শম্পালী মৌলিক: পাঁচটা পর্বে বিভক্ত নতুন ‘হরর সাইকো থ্রিলার’ ‘রক্তবিলাপ’ (Rawkto Bilaap)। সদ্য মুক্তি পেয়েছে হইচই (Hoichoi) প্ল্যাটফর্মে। ট্রেলার যতটা গা ছমছমে, সিরিজটাও ততখানি। অলৌকিক-রহস্য ছবি ভাল লাগলে এ সিরিজ দেখা যেতেই পারে। মেকিং আহামরি কিছু না হলেও, চেনা ছকের গল্পে কয়েকজন অভিনেতার পারফরম্যান্স দেখতে ভাল লাগে।
সিরিজের শুরুটা হয় কেন্দ্রচরিত্র মায়ার ছোটবেলা দিয়ে। তারপর তার কলেজ-উত্তীর্ণ, চাকরি ছাড়ার পরের জীবনের সময়টা ধরা হয়েছে। একটা অন্ধকার অতীত কাহিনির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছে, সেটা বোঝা যায় গল্প এগোলে। সেই সঙ্গে এখনকার সময়ের ঠুনকো সম্পর্ক এক-একজন মানুষের মনে কীরকম প্রভাব বিস্তার করে সেটাও দেখার। জীবনে ধ্রুবসত্য বলে আর কিছু নেই। কেউ দিব্যি পরিবর্তিত পরিস্থিতি মানিয়ে নেয়, কেউবা অতীত ভুলতে না পেরে পুরনো ভালবাসাকে আঁকড়ে রাখতে চায়। এবং সম্পর্কের ঘূর্ণিপাক যখন আছে, বিশ্বাসঘাতকতার ক্ষত ও রক্ত ঝরায় কয়েকজন বন্ধুর জীবনে।
কাহিনি কেমন? মায়া (সোহিনী সরকার) পুরনো কয়েকজন বন্ধুকে ডাকে তার বাড়িতে। উপলক্ষ্য রক্তিম-সঞ্জনার (সপ্তর্ষি মৌলিক ও তুহিনা দাস) ব্যাচেলর্স পার্টি। সঙ্গে আরও কয়েকজন বন্ধু, যেমন– গৌরব (গৌরব রায় চৌধুরী), নেহা (মোক্ষ সেনগুপ্ত), অভি (প্রান্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়), সানি (শাওন চক্রবর্তী)। সুতরাং রিইউনিয়নের আবহ তৈরি হয়। শহর থেকে দূরে এই বাড়িতেই মায়া থাকে তার মায়ের (চান্দ্রেয়ী ঘোষ) সঙ্গে। মা ভারী অসুস্থ, তাই সারাক্ষণ মাকে নিয়ে উৎকণ্ঠায় ভোগে মায়া। তার বাবার (সুদীপ মুখোপাধ্যায়) সম্বন্ধে বন্ধুরা বিশেষ কিছু জানে না। তবে এটা বোঝে নরম মনের মায়া মাকে বড্ড যত্ন করে। রয়েছে তাদের সর্বক্ষণের কেয়ারটেকার রফিক কাকা (কাঞ্চন মল্লিক)।
[আরও পড়ুন: দীর্ঘদিনের লড়াইয়ে হার, প্রয়াত রাজ্যের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে, টুইটে শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর]
রাত বাড়লে পার্টি জমে ওঠে খাওয়াদাওয়া ও পান মজলিশে। নতুন প্রেম, পুরনো ঘেঁটে যাওয়া সম্পর্ক সবই একটু একটু করে সামনে আসতে থাকে। মাথা চাড়া দেয় বন্ধুদের মধ্যে ব্যবসার টাকার গোলমালের মতন বিষয়ও। মায়া বার বার সকলকে চিৎকার করতে বারণ করে, যদি মা বিরক্ত হয়। এর মধ্যেই অদ্ভুতুড়ে সব ঘটনা ঘটতে থাকে। হঠাৎ হঠাৎ গান চলতে শুরু করে। বন্ধুদের নিজেদের মধ্যে বিতণ্ডাও শুরু হয়। এর মধ্যেই হঠাৎ একজন মারা যায়। কী করে মারা গেল এক বন্ধু, তার কিনারা হতে না হতেই আরেকজনের প্রাণ চলে যায়। এবার ভয় পেতে শুরু করে বাকিরা। পর পর প্রায় চার-পাঁচটা মৃত্যু দেখতে পাবেন দর্শক। তার মাঝে মাঝে উঠে আসবে মায়া, রক্তিম, সঞ্জনা, মিয়া, অভিদের অতীত। যেখানে প্রেম-অপ্রেম-বিশ্বাস-অবিশ্বাস চিরকালের জন্য ছাপ রেখে গিয়েছে।
কীভাবে মারা যাচ্ছে মানুষগুলো? কে খুন করছে? কোন অশরীরী আত্মার উপস্থিতির কারণে এসব ঘটছে? মায়ার বাড়িটাই কি ভূতুড়ে? এভাবেই ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছে যায় সিরিজ। গল্পে আগমন হয় প্যারানর্মাল ইনভেস্টিগেটর অনির্বাণের (ইন্দ্রাশিস রায়)। কীভাবে রহস্যের জাল ছাড়ায় সে দেখতে হলে শেষ এপিসোড খুব গুরুত্বপূর্ণ।
অর্নিত ছেত্রী ও মণিদীপ সাহা পরিচালিত এই সিরিজের সেরা প্রাপ্তি সোহিনী সরকারের (Sohini Sarkar) অভিনয়। সপ্তর্ষি মৌলিক খুব সম্ভাবনাময়। তাঁর আরও কাজ দেখতে চাই। অলিভিয়া, প্রান্তিক তাঁদের চরিত্রে সাধ্যমতো করেছেন। তুহিনা দাস (Tuhina Das) অত্যন্ত সাবলীল অভিনয়ে নজর কাড়লেন। স্বল্প পরিসরে কাঞ্চন মল্লিক (Kanchan Mullick) দারুণ বিশ্বাসযোগ্য। ইন্দ্রাশিস রায় (Indrasish Roy) যতটুকু আছেন ঠিকঠাক। চান্দ্রেয়ী ঘোষ ও সুদীপ মুখোপাধ্যায়ের বেশি কিছু করার ছিল না। অমিত-ঈশানের মিউজিক সিরিজের মেজাজের সঙ্গে মানানসই। বিরাট যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে এই সিরিজ বিচার না করাই ভাল, হরর থ্রিলার ঘরানা ভাল লাগলে একবার ‘রক্তবিলাপ’ দেখা যেতে পারে।
সিরিজ – রক্তবিলাপ
অভিনয়ে – সোহিনী সরকার, সপ্তর্ষি মৌলিক, তুহিনা দাস, কাঞ্চন মল্লিক, ইন্দ্রাশিস রায়, গৌরব রায় চৌধুরী, মোক্ষ সেনগুপ্ত, প্রান্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়, শাওন চক্রবর্তী, চান্দ্রেয়ী ঘোষ, সুদীপ মুখোপাধ্যায়।
পরিচালনায় – অর্নিত ছেত্রী ও মণিদীপ সাহা