অভ্রবরণ চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: তিনি গেলেই শিলিগুড়ির (Siliguri) মাসির বাড়িতে যেন উৎসবের আমেজ তৈরি হত। গান বাজনা, খাওয়াদাওয়া আর ঘোরাফেরায় যে কীভাবে সময় কেটে যেত, টের পেতেন না কেউ। ডিস্কো কিং বাপি লাহিড়ীর (Bappi Lahiri) মৃত্যুর পর সেই সোনালী দিনগুলিকেই স্মরণ করলেন মাসিরবাড়ির সদস্যরা। শিল্পীর মৃত্যু শোকের ছায়া এলাকায়।
জানা গিয়েছে, দু’বছর বয়স থেকেই শিলিগুড়ির কোর্ট মোড় এলাকায় মাসির বাড়িতে আসা-যাওয়া ছিল বাপি লাহিড়ীর। পরিবার সূত্রে খবর, মাসতুতো দাদা ভবতোষ চৌধুরী ও বাপি লাহিড়ী ওই বাড়িতে একসঙ্গে বেড়ে উঠেছেন। পরে কলকাতায় চলে আসেন তিনি। পরবর্তীতে পাড়ি দেন মুম্বইয়ে। কিন্তু বছরে অন্তত চার থেকে পাঁচবার যাওয়া হত মাসির বাড়ি। শেষ গিয়েছিলেন ২০১৭ সালে। শুধু তাই নয়, ২০১৬ সালে শেষ লাইভ শো করেছিলেন শিলিগুড়িতে। বাড়ির দোতালায় বাপির জন্য একটা আলাদা ঘর রাখা ছিল। যখন শিলিগুড়ি যেতেন, তখন ওই ঘরেই থাকতেন তিনি। এক তলায় বাড়ির ড্রয়িং রুমটাই ছিল আড্ডাখানা। খুব মাছ ভালবাসতেন বাপি লাহিড়ী। তিনি গেলেই হরেকরকম মাছের রান্নার হিড়িক পরে যেত বাড়িতে৷ চিতল, কাতল, তো হতই।
[আরও পড়ুন: দেশের সবেচেয়ে বেশি করদাতাদের তালিকায় বাপি লাহিড়ী! কত সম্পত্তি রেখে গেলেন?]
বাপি যে আর নেই, তা বিশ্বাস করেই উঠতে পারছেন না চৌধুরী পরিবারের সদস্যরা। “গত বছরই বাপির শরীর খারাপের সময় দেখা করতে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু হয়ে ওঠেনি। নিজেকে দোষী লাগছে”, এমনটাই আক্ষেপের সুর দাদা ভবতোষ চৌধুরীর গলায়। পরিবারের সদস্য ময়ুখ চৌধুরী জানান, “বাড়িতে এলেই দিনভর আড্ডা হত। চলত গান বাজনা। আড্ডা বসত ড্রয়িং রুমে।” তাঁর কথায়, “উনি চা খেতে খুব ভালোবাসতেন। চায়ের টানে প্রায়শই কার্শিয়াং যেতেন। এছাড়াও জঙ্গলে ঘুরতে ভালোবাসতেন। শিলিগুড়ি এলেই ছুটতেন জঙ্গলে ঘুরতে৷” কথাগুলো বলতে বলতেই গলা ধরে আসছিল তাঁর। হারিয়ে ফেলছিলেন ভাষা। জলে ভরে আসছিল চোখ।
শুধু মাসির বাড়ি নয়, দেশের প্রখ্যাত গায়ক ও সুরকার বাপি লাহিড়ীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে শিলিগিড়ির গেটবাজার রামঠাকুর মন্দিরে। কারণ, যখনই তিনি শিলিগুড়িতে যেতেন ওই মন্দিরে ঘুরতে গিয়েছেন। মন্দিরের কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আড্ডাও দিয়েছেন। এমনকী মন্দিরের ফান্ডের জন্য বিনা পারিশ্রমিকে অনুষ্ঠান করবে বলে গিয়েছিলেন। কিন্তু তা আর হল না। বুধবার ভোরে ৬৯বছর বয়সে প্রাণ হারালেন বাপি লাহিড়ি। আর তার মৃত্যুর খবরে থমকে গেল রামঠাকুর মন্দির। ডিস্কো কিংয়ের স্মৃতিচারণ করতে করতে গিয়ে আবেগে ভেসে গেলেন মন্দির কমিটির সম্পাদক নিখিল সেন। তিনি বলেন, “উনি আমাদের গুরুদেবের আশ্রিত ছিলেন। তাই যখনই শিলিগুড়ি আসতেন আমাদের মন্দিরে আসতেন। আমাদের সকলের সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা মারতেন। তিনি যে অত বড় একজন শিল্পী তা তাকে দেখলে বোঝাও যেত না। এখানে এসে চা খাওয়া, মন্দিরের পরিকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে খোঁজ নেওয়া। আবার যাওয়ার আগে নিয়ম করে দান করে যাওয়া। আমরা একজন অভিভাবককে হারালাম। কারণ, যে কোনও দরকারে তাঁকে ফোন করে পরামর্শ নিতাম আমরা। ”