শ্রীবশিষ্ঠ: বিশ্বের প্রথম পূজিত শিবলিঙ্গের নাম যজ্ঞেশ্বর শিবলিঙ্গ। তিনিই পৃথিবীর প্রথম উৎপন্ন শিবলিঙ্গ বলেও অধিক প্রচারিত। পুরাণ অনুসারে শিবলিঙ্গ সৃষ্টির একাধিক কারণের ভেতরে সপ্তর্ষি ও তাঁদের পত্নীদের ভূমিকাই অগ্রগণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। যজ্ঞেশ্বর শিবলিঙ্গের অবস্থান আমাদেরই দেশ ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যে।

এই রাজ্যের জেলা শহর আলমোড়া থেকে সাঁইত্রিশ কিমি দূরে পাহাড়ের কোলে সমুদ্রতলের ৬১৩৫ ফুট উচ্চে হিমালয়ের নৈসর্গিক শোভার বুকে পাইন ও দেবদারু ছাওয়া অরণ্যময় পরিবেশে এই যজ্ঞেশ্বর শিবলিঙ্গের অবস্থান। স্থানীয় ভাষায় ইনিই জাগেশ্বর। অষ্টম থেকে নবম শতকের মধ্যভাগে কাত্যুরি রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়া বর্তমানে এখানে দাঁড়িয়ে থাকা মন্দির শৈলীটি। এটি শতাধিক দেবজেবীর একশো চব্বিশ মন্দিরের সমারোহে গড়া। একে মন্দির শহর জাগেশ্বরধাম নামে ডাকা হয়। সুন্দর বৌদ্ধশৈলীতে তৈরি মন্দিরের স্থাপত্য ও ভাস্কর্য। বর্তমানে সর্বত্র জীর্ণতার ছাপ ঘিরেছে। কোনও-কোনওটি ভগ্ন ও পরিত্যক্ত।
মন্দির বহিরঙ্গে বৈরাগ্য গোচরে হৃদয়ে পীড়া ঘটালেও ভেতরের বৈভবে অভিভূত হতে হবে সকলকেই। জাগেশ্বর মহাদেবের মন্দির পরিসরের বিভিন্ন মন্দিরে মহামৃত্যুঞ্জয় শিব, পুষ্টিমাতা পার্বতী, হনুমান, ভৈরবনাথ, কেদারনাথ, দুর্গা ইত্যাদি বিভিন্ন দেবদেবী অবস্থান করছেন। এই মন্দির পরিসরের উচ্চতম মন্দিরটির গর্ভগৃহে কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ দেহে যজ্ঞেশ্বর মহাদেব বিরাজমান। স্থানীয়রা অনেকেই এই জাগেশ্বরকে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম বলে দাবি করেন। এখানে শিবের দুই সহচর নন্দী ও ভৃঙ্গী দ্বার প্রহরায় রত।
বলা এখানে একশো চব্বিশটি মন্দিরের মধ্যে একশো আটটি শিব মন্দির রয়েছে। বলা হয়, মন্দিরের সবকটি শিবলিঙ্গই স্বয়ম্ভু, অর্থাৎ এর সবকটি শিবলিঙ্গই নিজের শক্তিতে সৃষ্ট। পুরাণেও এই জ্যোতির্লিঙ্গের উল্লেখ পাওয়া যায়। এখানে একটি পবিত্র কুণ্ড রয়েছে। যজ্ঞ, হবন, ব্রহ্মা, কমল- বিভিন্ন তার নাম। এই কুণ্ডের জল মাথায় নিলে পুণ্য মেলে। এই পবিত্র কুণ্ড পরিসরে পুজোর বেদি রয়েছে। বলা হয়েছে, যে ব্যক্তিই এই কুণ্ডের বেদিতে পূজার্চনা করেছে, তার সকল কষ্ট ও সব পাপ, জ্বালা, যন্ত্রণা দূর হয়ে গিয়েছে। এই হবন কুণ্ডের বেদিতে ত্রেতাযুগে শ্রীরামচন্দ্রের পুত্রদ্বয় লব-কুশ পুজো দিয়ে নিজেদের পাপমুক্ত করেছিলেন।
এই যজ্ঞ বেদির এমনই মাহাত্ম্য যে এই বেদিতে অনুষ্ঠিত মৃত্যুঞ্জয় যজ্ঞ বিধির লিখনকেও খণ্ডাতে সক্ষম। অকালে যমদূত তাকে স্পর্শ করতে পারে না। বিধি মানুষের জন্মের সময়ে ফাঁড়া, দুর্ঘটনা বা অকালমৃত্যু লিখে থাকলে এখানকার মৃত্যুঞ্জয় যজ্ঞের ফলে তা পালটে যায়।
(ঋণ: ভারতের আশ্চর্য শিবলিঙ্গ। শ্রীবশিষ্ঠ। সাধনা)