দেবব্রত মন্ডল: ভারতবর্ষে এই প্রথম! গোটা দেশে দৃষ্টিহীন ভোটারদের দেওয়া হচ্ছে ব্রেইল পদ্ধতিতে তৈরি বিশেষ ভোটার স্লিপ। যা তৈরি হচ্ছে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে। নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে এই অভিনব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
দেশজুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে লোকসভা ভোটের তোড়জোড়। ইতিমধ্যেই ভোট সুনিশ্চিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে। এবার দৃষ্টিহীন ভোটারদের জন্য কমিশন গ্রহণ করেছে একগুচ্ছ নির্বাচনী ব্যবস্থা। বৃদ্ধদের যেমন বাড়িতে গিয়ে ভোটদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে তেমনি যে সমস্ত ভোটাররা জন্মগত বা বিভিন্ন কারণে দৃষ্টি হারিয়েছেন তাদের জন্য নেওয়া হচ্ছে সেই সমস্ত অভিনব ব্যবস্থা।
এতদিন যখন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট হতো তখন দৃষ্টিহীনদের জন্য আলাদা করে ব্রেইল পদ্ধতিতে ব্যালট ছাপানো হতো। সেই ব্যালটের উপর হাত বুলিয়েই নির্দিষ্ট প্রার্থী এবং পছন্দের প্রতীক বুঝে নিতে পারতেন তাঁরা। ইভিএম চালু হওয়ার পরও সেই পদ্ধতির খুব একটা বদল হয়নি। কারণ ইভিএম মেশিন থাকলেও একটি আলাদাভাবে কাগজের সঙ্গে দৃষ্টিহীন ভোটারদের জন্য ব্রেইলে পছন্দের প্রতীক এবং ভোটারের নাম দেওয়া থাকছে। যা থাকে সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং অফিসারের কাছে। দৃষ্টিহীন ভোটাররা ইভিএম মেশিনে গিয়ে বোতাম চাপলেই ভোট সম্পন্ন হয়। এতদিন এই সমস্ত পদ্ধতিগুলো মোটামুটি সমস্ত দৃষ্টিহীন ভোটারদের কাছে অবগত হয়ে গিয়েছে। এবার আরও কিছু সুযোগ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ভোটার স্লিপে ব্রেইল পদ্ধতি ব্যবহার।
ভোটার স্লিপে ব্রেল পদ্ধতি ব্যবহারের কাজ চলছে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ব্রেইল বিভাগে। নরওয়ের তৈরি ব্রেইল মেশিনের মাধ্যমে ছাপা হচ্ছে ভোটার স্লিপ। যথেষ্ট কষ্ট সাপেক্ষ এবং সময় নিয়ে তৈরি করতে হচ্ছে এই সমস্ত স্লিপগুলো। প্রথমে কম্পিউটারে টাইপ করে প্রতিটি ভোটারের জন্য নির্দিষ্ট স্লিপ তৈরি করা হচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে লোকসভা কেন্দ্র সংশ্লিষ্ট বিধানসভা পার্ট নম্বর সবই থাকছে সেখানে। যা একেবারেই অভিনব। ফলে কারও সাহায্য ছাড়া দৃষ্টিহীন ভোটার নিজে থেকেই বুঝে নিতে পারবেন তাঁর ভোট কেন্দ্র কোথায় এবং ভোটার স্লিপে তার নাম ও এপিক নম্বর কোথায় ছাপা আছে।
প্রথম দফায় যে সমস্ত কেন্দ্রে ভোট হবে সেইগুলোতে ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে এই অভিনব ব্রেইল ভোটার স্লিপ। ত্রিপুরা এবং পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে সেগুলো পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ব্রেইল বিভাগের সিনিয়র রিজিওনাল ম্যানেজার অরূপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, "পাঠ্যপুস্তক ছাড়াও বিভিন্ন বই ব্রেইল পদ্ধতিতে আমরা এখানে তৈরি করি। ভোটের মরশুমে এই অতিরিক্ত কাজ আমাদের কাছে আসে। অল্প সংখ্যক কর্মী নিয়ে প্রায় রাতদিন খেটেই আমাদের কাজ করতে হয়। অন্যান্য কাজ বিশেষ করে পাঠ্যবই তৈরী তখন বন্ধ রাখতে হয়। এখন বিভিন্ন স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের চাপ বেড়েই চলেছে তার সঙ্গে ভোটের এই পদ্ধতির কাজ আরও বাড়িয়ে তুলেছে ব্রেইলের জনপ্রিয়তাকে।"
অল্পসংখ্যক কর্মী নিয়ে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ব্রেইল বিভাগ অংশগ্রহণ করেছে গণতন্ত্রের এই মহাযজ্ঞে। সমস্ত বিভাগ যেভাবে ভোটের কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে ঠিক সেই ভাবেই জড়িয়ে পড়েছে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের ব্রেইল বিভাগ। যা একেবারেই অভিনব। এবার লক্ষ্যধিক ব্রেইল ভোটার স্লিপ ছাপা হচ্ছে এই নরেন্দ্রপুরে রিজিওনাল ব্রেইল প্রেস থেকে।