বিশাখা পাল: আবার এক ‘সরকার’ বা ‘রাজনীতি’র গল্প। তবে এবার যেন গল্পটা তেমন জমল না। প্রযোজক হিসেবে সঞ্জয় দত্ত এই ছবি থেকে কতটা টাকা ঘরে তুলতে পারবেন, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারণ গল্প ভাল হলেও কোনও এক অজ্ঞাত কারণবশত সিনেমাহল প্রায় ফাঁকা। সম্ভবত ‘স্টার’-বিহনেই ধুঁকছে ‘প্রস্থানম’। কিন্তু গল্প নেহাতই দূরছাই করার মতো নয়।
২০১০ সালে যথন তেলুগু ভাষায় মুক্তি পেয়েছিল ‘প্রস্থানম’, বিপুল সাড়া পড়েছিল। কিন্তু তা ছিল আঞ্চলিক ছবি। কিন্তু যখন হিন্দি ভাষায় ছবিটি বানানোর সিদ্ধান্ত নিলেন পরিচালক, তখন চিত্রনাট্যের উপর একটু জোর দেওয়া উচিত ছিল। শুধু রাজনীতির গল্প ফেঁদেই যে দর্শক টানা যাবে না, তা বোঝা উচিত ছিল তাঁরা। বিশেষত সঞ্জয় দত্ত তো পোড় খাওয়া ব্যক্তি। প্রযোজক হিসেবে একটু গাইড করতে পারতেন তিনি। নিতান্তই দুর্বল চিত্রনাট্যের কারণে ভাল গল্প আর ভাল অভিনয় মাঠে মারা গেল।
[ আরও পড়ুন: শ্রীলেখা-অনন্যার অভিনয়ের জোরেই উতরে গেল ‘ভাল মেয়ে খারাপ মেয়ে’ ]
গল্পের শুরু থেকে শেষ, গোটাটা জুড়েই রয়েছে দু’জন। সঞ্জয় দত্ত ও আলি ফজল। একজন বাবা, অন্যজন ছেলে। তাঁদের মধ্যে সৎ ও সততার সম্পর্ক। গ্রামে পঞ্চায়েত দখলের লড়াইয়ে মারা যায় আয়ুষের (আলি ফজল) বাবা শিব (অনুপ সোনি)। তারপরই বলদেবের (সঞ্জয়) সঙ্গে বিয়ে হয় আয়ুষের মা সরোজের (মণীষা কৈরালা)। কিন্তু বলদেবের ছেলে বিভানের (সত্যজিৎ দুবে) সঙ্গে আয়ুষের লড়াই শুরু হয়। ক্ষমতা দখলের লড়াই। আয়ুষ যদিও ভাইকে শত্রুপক্ষ মনে করত না, কিন্তু বিভান আয়ুষকে মেনে নিতে পারেনি। দোষ তারও নয়। বলদেব-আয়ুষের সম্পর্কের মাঝখানে বিভানের নিজেকে পেন্ডুলাম বলে মনে হয়। বলদেবের ছেলে বলে সবাই আয়ুষকেই চেনে। তাই ক্ষমতালোভী হয়ে ওঠে বিভান। কিন্তু পরিবারের পাশাপাশি দলও যখন আয়ুষকেই কাছে চেনে নেয়, মেনে নিতে পারেনি সে। ঘটনাচক্রে বলদেবের বন্ধু বাদশার (জ্যাকি শ্রফ) মেয়েকে খুন করে সে। অভিযোগ ওঠে ধর্ষণ আর ড্রাগ ওভারডোজের।
গল্পের মোড় ঘোরে এখান থেকেই। এসবের মাঝেই প্রবেশ প্রোমোটার ক্ষত্রির (চাঙ্কি পাণ্ডে)। বিভানকে বাঁচানোর নাম করে বলদেবকে ব্ল্যাকমেল করতে চায় সে। এদিকে বিভান খুন করে দিদি পলককে। আয়ুষের উপরও হামলা হয়। শুধু কি রাজনৈতিক ক্ষমতাদখলের লড়াই? নাকি পারিবারিক ইস্যুও রয়েছে? বলদেবেরও অতীতে একটি গভীর রহস্য রয়েছে। শিবের মৃত্যুর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে সেই রহস্য।
[ আরও পড়ুন: বিনোদনের মোড়কেও গভীর বার্তা দেয় ‘ড্রিমগার্ল’ ]
গল্প টানটান। কিন্তু সাজানোতেই রয়েছে গলদ। যেভাবে পর্যায়ক্রমে সাজানো দরকার ছিল, পরিচালক-চিত্রনাট্যকার তা পারেননি। বিশেষ করে নির্বাচনের সময়কার চিত্রনাট্যে ঘাটতি বেশিমাত্রায় চোখে পড়েছে। অভিনয় নিয়ে তো কোনও প্রশ্নই উঠবে না। সঞ্জয় দত্ত, আলি ফজল, মণীষা কৈরালা, জ্যাকি শ্রফ, সত্যজিৎ দুবে, চাঙ্কি পাণ্ডে, চাহত খান্না সবাই অসাধারণ। আমাইরা দস্তুর ছবিতে শো-পিস হিসেবেই রয়েছেন। মণীষার অবস্থানও অনেকটা তাই। তবে জ্যাকি শ্রফ নজর কেড়েছেন। নির্বাক অভিনয় কাকে বলে, কোনও সাধারণ বাবার হাহাকার কীভাবে ফুটিয়ে তুলতে হয়, তা তিনি দেখিয়েছেন। তিনি যে কোন পর্যায়ের অভিনেতা তা আরও একবার দেখিয়ে দিলেন জ্যাকি শ্রফ।
ছবির বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাশব্যাক রয়েছে। সেগুলি গল্পকে একঘেয়েমি থেকে বাঁচিয়েছে। অসাধারণ না হলেও ‘প্রস্থানম’ হলে গিয়ে দেখে আসাই যায়। যদিও ছবির বক্স অফিস সাফল্য নিয়ে সন্দেহ রয়েছে প্রবল।
The post রাজনীতি আর ক্ষমতা দখলের পারিবারিক লড়াই দেখাল ‘প্রস্থানম’ appeared first on Sangbad Pratidin.