গৌতম ব্রহ্ম: কুঁড়িতেই ঝরে যাওয়ার বুকভরা আখ্যান। আবার প্রতিরোধেরও গল্প। লাগাতার ধর্ষণের হাত থেকে বছর বারোর কিশোরীর বেঁচে ফেরার গল্প। গল্প বলবে নির্যাতনের শিকার হওয়া নির্ভয়াই। ঘুম ভাঙাবে সমাজের।
স্বামী ছেড়ে চলে গিয়েছে। ছোট ছোট দুই ছেলেমেয়েকে বাঁচাতে বাড়ি বাড়ি কাজ করছেন মা। এই সময় দেবদূতের ছদ্মবেশে আবির্ভাব এক ‘বাবু’-র। সাহায্যের বিনিময়ে সে স্বামী পরিত্যক্ত বধূকে যৌন শোষণ করতে থাকে। বধূও একটা সময় মন দিয়ে ফেলে বাবুকে।
একটা সময় বধূর বারো বছরের কন্যার উপরও বিষ নজর পড়ে সেই বাবুর। অর্থ ও উপহারের লোভ দেখিয়ে মায়ের সম্মতিতেই মেয়েকে নিজের পছন্দের ডেরায় নিয়ে যায় সে। তারপর যা হওয়ার তা-ই। মেয়ে ‘ধর্ষিত’ হতে থাকে মায়ের বয়ফ্রেন্ডের হাতে। নিজের সুখের কথা ভেবে, ছেলের কথা ভেবে মা চুপ করে থাকে। একটা সময় মেয়েটি পালিয়ে আসে পাড়ায়। নাচের বন্ধুদের বিষয়টি খুলে বলে। জানিয়ে দেয়, সে আর বাড়ি ফিরতে চায় না। চায়না ‘মামা’-র হাতে অত্যাচারিত হতে।
[ আরও পড়ুন: বিজ্ঞাপন জগতে নক্ষত্রপতন, চলে গেলেন সৃজনশীল রাম রে ]
এমন অনেক বধূ রয়েছে সমাজে। কেউ স্বামী পরিত্যক্তা, কেউ বিবাহ বিচ্ছিন্না, কেউ আবার বিধবা। নিজেকে ভাল রাখার জন্য এরা বয়ফ্রেন্ডের হাতে মেয়েকে তুলে দিতেও পিছপা হয় না। আবার এমন অনেক দিদিমা, ঠাকুমা আছে যাঁরা নাতি-নাতনিদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেন। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অপরাধীকে শ্রীঘরে পাঠায়। যেমন চেতলার এক বৃদ্ধা করেছেন। নিজের নাতনিকে বাঁচাতে গত মার্চেই চেতলা থানায় মেয়ের বয়ফ্রেন্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। আলিপুরের বিশেষ পকসো আদালত মগরাহাট নিবাসী ‘মামা’-কে ২০ বছরের হাজতবাসের নির্দেশ দেন। এমনটাই জানালেন ‘মহিমা ইন্ডিয়া’-র অধিকর্তা স্মিতা সিং।
এমন নির্মম বাস্তব ঘটনার অবলম্বনেই ডান্স থিয়েটার ‘বাঁধ ভেঙে দাও’ তৈরি করেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘মহিমা ইন্ডিয়া’। শহরের নির্ভয়ারা নাচ ও অভিনয়ের মাধ্যমে নিজেদের যন্ত্রণার কথা বলবে। ঘুম ভাঙাবে শহরের। মুখোশ খুলবে ‘মামা’-দের। তাৎপর্যের বিষয় পকসো আদালতের বিচারে নবজন্ম হওয়া সেই নির্যাতিতা কিশোরীও শরিক হয়েছে এই ডান্স থিয়েটারের। সে এখন পনেরো। নবম শ্রেণিতে পড়ে।
জীবন যন্ত্রণার কঠোর বাস্তব কাহিনির এহেন মঞ্চায়ন সত্যিই নজিরবিহীন। কলকাতা তো বটেই, ভারতের আর কোথাও কোনও নির্যাতিতা এভাবে প্রকাশ্যে এসে নিজের গল্প বলেনি। পর্যবেক্ষণ স্মিতার। আজ, শনিবার সন্ধ্যায় জি ডি বিড়লা সভাঘরে মঞ্চস্থ হবে ‘বাঁধ ভেঙে দাও’।
[ আরও পড়ুন: মঞ্চে উঠতে দেরি, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চূড়ান্ত হেনস্তার শিকার কার্তিক দাস বাউল ]
কাহিনি ও পরিচালনায় সঞ্চয়িতা হালদার। চিত্রনাট্যে উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। সংগীতে শুভদীপ গুহ। স্মিতা জানালেন, এই সমাজে এমন অনেক বধূ আছে। যারা ছেলেকে ভাল রাখতে মেয়েকে পশুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। নির্ভয়াদের দিদাদের সাহস জোগাতেই ‘বাঁধ ভেঙে দাও’। একই বক্তব্য সঞ্চয়িতারও। হোমের তিরিশজন আবাসিক মেয়েকে নিয়ে দু’মাস ধরে রিহার্সাল দিচ্ছেন তিনি। জানালেন, ইতিমধ্যে ‘কল শো’-এর ডাক পেয়েছে ‘মহিমা ইন্ডিয়া’। ২৮ ডিসেম্বর পাটুলি উৎসবেও থাকছে নির্ভয়ারা।
The post ধর্ষণের বিরুদ্ধে অভিনব প্রতিবাদ, যন্ত্রণার কাহিনি নিয়ে মঞ্চে নির্যাতিতারা appeared first on Sangbad Pratidin.