দীপঙ্কর মণ্ডল: এ যেন বিরিয়ানি না কিনলেও শুধু সুগন্ধ নেওয়ার জন্য খদ্দেরের কাছে টাকা নেওয়া। এবার মাধ্যমিক (Madhyamik)এবং উচ্চমাধ্যমিক – দু’টি পরীক্ষাই হয়নি। ফলে প্রশ্নপত্র ছাপা, রাজ্যের জেলায় জেলায় তা বিলির জন্য গাড়ি, উত্তরপত্র বিলি, খাতা দেখার জন্য শিক্ষকদের সাম্মানিক, পরীক্ষকদের ভাতা ইত্যাদি খাতে এক আনাও খরচ হয়নি। তবু চলতি বছরের মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পড়ুয়াদের কাছ থেকে পরীক্ষা ফি নিয়েছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। আগামী বছরও দু’টি পরীক্ষা হবে কি না তা অনিশ্চিত। তা সত্ত্বেও রাজ্যের দুই মেগা পরীক্ষার ফি নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পর্ষদ একটি নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তৈরি করেছে। স্কুলগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, নতুন অ্যাকাউন্টেই (Bank account) পাঠাতে হবে পরীক্ষা ফি বাবদ আদায় করা টাকা।
চলতি বছরে মাধ্যমিকে বসার কথা ছিল ১০ লক্ষ ৭৯ হাজার ৭৪৯ জন পড়ুয়ার। প্রত্যেকের কাছে ২২০ টাকা করে নিলে পর্ষদের তহবিলে জমা পড়েছে মোট ২৩ কোটি ৭৫ লক্ষ ৪৪ হাজার ৭৮০ টাকা। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার কথা ছিল ৮ লক্ষ ১৯ হাজার ২০২ জনের। প্রত্যেকের কাছে পরীক্ষা ফি বাবদ ৩৫০ টাকা করে নিলে সংসদে জমা পড়েছে ২৮ কোটি ৬৭ লক্ষ ২০ হাজার ৭০০ টাকা। যোগ করলে এই টাকার পরিমান ৫২ কোটি ৪২ লক্ষ ৬৫ হাজার ৪৮০ টাকা। প্রধান শিক্ষকদের সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতির প্রশ্ন “অ্যাডমিট, মার্কশিট এবং সার্টিফিকেট ছাপাতে সবচেয়ে বেশি ধরে যদি ৪২ লক্ষ টাকাও খরচ হয়, তাহলে বাকি টাকা কোথায়? উদ্বৃত্ত টাকা ছাত্রছাত্রীদের ফেরত দিতে হবে। ২০২২ সালে পরীক্ষা না হলে কারও কাছে টাকা নেওয়া যাবে না।”
[আরও পড়ুন: চাকরি দেওয়ার নামে বড়সড় আর্থিক প্রতারণা, পুলিশের জালে রেলের ভুয়ো ইঞ্জিনিয়ার]
মাধ্যমিকে নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন খরচ ৪০ টাকা। উচ্চ মাধ্যমিকে (Higher Secondary) একাদশ শ্রেণীতে রেজিস্ট্রেশন খরচ ৭৫ টাকা। এছাড়া ফর্ম কেনা ও প্রসেসিং ফি নেওয়া হয় ৪৫ টাকা। একাদশে ল্যাবরেটরির সংক্রান্ত বিষয়ের জন্য বাৎসরিক পরীক্ষা ফি মোট ১০০ টাকা। ননল্যাব বিষয়ের ফি ৯০ টাকা। মাধ্যমিক পরীক্ষার ফি ১৬০ টাকা। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফর্মের দাম ও প্রসেসিং ফি ৪৫ টাকা ছাড়া পরীক্ষা ফি ১৫৯ টাকা। এসবের পরেও মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার সেন্টার ফি বাবদ ন্যূনতম ৫০ টাকা করে দিতে হয় ছাত্রছাত্রীদের।
[আরও পড়ুন: অশান্ত Afghanistan, কলকাতার বাজারে আকাশছোঁয়া দাম ড্রাই ফ্রুটের]
করোনা (Coronavirus) অতিমারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ের চাপে এবার মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হয়নি। আগের ক্লাসে পাওয়া নম্বরের প্রেক্ষিতে মূল্যায়ন করে ফল প্রকাশ হয়েছে। গত বছর মার্চ মাস থেকে স্কুল বন্ধ থাকায় এবার স্কুলের কোনও ক্লাসের পরীক্ষাই হয়নি। আগামী বছরও এই অবস্থা বজায় থাকলে পরীক্ষা যে হবে না তা নিশ্চিত। ২০২২–এর মাধ্যমিক–উচ্চ মাধ্যমিকের মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি স্কুলশিক্ষা দপ্তর (Education Department)। সূত্রের খবর, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে পরীক্ষা না হওয়ায় ছাত্রছাত্রীদের টাকা কি ফেরত দেওয়া হবে? এ নিয়ে এখনও মুখ খুলতে চাননি কেউ।