ফৈজান লাখানি: পাকিস্তান ক্রিকেটের এই অধঃপতন দেখে দেশের গোটা আওয়ামের মতো আমরা, ক্রিকেট সাংবাদিকরাও স্তম্ভিত। শুধু স্তম্ভিত বলা ভুল। আমরা লজ্জিতও। ভাবতেই পারছি না, দেশের মাঠে বাংলাদেশের কাছে টেস্ট সিরিজে চুনকাম হচ্ছি আমরা! ভাবতে পারছি না, ইমরান-ওয়াসিম-ওয়াকার-ইনজামামের উত্তরসুরিরা কি না টেস্ট হারছে কখনও দশ উইকেটে, কখনও ছ’উইকেটে!
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টটা ভেবে দেখুন। আমরা প্রথম ইনিংসে লিড নিয়েছিলাম। সেখান থেকে দশ উইকেটে টেস্ট হেরেছি! দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশকে ২৬-৬ করে দিয়েছিলাম। বাংলাদেশকে ইনিংসে হারানো উচিত ছিল আমাদের। অথচ সেই অবস্থা থেকে আমরা কি না টেস্ট হারলাম ছ’উইকেটে! কেউ কেউ বলবেন, স্কিলের ঘাটতি। কিন্তু আমি মানতে পারলাম না। ২০২১ সালের আগে পর্যন্ত সবই তো ঠিক ছিল। স্কিল না থাকলে তিন বছর আগে আমরা টেস্ট সিরিজ জিতছিলাম কী করে? আমার মতে, পাকিস্তান বোর্ড (পিসিবি) কর্তাদের প্রশাসনিক ব্যর্থতার এই ভরাডুবির জন্য দায়ী।
রাওয়ালপিন্ডিতে দ্বিতীয় টেস্টে একযোগে শাহিন শাহ আফ্রিদি আর নাসিম শাহকে বিশ্রাম দিয়ে দেওয়া হল। আরে ভাই, কীসের বিশ্রাম? বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে আমরা প্রথম টেস্ট হেরে গিয়েছি। সমতা না ফেরাতে পারলে সম্মানহানির চূড়ান্ত হবে। তখন কি না টিমের দুই সেরা পেসারকে বিশ্রামে পাঠিয়ে দেওয়া হল! প্রথম টেস্টে আবার স্পিনার নিয়ে নামা উচিত ছিল। আমরা স্পিনার সে ভাবে খেলালামই না!
পরিষ্কার লিখছি, ক্রিকেটারদের কাঠগড়ায় আমি তুলব না। দায়টা পিসবির। দায়টা সাপোর্ট স্টাফদের। উল্টোপাল্টা টিম নামানো। টিমের সংহতি ধরে রাখতে না পারা। খালি ব্যক্তিপুজো চালিয়ে যাওয়া। টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে না ভাবা। প্রতিটা ক্ষেত্রে একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে গিয়েছে পিসিবি।
বাংলাদেশ সিরিজের আগে আমরা শেষ টেস্ট খেলেছি দশ মাস আগে। তা হলে? নেমেই জিতে যাব? গত তিন বছরে আমরা ঘরের মাঠে একটা টেস্ট জিততে পারিনি। পাক বোর্ড কেন এর প্রতিকার খোঁজেনি? প্লাস, আমার মতে টিমে ব্যক্তিপুজো চলেছে লম্বা সময় ধরে। রামিজ রাজা যখন পাক বোর্ডের প্রধান ছিলেন, সেই সময় থেকে। বাবর আজমের কথা বলছি। রামিজের মুখে বাবরের নাম ছাড়া আর কিছু শোনা যেত না। দেখুন, বাবরকে প্রাধান্য দেওয়া নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু বাকিদের কথাও তো বলা উচিত। বাকি ক্রিকেটারদের অবদানকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
তাঁরাও তো খেলছেন দেশের হয়ে। সমর্থক, মিডিয়া বাবর নিয়ে নাচানাচি করতেই পারে। তাতে সতীর্থদের খারাপ লাগবে না। কিন্তু পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড তো সেটা করতে পারে না। তাতে যা হওয়ার, তাই হয়েছে। ড্রেসিংরুমে প্রভাব পড়ছে। আমাদের ড্রেসিংরুমের অবস্থা মোটেও দারুণ মনোরম নয়। দলাদলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকেই শুরু হয়েছে। যা এখনও চলছে। আর যার উপর এত নির্ভরতা, সেই বাবর গত দশ-পনেরোটা ইনিংসে কিছুই করতে পারেনি। তার উপর স্ট্রাকচারাল ডিফেক্ট। মাঝে হঠাৎ করে পাকিস্তান ‘বাজবল’ খেলতে শুরু করে দিল। আরে, ‘বাজবল’ কি হাতের মোয়া? সবার পক্ষে সব জিনিস সম্ভব? পাকিস্তান, পাকিস্তানের মতো খেললে কী অসুবিধে হত?
জানি না, কবে আবার পুরনো চেহারায় ফিরবে পাকিস্তান ক্রিকেট? জানি না, কবে আবার পাকিস্তানকে ভয় পাবে বিশ্বের বাকিরা? টিমটাকে নিয়ে দুঃখ-কষ্টও মনে হয় আজকাল গা সওয়া হয়ে গিয়েছে আমাদের। অবিকল আতিফ আসলামের গানটার মতো।
অব তো আদত সি হ্যায় মুঝকো, অ্যায়সে জিনে মে!
(লেখক পাকিস্তানের ‘জিও টিভি’-র প্রখ্যাত সাংবাদিক)
লেখা সাক্ষাৎকারভিত্তিক
বাবর নিয়ে অতিরিক্ত ঊর্ধ্ববাহু হতে গিয়েই এই ভরাডুবি
পাক ড্রেসিংরুমের অবস্থা মোটেও মনোরম নয়। দলাদলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকেই শুরু হয়েছে।Published By: Krishanu MazumderPosted: 08:54 PM Sep 03, 2024Updated: 08:57 PM Sep 03, 2024
Advertisement
Sangbad Pratidin News App
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
হাইলাইটস
Highlights Heading- পাকিস্তান ক্রিকেটের এই অধঃপতন দেখে দেশের গোটা আওয়ামের মতো আমরা, ক্রিকেট সাংবাদিকরাও স্তম্ভিত।
- শুধু স্তম্ভিত বলা ভুল। আমরা লজ্জিতও।
- ভাবতেই পারছি না, দেশের মাঠে বাংলাদেশের কাছে টেস্ট সিরিজে চুনকাম হচ্ছি আমরা!
Advertisement