দীপঙ্কর মণ্ডল: ‘আমফানের তাণ্ডবের ফলে বিপর্যস্ত এলাকাগুলির পুনর্গঠনে সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে।’ শনিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপে মহকুমাশাসকের দপ্তরে আয়োজিত বৈঠকে প্রশাসনিক আধিকারিদের এই নির্দেশই দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পাশাপাশি পরিস্থিতি সামাল দিতে একাধিক পরিকল্পনা রূপায়ণের উপরেও জোর দেন তিনি।
মহকুমাশাসকের দপ্তরে প্রশাসনিক আধিকারিক ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে আয়োজিত বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে চার ধরনের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হচ্ছে আমাদের। করোনা, লকডাউন, পরিযায়ী শ্রমিক ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়। একদিকে সরকারের যখন আয় নেই তখন আমফানের তাণ্ডবে এক লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। এমনিতেই কোভিডের মোকাবিলা করতে গিয়ে আমাদের হাতে বেশি টাকা নেই। ফলে বড় কোন প্রজেক্ট হাতে নেওয়া যাবে না। ফলে খুব সমস্যা তৈরি হয়েছে। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বিভিন্ন জেলার ৬ কোটি মানুষ। শুধু দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন অঞ্চলে ৭৩ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ১০ লক্ষের বেশি বাড়ি ভেঙেছে। ডায়মন্ড হারবারেই ভেঙেছে দেড় লক্ষ বাড়ি। এই জেলার ৫৬ কিলোমিটার নদীবাঁধ ভেঙে গিয়েছে। বর্ষার আগে এই বাঁধ সারানো না গেলে আরও বড় সমস্যা হবে। এটা জাতীয় বিপর্যয়ের থেকেও বড় ক্ষতি। তাই এখন পুনর্গঠনের উপরেই সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে।’
[আরও পড়ুন: বিদ্যুতের দাবিতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ, জনতা-পুলিশ সংঘর্ষে উত্তপ্ত কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে]
এদিকে করোনা আর অন্যদিকে আমফান, এই দুটির সাঁড়াশি আক্রমণের ফলে বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। এই সময় কেউ যেন কোনও দুর্নীতি না করেন সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে বলে জেলাশাসককে দায়িত্ব দেন। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল আসবে বলে উল্লেখ করে দুর্গত এলাকাগুলিতে যৌথভাবে সমীক্ষা করা হবে বলেও জানান।
পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে হবে। প্রয়োজন পড়লে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে রেশন পৌঁছে দিতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিদ্যুতের ভেঙে পড়া খুঁটি সারিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে আসতে হবে। স্কুল ও কলেজের পড়ুয়াদের জন্য আলাদা প্যাকেজ করা হোক। কারণ তাদের বই, খাতা ও ব্যাগ নষ্ট হয়েছে। সেগুলি বিনামূল্যে তাদের হাতে তুলে দিতে হবে। স্কুলের পোশাক নষ্ট হলে ব্যবস্থা করতে হবে। এই বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেবেন জেলাশাসক। দুর্গতদের হাতে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। পুরো বিষয়টি স্বাভাবিক হওয়ার জন্য আরও সময় দিতে হবে। বিভিন্ন জায়গায় আরও বেশি করে কমিউনিটি কিচেন চালাতে হবে। তার জন্য চাল, ডাল ও অন্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরকারই সরবরাহ করবে। বিদ্যুৎহীন এলাকাগুলিতে পানীয় জল সরবরাহ করার জন্য ১৫০টি জেনারেটর ভাড়া করে ব্যবহার করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত করোনার টাকা দেয়নি কেন্দ্র। তারপরেও কাজ চলছে। ত্রাণের পাশাপাশি পুনর্গঠনের কাজ চলছে। রাতারাতি সব হয়ে যাবে, একটু ধৈর্য্য ধরুন।’
[আরও পড়ুন: আমফানের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাগান, আকাশ ছোঁয়া হতে পারে ফলের দাম]
The post পুনর্গঠনেই সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে, কাকদ্বীপের বৈঠক থেকে নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর appeared first on Sangbad Pratidin.