নির্মল ধর: নতুন বছরের শুরুটা সত্যিই একটু অন্যরকম হয়ে গেল। তেমন কোনও বড় তারকা নেই, নেই প্রচারের ঝমঝম বাদ্যি, প্রায় নীরবেই সীমা পাহওয়ার নতুন ছবি ‘রামপ্রসাদ কি তেরভি’ (Ramprasad Ki Tehrvi) যেন জানিয়ে দিয়ে গেল সিনেমায় এখনও সাংসারিক, ঘরোয়া কাহিনির কোনও বিকল্প নেই। হ্যাঁ, এই ছবি বক্স অফিসে তুমুল ঢেউ হয়তো তুলবে না, তবে অঁসম্বল কাস্টিং এবং গল্পের মানবিক জোরেই দর্শকদের মুগ্ধ করবে। বাড়ির বৃদ্ধ (নাসিরউদ্দিন শাহ) হঠাৎ মারা গেলে ছেলে-মেয়ে, বউমা-জামাইয়ের দল নাতি-নাতনিদের নিয়ে ভিড় করে শেষকৃত্য সম্পন্নের জন্য। পুরো বাড়িজুড়ে শোকের আবহ ভিন্ন মোড় নেয় বৃদ্ধের ধার নেওয়া টাকা শোধের জন্য ব্যাংকের কর্মী এসে পড়ে। অবশ্য তার আগেই শুরু হয়ে গিয়েছিল পারস্পরিক চাওয়া-পাওয়া নিয়ে ঈর্ষা, খুনসুটি, মান-অভিমানের খেলা। বাড়ির ছোট ছেলে নিশান্ত(পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) ও ছোট বউ শান্তা (কঙ্কনা সেনশর্মা) অনেকের চক্ষুশূল। শান্তা অভিনেত্রী হতে মুম্বই পাড়ি দিয়েছিল। নিশান্তের সঙ্গে তার সম্পর্কটাও একটু চিড়ধরা। ছেলে ও জামাইরা দু’দিন পর থেকেই সন্ধ্যা মৌতাতে মগ্ন। এমনকি লখনউ থেকে বারাণসী গিয়ে চিতাভস্ম বিসর্জনের রাতেও বেশ আড্ডা জমায় সব্বাই। পরিচালক সীমা (Seema Pahwa) অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পারিবারিক আবহ তৈরি করেছেন ক্যামেরার সামনে। বাড়ির মধ্যে রান্নাঘর থেকে শোবার ঘর, সর্বত্র বাস্তবতার ছোঁয়া চোখ ও মনকে আরাম দেয়।
এই ছবির মূল সুর হল স্বাভাবিকতা ও সারল্য। ব্যাংকের ঋণ কীভাবে শোধ হয়, ছেলে-মেয়েরা, বউ-জামাইরা কে কতটা দায়িত্ব নেন বা নেন না, তার চাইতে ছবিতে বড় হয়ে ওঠে পরিচালকের সহানুভূতি ও সহমর্মিতা নিয়ে সাজানো চরিত্ররা এবং গল্পের সমাপ্তি। নাটুকে করে তোলার জায়গাগুলোকে নিয়ে সীমা বেশ নিচু লয়ে খেলেছেন। তাঁর পরিমিতবোধ প্রশংসনীয় তো বটেই প্রকাশ এবং প্রকরণও সহজ-সরল নিবিড়ভাবে আন্তরিক। অথচ অনুভবে গভীর এবং গম্ভীর।
[আরও পড়ুন: নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বড় ঘোষণা শাহরুখের, হাসি ফুটল অনুরাগীদের মুখে]
এই অতিমারীর (COVID-19) শ্বাসরোধ পরিস্থিতি এবং রাজনীতির নোংরা রেষারেষির অস্বাস্থ্যকর আবহাওয়ায় সীমার ছবি যেন এক ঝলক আনন্দের শীতল হাওয়া। ছবিতে যেমন কোনও দেখানেপনা নেই, তেমন পরিবেশনায় দারিদ্রের পাশাপাশি গহন আন্তরিকতার ছাপও রয়েছে। দারিদ্র্যই বরং আভরণ হয়ে উঠেছে। দোসর একঝাঁক অভিনেতার জীবন্ত উপস্থিতি। নাসিরউদ্দিন শাহকে (Naseeruddin Shah) অতিথি শিল্পীই বলছি। তাঁর প্রায় কোনও সংলাপই নেই। রয়েছেন বিনয় পাঠক, সুপ্রিয়া পাঠক, মনোজ পাহওয়া, বিক্রান্ত মেসি, ব্রজেন্দ্র কালা এবং আমাদের কলকাতার পরমব্রত (Parambrata Chattopadhyay) ও কঙ্কনা (Konkona Sen Sharma)। এঁদের স্বাভাবিক, সহজ অভিনয়ে প্রতিটি চরিত্র প্রাণ পেয়েছে। পরম ও কঙ্কনা ছোট ছেলে ও বউমার চরিত্রে প্রবীণদের সঙ্গেই বেশ জমিয়ে কাজ করেছেন। বলা যায়, সীমা পাহওয়া যথার্থভাবেই অঁসম্বল কাস্টের সদ্ব্যবহার করেছেন। তাঁর এই ছবি আবারও প্রমাণ করে দিল কারিগরির জাগলারি নয়, ১০০ কোটির তারকা নয়, ভাল ছবির প্রকৃত রসদ আন্তরিকতায় মাখানো সুন্দর গল্প।