শেখর চন্দ্র: বুধবার রাতে বিহারের (Bihar) জামতাড়া কাঁসিটার হল্ট স্টেশনের দুর্ঘটনার ক্ষত টাটকা। এখনও রেললাইনে পড়ে রয়েছে ছেঁড়া জামা প্যান্ট, ব্যাগ, রক্তমাখা কাপড়। যা দেখে বোঝা যায়, রাতের অন্ধকারে রেললাইনের উপর প্রাণ বাঁচাতে কীভাবে ছোটাছুটি করেছিলেন যাত্রীরা। স্রেফ ট্রেনে আগুনের (Fire) গুজব আর তা থেকে আতঙ্কের জেরে দুর্ঘটনা ঘটেছে জামতাড়ার বিদ্যাসাগর স্টেশন সংলগ্ন এলাকায়। ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে দুজনের। বিহারের জামুই এলাকার বাসিন্দা দুই পরিযায়ী শ্রমিক রেলে কাটা পড়েছেন। জামুইয়ের বাসিন্দা সুচিন্দ্র কুমার যাদব ও ঠাকুরী মাঝি। আসানসোল (Asansol)-ঝাঁঝাগামী EMU প্যাসেঞ্জার ট্রেনে কাটা পড়েন যশবন্তপুরগামী অঙ্গ এক্সপ্রেসের ওই দুই যাত্রী। ঘটনার তদন্তে ৩ সদস্যের বিভাগীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আসানসোল রেল ডিভিশনের ডিআরএম চেতনানন্দ সিং।
বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ডিআরএম (DRM)। কথা বলেন স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে। ডিআরএম জানান, ১২২৫৪ ভাগলপুর-জামেসেদপুর এক্সপ্রেস কেন দাঁড়িয়ে পড়েছিল, তার তদন্ত শুরু হবে। একইভাবে আসানসোল-ঝাঁঝা ইএমইউ প্যাসেঞ্জার লোকো চালক কেন ট্র্যাকের উপর লোকজন দেখতে পাননি, তার খোঁজখবর নেওয়া হবে। অঙ্গ এক্সপ্রেসের যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সাক্ষীদের সঙ্গেও কথা বলা হবে।
[আরও পড়ুন: গ্রেপ্তারির পরই কড়া ব্যবস্থা, সন্দেশখালির শাহজাহানকে সাসপেন্ড করল তৃণমূল]
ঘটনা ঠিক কী ঘটেছিল? বিদ্যাসাগর রেল স্টেশনের কাছে কালাঝরিয়ায়তে লাইনের ধারে প্রচুর স্টোন চিপস (Stone chips) জমা করা হয়েছিল বুধবার। যখন অঙ্গ এক্সপ্রেস ওই জায়গাটি পার করেছিল, তখন স্টোন চিপস ট্রেনের চাকায় ধাক্কা খেয়ে বগির নিচে ছিটকে পড়ে, ভয়ংকর আওয়াজ হতে থাকে। স্টোন চিপসের সঙ্গে থাকা ডাস্ট উড়তে থাকে। যাত্রীরা ভাবেন, হয়তো আগুন লেগেছে ট্রেনে। এই সময় চেন টানায় চালক ট্রেন থামিয়ে দেন। আতঙ্কিত যাত্রীদের একাংশ আপ লাইনের দিকে নামতে শুরু করে। ট্রেন কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর সবাই বুঝতে পারেন, সেরকম কিছু ঘটেনি। আস্তে আস্তে যাত্রীরা টেনে উঠতে থাকেন। তবে কেউ কেউ দূরে বা তফাতে দাঁড়িয়েছিলেন। অনেকে ব্যাগপত্র নিয়েও নেমে পড়েছিলেন। স্থানীয়দের দাবি, তাঁরা খবর পেয়ে ছুটে আসেন। এই সময় অন্ধকারের মধ্যে চোর চোর বা ডাকাত আওয়াজ পাওয়া যায়। তখন ফের একবার ছোটাছুটি শুরু হয়।
এই সময় আপ লাইনে আসানসোল-ঝাঁঝা EMU প্যাসেঞ্জার চলে আসে। যাত্রীরা নিজেদের মতো ছোটাছুটি শুরু করেন। কেউ বা ট্রেনে উঠে যান কেউ বা রেললাইনের ধারে দাঁড়িয়ে পড়েন। ট্রেন চলে যাবার পর দেখা যায়, লাইনে ধরে দুটি দেহ পড়ে রয়েছে। খবর ছড়িয়ে পড়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। অনেকে আহত হয়েছেন। এর পর যাত্রীরা নিজেরাই টর্চ নিয়ে লাইন ধরে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। জামা, ব্যাগপত্র পড়ে থাকলেও আর কাউকে দেখা যায়নি লাইনের ধারে। যদিও জামতাড়া ডিসি শশীভূষণ মেজহেরা জানিয়েছেন, খবর পাওয়ার পরে পুলিশ পাঠিয়ে দেওয়া হয় এলাকায়। পুলিশ খবর দেয় জামতাড়া স্টেশনে। রেল পুলিশ এসে দুটি দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানো হলেও কোনও আহত ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া যায়নি। মৃতদেহ দুটি জামতাড়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
[আরও পড়ুন: ‘ডিল চূড়ান্ত হতেই গ্রেপ্তার শাহজাহান’, দাবি শুভেন্দুর, ‘ডিজি অযোগ্য’, বলছেন সুজন]
এই দুর্ঘটনার পর সকালেও দেখা যায়, থমথমে এলাকা। স্থানীয়রা রেল লাইনের ধারে ভিড় জমে যায়। সকালে এলাকায় যান জামতাড়ার এসডিও অনন্ত কুমার, জামতারা থানার কারমাটার ফাঁড়ির আইসি বিবেকানন্দ দুবে। গোড্ডা জেলার সংসদ নিশিকান্ত দূবে দাবি করেছেন, ২৬২ কিলোমিটার দূরে ট্রেন দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু ট্রেনে কাটা পড়ার ঘটনা ঘটেছে ২৬৪ কিলোমিটার দূরে অর্থাৎ যে দুজন কাটা পড়েছে, তাঁরা রেললাইন পারাপার করছিলেন। রেলকে বদনাম করার জন্য কেউ বা কারা এই ধরনের প্রচার চালিয়েছে। দুজন মারা গিয়েছে। কিন্ত প্রচার চালানো হয়েছিল, ১২ জন মারা গিয়েছেন। জামতাড়া সদর হাসপাতালে দেখা যায়, মৃত সুচিন্দ্র কুমারের দাদা নীতীশ কুমার এসেছেন। তিনি জানান, তাঁর দাদা পরিযায়ী শ্রমিক, বেঙ্গালুরু যাচ্ছিলেন। ছুটিতে এসেছিলেন বাড়িতে। ঝাঁঝা স্টেশন থেকে চড়েছিলেন আর সন্ধ্যা সাতটায় এই ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে তাঁরা ছুটে এসেছেন জামুই থেকে। তাঁরা এই ঘটনার তদন্ত করে ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন।
দেখুন ভিডিও: