বিশাখা পাল: ফের টাক নিয়ে সমস্যা। গত সপ্তাহেই মুক্তি পেয়েছিল টাকের একটা ছবি ‘উজড়া চমন’। আর এই সপ্তাহে মুক্তি পেল আরও একটি ছবি। নাম ‘বালা’। আয়ুষ্মান খুরানার এই ছবিটি অবশ্য ‘উজড়া চমন’-এর থেকে ঢের ভাল। ছবির গল্পের যেমন আগামুড়ো আছে; তেমনই পরিচালনা, চিত্রনাট্য ও অভিনয়।
ছবিতে আয়ুষ্মান খুরানার নামই বালা। যুবক বয়সে তার মাথায় টাক পড়ে যায়। টাকের জন্য চাকরির জায়গায় অনেক অপমানিত হতে হয় তাকে। মনে মনে সে একজনকে ভালবাসে। কিন্তু বলতে পারে না। স্রেফ টাকের কারণে। বালা খুব ভালভাবেই জানে যতই সে চার্মিং হোক, রূপের কারণে সর্বত্র অপমানিত হতে হবে তাকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উপায় বেরোয়। উইগ পরে টাক লুকোয়। আর চরিত্রগত বাকি বৈশিষ্ট্য তো বালাকে অন্যদের থেকে একধাপ এগিয়েই দেয়। এত কিছুর পর বালার বিয়ে হলেও টেকে না। টাকের কারণেই প্রথম রাতে বউ ছেড়ে চলে যায়। তবে ‘বালা’ ছবিটি কিন্তু শুধু টাকের সমস্যার কথাই বলেনি। ছবিতে উঠে এসেছে বর্ণবৈষম্যের কথাও। বারবার ঘুরেফিরে এসেছে কালো-ফর্সার দড়ি টানাটানি খেলা। আর এখানেই ক্লিশে গল্প থেকে অনেকটা আলাদা ‘বালা’। ‘উজড়া চমন’ গল্পে চিত্রনাট্যে যেমন ধার ছিল না, ধার ছিল না অভিনয়েও। কিন্ত ‘বালা’ বোনাস পয়েন্ট নিয়ে এই দু’টো বিভাগেই পাশ করে গিয়েছে।
[ আরও পড়ুন: ‘বুড়ো সাধু’র অপমৃত্যু, ঋত্বিকও বাঁচাতে পারলেন না ছবিকে ]
ছবিতে দুই নায়িকা ইয়ামি গৌতম ও ভূমি পেডনেকর নিজের নিজের চরিত্রে ভাল। ইয়ামির অবশ্য টিকটক করা ছাড়া আর রূপ দেখানো ছাড়া কিছু করার ছিল না। কিন্তু শ্যামাঙ্গী লতিকার চরিত্রে ভূমির অভিনয় প্রশংসাযোগ্য। কার্যত বালাকে আয়না ধরানোর কাজটা করে লতিকাই। বলে, খুঁত তো তার মধ্যেও আছে। বালা না হয় যুবক বয়স পর্যন্ত হিরোগিরি করে বেড়িয়েছে। তখন তো আর টাকের জন্য হাসির খোরাক হতে হয়নি তাকে। কিন্তু লতিকাকে ছোট থেকে গায়ের রং নিয়ে সর্বত্র তামাশা করা হত। এখানেই ‘বালা’র সার্থকতা। টাকের সমস্যার সঙ্গে সঙ্গে বর্ণবৈষম্যের কথাও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ছবিটি।
এখানে আরও একটা কথা বলা রাখা দরকার। বালা ফেয়ারনেস ক্রিম বিক্রি করার কোম্পানিতে কাজ করত। একদিকে নিজে টেকো, অন্যদিকে সৌন্দর্য বিক্রির কাজ- বালার চরিত্রের এই দ্বৈত সত্তাকে পর্দায় ফুটিয়ে তোলার জন্য দরকার পোক্ত অভিনয়। আয়ুষ্মান খুরানা সেই কাজটি ভালভাবেই করেছেন। বর্ণবৈষম্যের বিরোধী এক উকিলের চরিত্রে ভূমিও তথৈবচ। বারবার সমাজের সামনে সৌন্দর্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন তিনি। আর পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার হিসেবে অমর কৌশিক বেশ ভাল একটা কাজ করেছেন। প্রশংসার ভাগীদার নীরেশ ভাটের সংলাপও। মাঝে মাঝে কিছু হাস্যরসাত্মক উপাদান গুঁজে দিয়ে ছবিতে ক্লান্তি আসতে দেননি তিনি। অভিনেতা সৌরভ শুক্লা আর জাভেদ জাফরিও সঙ্গ দিয়েছেন সাধ্যমত। সব মিলিয়ে ‘বালা’ দেখার মতো ছবি তা নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু আয়ুষ্মান খুরানা আর অমর কৌশিকের থেকে আরও বেশি কিছু আশা করে দর্শক।
[ আরও পড়ুন: একাকীত্ব নিয়ে কেমন থাকেন একজন সফল মানুষ? উত্তর দেবে ‘কেদারা’ ]
The post টাক আর বর্ণবৈষম্য, সমাজের দুই সমস্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলল আয়ুষ্মানের ‘বালা’ appeared first on Sangbad Pratidin.