শেখর চন্দ্র, আসানসোল: মানসিক জড়তা ও অবসন্ন ভাব কাটাতে সাত বছর বয়সেই অভিসিক্তা দাশকে (Abhisikta Das) যোগ ক্লাসে ভরতি করেছিলেন তাঁর মা শিপ্রা দাশ। অভিসিক্তা এখন বিএসসি’র ছাত্রী। স্কুল থেকেই একের পর এক জাতীয় স্তরের সেরা পুরস্কার ছিনিয়ে এনেছেন। এবার যোগাসনে ইন্ডিয়া বুক রেকর্ডসে নাম উঠে এল রানিগঞ্জের ওই ছাত্রীর। ট্র্যাডিশনাল যোগাসনের অন্যতম কঠিন পশ্চার বা ভঙ্গি ‘নি’ ব্যালেন্স পর্বতাসন অর্থাৎ হাঁটুর ওপর ভর করে পর্বাতসন। টানা ৩১ মিনিট ৩০ সেকেন্ড পর্বতাসন করে নতুন রেকর্ড তৈরি করেছেন অভিসিক্তা। রবিবার ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসের পাঠানো সেই চিঠি পেয়েছেন অভিসিক্তা। কয়েকদিনের মধ্যেই হাতে আসবে মেডেল, রিওয়ার্ড ও সার্টিফিকেট।
ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে (India Book of Records) ২০২২ সালের রেকর্ড বুকে নাম উঠে যাবে অভিসিক্তার। অভিসিক্তার পরের লক্ষ্য গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম তোলা। তাঁর স্বপ্ন অলিম্পিকেও দেশের হয়ে যোগাসনে স্বর্ণপদক নিয়ে আসা। কারণ এবছর প্রথম যোগাসন (Yoga) ইভেন্ট অলিম্পিকের জন্য অনুমোদিত হয়েছে। সেক্ষেত্রে যোগাসন নিয়ে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ থাকছে তাঁর কাছে।
[আরও পড়ুন: যৌনতা রুখতে Olympic গেমস ভিলেজে কার্ডবোর্ডের খাট! ভিডিওতে হল রহস্যভেদ]
রানিগঞ্জের গির্জা পাড়ার বাসিন্দা অভিসিক্তা দাশ। প্রথমে গুরুকুল বিদ্যাপীঠে, পরে গান্ধী মেমোরিয়াল স্কুলে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া। প্রাথমিক স্কুলে পড়তে পড়তেই যোগাসন শিখছেন অভিসিক্তা। উদয় ধীবর ছিলেন তখনকার ট্রেনার। বর্তমানে টিডিবি কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগের নিউট্রিশন অনার্স নিয়ে পড়ছেন তিনি। বর্তমানে তাঁর ট্রেনার কৌশিক দাশ। অভিসিক্তার বাবা আশিস দাশ পেশায় উকিল ছিলেন। বছর পাঁচেক আগে প্রয়াত হয়েছেন। সেই সময় এক বছরের জন্য আর্থিক সমস্যায় যোগাসন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাঁর। অভিসিক্তার মা শিপ্রা দেবী বলেন, ২০১৩ সালে দিল্লিতে যোগে জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক পেয়েছিল মেয়ে। ২০১৪ সালে গুজরাটে জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় রূপো ও ২০১৫ সালে জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় মহারাষ্ট্রে সোনা পায়। জাতীয় স্তরে যোগে বাংলার মেয়ে সোনা জিতে আসার পর রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু (Bratya Basu) সেই সংবর্ধনা দিয়েছিলেন। জানা গিয়েছে, ২০১৭ সালে কলকাতার রবীন্দ্রভবনে আন্তর্জাতিক যোগ প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলেন রানিগঞ্জের ওই ছাত্রী। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ন্যাশনাল লেভেল চ্যাম্পিয়ন ও মেগাচ্যাম্পিয়ান হয়েছিলেন তিনি। লকডাউনে ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল অনলাইন প্রতিযোগিতা গুলিতেও অভিসিক্তা সেরার শিরোপা ছিনিয়ে নিয়ে এসেছেন গত দুবছর ধরে।
লকডাউনে কীভাবে সম্ভব হল ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডে নাম তোলা? অভিসিক্তা বলেন, সংস্থার পেজে অ্যাপ্লিকিশেন ফর্ম রয়েছে। সেখানে বিষয় নির্বাচন করে ওদের পোর্টালে ভিডিও ও ভ্যালিড ডকুমেন্ট পাঠানো হয়েছিল। অভিজ্ঞ জুরিরা সেই ভিডিও বিচার করে এই স্বীকৃতি দেয়। হাঁটুর ওপর ভর করে এখনও পর্যন্ত সারা দেশে ৩১ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের পর্বতাসন কেউ করতে পারেননি। এই রেকর্ড তিনিই প্রথম করলেন।
[আরও পড়ুন: Tokyo Olympic শুরুর আগেই ধাক্কা, গেম ভিলেজে ঢুকে পড়ল Corona Virus]
উল্লেখ্য যোগাসন তিন রকমের হয়। ট্র্যাডিশনাল বা নরম্যাল, আর্টিস্টিক ও রিদিমিক। অভিসিক্তা অবশ্য ট্র্যাডিশনাল ও আর্টিস্টিক যোগাতেই বেশি অভ্যস্ত। আয়ুষ মন্ত্রক থেকে খেলো ইণ্ডিয়ার মাধ্যমে অলিম্পিকে অনুমোদন পেয়েছে যোগাসন। সেক্ষেত্রে পরের বছর দেশের যোগাসন প্রতিযোগীরা সুযোগ পাবেন অলিম্পিকে যাওয়ার। অভিসিক্তা নিজেও এখন একজন যোগা ইনস্ট্রাক্টর। রানিগঞ্জেই ৩০ জন পড়ুয়া তাঁর কাছে যোগাসন শিখছে। অভিসিক্তার কাছে টলিউডের বেশ কয়েকজন সেলিব্রিটিও যোগাসন শিখছেন বলে জানা গিয়েছে।