অভিরূপ দাস: কালীপুজোয় সুরার রমরমা। এক এক পাড়ার মণ্ডপে প্রসাদের সঙ্গে এক এক ব্র্যান্ডের হুইস্কির বোতল। পুজো শেষ হওয়ার অপেক্ষা। তারপরেই ছিপি খুলে গলায় ঢালা শুরু। ও জিনিস ছাড়া নাকি কালীপুজো (Kali Puja) হয় না! এমন ধারণাকে সম্পূর্ণ অমূলক বলছেন শাস্ত্রজ্ঞরা। তাঁদের কথায়, কালীপুজোয় মদ লাগবেই, এই ধারণা ভুল। পুজোর থেকে মদ্যপান করাটাই যেখানে প্রাধান্য পায়, তারাই মায়ের সামনে বোতল সাজিয়ে দেন। এর জন্য এক শ্রেণির পুরোহিতদের দুষছেন শাস্ত্রজ্ঞরা। অভিযোগ, ‘‘কিছু পুরোহিত যে ব্র্যান্ডের (Brand)সুরা খান, সেটাই আনার বরাত দেন কর্মকর্তাদের। এমন পুরোহিতরা ভণ্ড।’’
আদতে পাড়ায় পাড়ায় যে পুজো হয় তা মূলত শ্যামাকালী বা দক্ষিণা কালী। কী করে বোঝা যাবে তা? শাস্ত্রজ্ঞ ড. জয়ন্ত কুশারীর কথায়, ”যদি দেখেন মায়ের ডান পা শিবের বুকের উপর বাঁ পা পিছনের দিকে, তবে তা দক্ষিণা কালী। দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাটেও এই কালীরই পুজো হয়। ঠনঠনিয়া, ফিরিঙ্গিকালী বাড়িতে আবার বামাকালীর পুজো হয়।” শাস্ত্রজ্ঞরা বলছেন, ”কোনও দক্ষিণা কালীর পুজোতেই মদের প্রয়োজন হয় না। মা তাঁদের কাছে মদ্যপায়ী নন।” জয়ন্ত কুশারীর প্রশ্ন, ‘‘একবার ভাবুন তো, নিজের মাকে কোনওদিন ভালোবেসে মদ দিতে পারবেন?’’ যারা বামাচারী বা বীরাচারী, তাঁরা সুরা দিয়ে পুজো করতে পারেন। তবে সেখানেও নামি দামি হুইস্কির (Whisky) প্রয়োজন নেই। শাস্ত্রে মদের বিকল্পেরও উল্লেখ আছে। পুরোহিত শমিত শাস্ত্রী জানিয়েছেন, ”দোকান থেকে মদ যদি কিনতে না পারেন, তাহলে কর্পূর, তুলসি পাতা, মধু, শর্করা, গঙ্গাজল মিশিয়েই কারণ বারি তৈরি করা যায়। শাস্ত্র বলছে, তা ব্যবহার করলেও কোনও ক্ষতি নেই।”
[আরও পড়ুন: ‘আর বাঁচব না’, ইডি হেফাজতে মৃত্যুভয় তাড়া করছে জ্যোতিপ্রিয়কে!]
সর্বভারতীয় প্রাচ্য বিদ্যা আকাদেমির অধ্যক্ষ জয়ন্ত কুশারীর দাবি, শাস্ত্রে কোথাও কালীপুজোয় মদ ব্যবহারের কথা লেখা নেই। উলটে মদ বর্জন করতে বলা হয়েছে। এদিকে কালীপুজোর আগে শনিবার মদের দোকানের বাইরে লম্বা লাইন! যা দেখে জয়ন্ত কুশারী বলছেন, ‘‘যাঁরা নেশা করে তারা মায়ের দোহাই দিয়ে মদ খাচ্ছে।’’ শাস্ত্রে লেখা রয়েছে, ‘‘সম্বিধা সবয়ুরমধ্যে সম্বিধৈব গরীয়সী।’’ জয়ন্ত কুশারীর কথায়, শাস্ত্রে এই সম্বিধা কথার অর্থ সিদ্ধি। তবে সিদ্ধির জায়গায় শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে বারোয়ারী কালীপুজোয় মদের বোতলেরই রমরমা। জয়ন্ত কুশারীর কথায়, ‘‘ওই বোতল এনে কেউ কেউ বলেন, ঠাকুর মশায়, একটু শোধন করে দিন। পুজো শেষ হতেই মদ খাওয়া শুরু।’’
[আরও পড়ুন: খুন নাকি অন্য কিছু? কালীপুজোর মরশুমে শ্মশানের নিরাপত্তারক্ষীর রহস্যমৃত্যু]
এহেন পুজোকে এক ধরনের বেলেল্লাপনা বলছেন শাস্ত্রজ্ঞরা। কীভাবে পুজো করা উচিত, তা শেখাতে তাই উত্তর কলকাতার জোঁড়াসাঁকো দা বাড়িতে কালীপুজোর প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করেছিল সর্বভারতীয় প্রাচ্য বিদ্যা আকাদেমি। অংশ নিয়েছিল কয়েকশো পুরোহিত। সেখানেই শেখানো হয়েছে পুজোর অ আ ক খ। কালীপুজো নিশিকৃত্য। নটার আগে কালী পুজো শুরু করতে বারণ করছেন শাস্ত্রজ্ঞরা। সবচেয়ে ভালো ফল পেতে মহানিশায় পুজো করার নিদান দিয়েছেন তারা।