রমেন দাস: দেশের অন্যতম নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দিল্লির জওহরলাল নেহরু (JNU) বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী পরিবেশে রামমন্দির (Ram Temple) উদ্বোধনের লাইভ সম্প্রচার হবে। সেই পথেই হাঁটল কলকাতার বামপন্থী প্রতিষ্ঠান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় (JU)। সেখানেও ২২ জানুয়ারি জায়ান্ট স্ক্রিন বসানো হচ্ছে, অযোধ্যায় রামলালার প্রাণপ্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠান সরাসরি দেখানোর জন্য। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের গান্ধী ভবনের সামনে লাগানো হবে জায়ান্ট স্ক্রিন। ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের তরফে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব পড়ুয়া ভারতীয় সংস্কৃতি অনুরাগী, তাঁদের জন্য এই ব্যবস্থা।
তবে এবিভিপির (ABVP) তরফে রামমন্দির উদ্বোধনের দিন আলাদা আয়োজন করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, সোমবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে রামের প্রতিকৃতিতে মাল্যদানের ব্যবস্থা হবে। এর পর লাড্ডু বিতরণ করবে এবিভিপি। সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বালাবেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এবিপিভি সদস্যরা। এই কর্মসূচির জন্য এবিপিভির তরফে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও তা মেলেনি বলেই খবর। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
[আরও পড়ুন: ‘চরিত্রহীন দাদা’, বউদি সানিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে শোয়েবকেই কাঠগড়ায় তুললেন বোন]
এবিভিপির যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নিখিল দাস ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল’কে জানান, ”অনুমতির বিষয়টি এখানে আসছে কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ে তো বহু অনুষ্ঠান হয়, বহু ছাত্র সংগঠন করে। ছাত্ররা করেন ক্যাম্পাসেই। এক্ষেত্রেও যাঁরা ভারতীয় সংস্কৃতিকে ভালোবাসেন, তাঁরা রামমন্দির উদ্বোধনের ছবি দেখবেন। অন্যদিকে আমরাও বিকালে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করব। বিশ্ববিদ্যালয়ে কি রামের প্রবেশ নিষেধ রয়েছে? ভারতের সংস্কৃতি মানায় কি বিধিনিষেধ রয়েছে? অন্য ধর্মের ক্ষেত্রে তো বাধা থাকে না!”
অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের কর্মসূচিকে ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। এই প্রসঙ্গে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএফআইয়ের ছাত্র নেত্রী তমোলীনা ঘোষের দাবি, ”আমাদের কোনও ধর্ম নিয়ে কোনও আপত্তি নেই। সর্ব ধর্ম পালনের স্বাধীনতা সকলের আছে। কিন্তু বলা হচ্ছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা নাকি এসব করছেন, আমি বলব, আমিও ছাত্রী ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের। আমরা এভাবে নির্দিষ্ট কোনও বিষয় নিয়ে, ধর্মের রাজনীতি চাইছি না। অশান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। ক্যাম্পাসে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এটা আটকাতে যা যা করণীয় করব আমরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে আর একটিও খারাপ ঘটনা ঘটতে দেব না।”
[আরও পড়ুন: কমোড লাগবেই! জেলে অদ্ভুত ‘আবদার’ শংকরের]
প্রায় একই সুর যাদবপুরের ছাত্রনেত্রী, টিএমসিপি (TMCP) সভাপতি রাজন্যা হালদার। তাঁর কথায়, ”যা নেই ভারতে, তা যাদবপুরেও থাকবে না। এসব আসলে কিছু নয়, সম্পূর্ণ ধর্মের নামে বিভেদের চেষ্টা। এবিভিপি ক্যাম্পাসে সেটাই করতে চাইছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় বামপন্থী সংগঠন গুলো প্রায় চুপ! আমি বলব, ধর্মের নামে বিভেদের চেষ্টা প্রতিহত করতেই হবে। রাস্তায় সকলে প্রতিবাদ করুক।”
এবিভিপির কর্মসূচি নিয়ে তোপ দেগেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের ছাত্র তথা গণতন্ত্রী শিক্ষার্থী ফ্রন্টের সদস্য জাহিদ খান। তাঁর দাবি, ”বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রচুর মন্দির রয়েছে। এখানেই ইফতার পালিত হয়। কোনও অসুবিধা তো নেই। কিন্তু একটি নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে, যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে বিস্তর। সেটার জন্য এমন পদক্ষেপ তো আসলে শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্যের শামিল।”