সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কালীক্ষেত্র কালীঘাট। উত্তরে দক্ষিণেশ্বর, দক্ষিণে বহুলা বা আজকের বেহালা। মাঝে ধনুকের মতো বাঁকা অংশটি নিশ্চিত কলকাতা নগরী। পীঠনির্নয় তন্ত্র মনে করে কলকাতার কালীক্ষেত্রর মাহাত্ম্য বারাণসীর সমতুল্য। মনে করা হয়, এই শহরের অভিভাবকরূপে কালীঘাটে বিরাজ করছেন মা দক্ষিণাকালী। সতীর একান্ন পীঠের অন্যতম। কীভাবে, কবে তৈরি হয়েছিল এই মন্দির? কী বলছে ইতিহাস?
সূর্যকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রণীত কালীক্ষেত্র দীপিকার মতে, ষোড়শ শতকের মধ্যভাগে ভুবনেশ্বর ব্রহ্মচারী নামে এক সাধক ছিলেন। তিনি দেবী কালীর পুজো করতেন। আরও বলা হয়েছে, ভুবনেশ্বর তাঁর জামাই আগমাচার্য ভবানীদাস চক্রবর্তীকে কালীঘাটের মন্দিরের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। যশোর রাজ প্রতাপাদিত্যর কাকা রাজা বসন্ত রায় এখানে মন্দির তৈরি করেন। কালের নিয়মে দেবীর মন্দির জীর্ণ হয়ে পড়ে। মন্দিরের সেবায়েত হালদার পরিবারের দাবি, ১৮০৯ সালে সাবর্ণ রায়চৌধুরীরা মন্দিরটি পুনর্নির্মাণ করেন।
কেবল রাজা বসন্ত রায়, সাবর্ণ রায়চৌধুরীরাই নয়, বাওয়ালি রাজবাড়ির সদস্যরাও কালীঘাটে মন্দির নির্মাণের দীর্ঘ ইতিহাসের অংশ। দেবীর মন্দিরের পাশে শ্যামরায়ের মন্দিরটি তৈরিতে তাঁরাই সাহায্য করেছিলেন। এছাড়াও আন্দুলের মহারাজ কাশীনাথ রায় মন্দিরের সামনের নাটমন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন। মন্দির তৈরির ইতিহাসে যোগ রয়েছে ভিনরাজ্যেরও। পঞ্জাবের তারা সিং গড়ে দেন ভৈরব নকুলেশ্বরের মন্দির। জানা যায়, বিহারের মুঙ্গেরের ব্যবসায়ী গোবর্ধন দাস বানিয়ে দিয়েছিলেন কালীঘাট মন্দিরের আশপাশের রাস্তাগুলি। এছাড়াও অন্যান্য জমিদার এবং ব্যবসায়ীরাও মন্দিরের চারপাশ তৈরিতে সাহায্য করেছিলেন।
মন্দির নির্মাণ তো হল। কালীঘাটের দেবীর মূর্তি নিয়েও জনশ্রুতি তথা একাধিক পুরাকথা রয়েছে। যেমন, মূল মন্দিরের পূর্বদিকে রয়েছে পবিত্র কুণ্ডপুকুর। সেই পুকুর থেকেই উঠে এসেছিল কালীঘাটের দেবী কালীর মূর্তি! মায়ের সোনার জিহ্বা গড়ে দেন পাইকপাড়ার রাজা ইন্দ্রচন্দ্র সিং, নেপালের সেনাপতি জং বাহাদুর দেবীকে রুপোর ছাতা গড়ে দিয়েছিলেন। কালীক্ষেত্রের মাহাত্ম্য এতটাই ছিল যে সেকালে মন্দির সংলগ্ন আদিগঙ্গার ঘাটটি বাঁধিয়ে দিয়েছিল খোদ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি।