সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আজ সোমবার সুপ্রিম কোর্টে অযোধ্যার জমি বিবাদ সংক্রান্ত মূল মামলার শুনানি শুরু হতে চলেছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নতুন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি শুরু হবে। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ, বিচারপতি সঞ্জয় কিষণ কল ও বিচারপতি কে এম জোসেফের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি চলবে। অযোধ্যা মামলার শুনানি একটানা চলবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত বিচারপতিরা আজই নিতে পারেন এমন সম্ভাবনাও রয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি আব্দুল নাসের ও বিচারপতি অশোক ভূষণের বেঞ্চে এই মামলাটি ছিল।
এদিকে শুনানির আগেই বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে তুঙ্গে পৌঁছেছে রাজনৈতিক তরজা। ইতিমধ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রাক্তন সাংসদ তথা বিজেপি নেতা বিনয় কাটিয়ার| তাঁর হুমকি রাম জন্মভূমিতে মন্দিরই হবে। এর বিপরীতে আদালত রায় দিলে দেশজুড়ে শুরু হবে প্রবল আন্দোলন। আসরে নেমেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংও। তাঁর হুমকি, ‘হিন্দুদের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে পড়ছে। আমার ভয় হচ্ছে এবার হিন্দুরা কোনও অনর্থ করে ফেলবে।’ গেরুয়া শিবিরের পালটা দিয়েছেন কংগ্রেস নেতা পি এল পুনিয়া। তাঁর মন্তব্য রাম মন্দির নিয়ে বিজেপি রাজনীতি করছে। সংবিধান লঙ্ঘন করছে দলটি। সব পক্ষকেই শীর্ষ আদালতের রায় মানতে হবে।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর অযোধ্যা সংক্রান্ত মামলাটি পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চের কাছে পুনর্বিবেচনার জন্য পাঠাতে অস্বীকার করে সর্বোচ্চ আদালত। ১৯৯৪ সালে শীর্ষ আদালত তাদের একটি পর্যবেক্ষণে জানায়, ইসলাম ধর্মে নমাজ পড়ার জন্য মসজিদ অপরিহার্য নয়। অযোধ্যা মামলার শুনানির সময়েও এই বিষয়টি উত্থাপিত হয়। সেই কারণেই বিষয়টিকে পুনর্বিবেচনার প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট তা খারিজ করে দেয়। তার পরই আজ মামলার শুনানি শুরু হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টে।
লোকসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগেই অযোধ্যা জমি মামলার শুনানি শুরুর বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে রামমন্দির আদৌ তৈরি হবে কিনা সে বিষয়ে আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত লোকসভা ভোটের আগেই সামনে চলে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। কেন্দ্রের শাসক শিবিরের আশা, লোকসভার আগেই রামমন্দির তৈরির বিষয়ে সবুজ সংকেত মিলবে। আর তাতে ভর করেই ভোটের ময়দানে নামতে পারবে বিজেপি। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং ইতিমধ্যেই মামলাটি দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে অনুরোধ করেছেন। অযোধ্যা মামলার শুনানি শুরুর দিনক্ষণ সামনে আসতে কিছুদিন আগে থেকেই দেশে রামমন্দির তৈরি হতে চলেছে বলে রাজনীতির পারদ চড়তে শুরু করেছে। যা অত্যন্ত স্বাভাবিকও। রামমন্দির-বাবরি মসজিদ বিবাদ ভারতীয় রাজনীতির দিশা পরিবর্তন করে দিয়েছিল সে কথা সর্বজনবিদিত। বিগত চার দশক ধরে চলা এই জমি বিবাদকে কেন্দ্র করে সব রাজনৈতিক দলই নিজেদের সুবিধা মতো রাজনীতি করেছে। রাম মন্দির ইস্যুকে সামনে রেখেই বিজেপির উত্থান বললেও ভুল বলা হয় না। এই মন্দিরকে কেন্দ্র করে বিস্তর ঘটনার ঘনঘটা যার প্রভাব জাতীয় রাজনীতির উপর ভাল রকমই পড়েছে।
আট বছর আগে, ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এলাহাবাদ হাই কোর্টের রায় অনুসারে, অযোধ্যার বিতর্কিত জমির দু’ভাগ হিন্দুদের নির্মোহী আখড়া ও হিন্দু মহাসভা এবং একভাগ মুসলিম সংগঠন সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের মধ্যে ভাগ করে দেওয়ার কথা বলা হয়। এর মধ্যে মাঝের যে অংশে বর্তমানে রামলালার মূর্তি রয়েছে সেই অংশ হিন্দু মহাসভা, দ্বিতীয় অংশ যেখানে সীতার রান্নাঘর ও রাম চবুতরা রয়েছে সেই অংশকে নির্মোহী আখড়া এবং বাকি এক তৃতীয়াংশ সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে ভাগ করে দিয়েছিল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উভয়পক্ষই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। যার জেরে ২০১১ সালের ৯ মে সুপ্রিম কোর্ট এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ের উপরে স্থগিতাদেশ জারি করে দেয়। পরবর্তীকালে ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর অযোধ্যা মামলার শুনানি শুরু হয় এবং সেটিকে জমি বিবাদ মামলা হিসেবে দেখা হবে বলেই সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়। যদিও তারপরেও অযোধ্যা সংক্রান্ত অন্য একটি মামলা চলার কারণে মূল মামলাটির শুনানি পিছিয়ে যায়। কিন্তু গত মাসে সুপ্রিম কোর্ট সেই মামলাটি খারিজ করে দেওয়ার পরেই মূল মামলার শুনানি শুরুর ক্ষেত্রে সব জট কেটে যায়।
[জাভা সমুদ্রে ভেঙে পড়ল যাত্রীবাহী বিমান, বহু মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা]
The post হিন্দুদের ধৈর্য্যের পরীক্ষা নেবেন না, রাম মন্দির ইস্যুতে হুমকি গিরিরাজের appeared first on Sangbad Pratidin.