের সদস্য সমকামী হলে সেক্ষেত্রে উদারতার উদাহরণ খুব কমই দেখা যায় চারপাশে। বাবা-মা হোক কিংবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে রোজ যুঝে ওঠাটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। মানসিক যন্ত্রণা, আপনজনের সঙ্গে দূরত্ব-লড়াই, যেসমস্ত ক্রাইসিসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়, সেই অভাববোধগুলো ছবিতে কোথায় যেন হারিয়ে গিয়েছে!
পারিবারিক গল্পের মোড়কে সমলিঙ্গ প্রেমকে এস্টাবলিশ করার জন্য চিত্রনাট্যে আরেকটু যত্নবান হলে ভাল হত। প্রত্যেকটি চরিত্রের আবেগ-অনুভূতিগুলো কিছু জায়গায় আরও স্পষ্ট হতে পারত। তবে উল্লেখ্য, এযাবৎকাল ছেলে-মেয়ের সমকামিতা নিয়ে মা-বাবার সমস্যার গল্প দেখা গিয়েছে পর্দায়, কিন্তু এক্ষেত্রে স্রোতের বিপরীতেই হেঁটেছেন রামকমল মুখোপাধ্যায়। সংসার সামলানোর দীর্ঘকাল বাদে সন্তান মায়ের সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণের কথা জানতে পারে। ‘সিজনস গ্রিটিংস’-এর বাকি গল্প জানতে হলে চোখ রাখুন জি ফাইভ প্রিমিয়ারে।
[আরও পড়ুন: লকডাউনের রূঢ় বাস্তব তুলে ধরল অম্বরীশের ছোট ছবি ‘গলদা চিংড়ি’]
The post ‘ভালবাসায় বাঁচুক পৃথিবী’, বলছে ‘সিজনস গ্রিটিংস’ appeared first on Sangbad Pratidin.