অভিরূপ দাস: বুক ধড়ফড় করছে, শ্বাস নিতে অসুবিধা। বুকের বাঁ দিকে স্টেথো লাগিয়ে তাজ্জব বনে গিয়েছেন চিকিৎসকরা। সাড়াশব্দ কিচ্ছু মিলছে না! মিলবে কী করে? রোগীর হার্ট যে বুকের ডানদিকে! অত্যন্ত বিরল এই অসুখের নাম ডেক্সট্রোকার্ডিয়া। উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের স্বপন পাল এমন বিরল অসুখ নিয়েই হাজির হন আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে (RG Kar Medical College)। হাসপাতালের চিকিৎসকরা অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করে রোগীর প্রাণ বাঁচিয়েছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা এখন স্থিতিশীল।
মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই উত্তর ২৪ পরগনার (North 24 Parganas) বাসিন্দা স্বপন পাল বুকে ব্যথা অনুভব করেন। সেইসঙ্গে ভীষণ ঘাম হচ্ছিল তাঁর। পরিবারের সদস্যরা সন্দেহ করেন, তাঁর হার্টের সমস্যা হয়েছে। ১৭ মে তাঁকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।রোগীকে প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন চিকিত্সকরা। দেখা যায় সন্দেহই সত্যি। ওই ব্যক্তি হৃদরোগে আক্রান্ত। কিন্তু হৃদযন্ত্র খুঁজতে গিয়েই মাথায় হাত। বুকের বাঁ-দিক তো বেবাক ফাঁকা। আদতে স্বপনবাবুর হৃদযন্ত্রটি বুকের ডানদিকে!
[আরও পড়ুন: করোনা রোগীর দেহ সৎকারের নামে বেআইনিভাবে বিপুল অর্থ আদায়, সাসপেন্ড ৫ পুরকর্মী]
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দেশের ১ শতাংশেরও কম মানুষের এমনটা রয়েছে। শরীরের লিভার, হার্ট যেখানে থাকার কথা, তার উল্টোদিকে থাকলে চিকিৎসকরা বলেন ‘মিরর ইমেজ’। সেই মিরর ইমেজ নিয়েই হাসপাতালে এসেছিলেন স্বপনবাবু। চিকিৎসকরা দেখেন, তাঁর হার্টে ব্লকেজ রয়েছে। অস্ত্রোপচারের চিন্তাভাবনা শুরু হয়। এর মধ্যেই আচমকা রোগীর ধুম জ্বর। কোভিড (COVID-19) টেস্ট করা হয়। রিপোর্ট আসে পজিটিভ। ততদিনে বেড়ে গিয়েছে কাশিও। শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে শুরু করেছ। হার্ট আগে আগে না ফুসফুস? চিন্তায় পড়ে যান চিকিৎসকরা। তড়িঘড়ি কোভিড ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করে রোগীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল করা হয়। ২৫ মে হোম আইসোলেশনের থাকার পরামর্শ দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বাড়িতে।
[আরও পড়ুন: নিউটাউন এনকাউন্টার: ফ্ল্যাটে উদ্ধার উর্দু লেখা প্যাকেট, পাক-যোগের সম্ভাবনা ক্রমশ জোরাল]
৩১ মে ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন স্বপন পাল। আবার বুকে প্রচন্ড ব্যথা। এবার আর দেরি করেননি চিকিৎসকরা। ঝুঁকি নিয়েই করা হয় অ্যাঞ্জিওগ্রাফি। হার্টে ২টি ব্লকেজ পাওয়া যায়। ৯৫ শতাংশ ব্লক যে আর্টারিতে সেখানে দ্রুত অ্যাঞ্জিপ্লাস্টি করা হয়। বিরল রোগী স্বপন পাল আপাতত সুস্থ। আর বিরল অস্ত্রোপচারের মাধ্যম রোগীকে সুস্থ করে তোলার অনন্য নজির গড়লেন আর জি করের চিকিৎসকরা।