অর্ণব আইচ: রেশন বণ্টন দুর্নীতি মামলায় এবার ইডির নজরে ‘মনাদা’। সম্প্রতি এই মামলায় ধৃত আলিফ নুরের সঙ্গে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের টাকার লেনদেনের সম্পর্কের খোঁজ করতে গিয়েই ‘মনাদা’র নামটি উঠে আসে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের রেকর্ডে। আলিফের মতো প্রায় কোটি টাকার লেনদেন না হলেও ‘মনাদা’জ্যোতিপ্রিয়কে সাড়ে ১১ লাখ টাকা দিয়েছেন, এমন প্রমাণ মিলেছে। এবার এই ‘মনাদা’র আসল পরিচয় জানতে চাইছেন ইডির গোয়েন্দারা। কীভাবে ‘মনাদা’র সঙ্গে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের পরিচয় হল, আর কেনই বা তিনি ২০২১ সাল থেকে ২০২২ সালের মধ্যে জ্যোতিপ্রিয়কে ওই টাকা দিলেন, তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে রহস্য। ইডির গোয়েন্দারা ওই ‘মনাদা’কে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন।
সম্প্রতি রেশন বণ্টন দুর্নীতিতে উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার ব্লক তৃণমূলের সভাপতি আনিসুর রহমান ও তাঁর ভাই আলিফ নুরকে গ্রেপ্তার করেছে ইডি। ইডির সূত্র জানিয়েছে, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও আনিসুর রহমানের চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট শান্তনু ভট্টাচার্যর স্ট্র্যান্ড রোডের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে কম্পিউটার থেকে ‘ই এইচ গ্রুপ অফ কোম্পানি’র ২০২১ থেকে ২০২২ সালের ব্যালান্স শিট উদ্ধার করে। তারই সূত্র ধরে ‘ই এইচ’দিয়ে শুরু পাঁচটি সংস্থা ‘গ্রিনিশ’,‘সেন্টার অ্যান্ড মার্ট’,‘ইঞ্জিনিয়ারিং’,‘পিকাসো’ ও ‘গ্রিনরাশ’ এর সন্ধান পায় ইডি। ওই সংস্থাগুলির ঠিকানা মধ্য কলকাতার স্ট্র্যান্ড রোডেই। ইডির দাবি, ওই সংস্থাগুলির কর্ণধার জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও তাঁর স্ত্রী। ব্যালান্স শিটের তথ্য অনুযায়ী, ওই পাঁচটি সংস্থার অ্যাকাউন্টে নগদে জমা পড়ে ৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে আনিসুরের ভাই আলিফ নুরের মাধ্যমে ‘ই এইচ’ সংস্থাগুলিতে জমা পড়েছে ৯৪ লাখ টাকা। এ ছাড়াও ‘মনাদা’র হাত থেকে সাড়ে ১১ লাখ টাকা জমা পড়েছে ওই আর্থিক বছরেই।
[আরও পড়ুন: চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মহিলাদের সঙ্গে আপত্তিকর ছবি লেনদেন! কাঠগড়ায় TMC নেতা]
ইডির দাবি, ওই ‘ই এইচ’সংস্থাগুলির মূলধন ছিল ২৫ লাখ ৪৯ হাজার ৯৯৯ টাকা। সেখানে এক বছরেই ওই সংস্থাগুলির অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে ৬ কোটি ৫৫ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। আলিফ নুরের কাছ থেকে এই পাঁচটি সংস্থায় ৯৪ লাখ ১৪ হাজার টাকা জমা পড়েছে ২০২১ সালের আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে। এই ব্যাপারে নথি হিসাবে একটি লেজার এসেছে ইডির হাতে। সেই লেজার অনুযায়ী, ২০২১ সালের আগস্টে আলিফের কাছ থেকে ‘ই এইচ গ্রুপ অফ কোম্পানি’তে জমা পড়েছে ২৫ লাখ টাকা, সেপ্টেম্বরে জমা পড়েছে ৫৫ লাখ টাকা ও অক্টোবরে ১৪ লাখ ১৪ হাজার টাকা। ইডির দাবি, গত ২০১৮ থেকে ’১৯ সালে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নিয়ন্ত্রিত তিনটি সংস্থা শ্রী হনুমান রিয়ালকন, গ্রেসিয়াস ইনোভেটিভ ও গ্রেসিয়াস ক্রিয়েশনে আনিসুর ও আলিফের দু’টি রাইস মিলের সংস্থা থেকে জমা পড়েছে ২০ লাখ টাকা।
ইডির অভিযোগ, এই নথিগুলিই প্রমাণ দেয় যে, কীভাবে আনিসুর ভাইদের কাছ থেকে রেশন বণ্টন দুর্নীতির টাকা ‘পার্ক’হয়েছে। এদিকে, ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানের সঙ্গে তাঁর আত্মীয় আনিসুর রহমান ও আলিফ নুরের টাকা লেনদেনের হিসাবও এসেছে ইডির গোয়েন্দাদের হাতে। ইডি জেনেছে, ২০২২ সালের ২৫ অক্টোবর বাকিবুরের সংস্থা এনপিজি রাইস মিলের থেকে আনিসুরদের ‘হাই টেক রাইস মিল’-এর অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে ২৫ লাখ টাকা।