সুকুমার সরকার, ঢাকা: ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে বাংলাদেশে মৃত বেড়ে ২১। উদ্ধার হয়েছে ৩০টি হরিণের দেহও। যত সময় যাচ্ছে ঘূর্ণিঝড়ের ফলে নানা অঞ্চলে ধবংসের ছবি পরিষ্কার হচ্ছে। এখনও বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে বহু মানুষ। এই পরিস্থিতিতে দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানা গিয়েছে, রেমালের তাণ্ডবে উপকূলীয় এলাকা-সহ সারাদেশে অন্তত ২১ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আজ,মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ঢাকা-সহ ১০ জেলায় প্রাণহানি ঘটেছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার জানান, ঘূর্ণিঝড় রেমালের ক্ষয়ক্ষতি পর্যবেক্ষণে সোমবার রাত ২টো পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী জেগে ছিলেন। তিনি প্রত্যেক জেলার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে ব্যবস্থাপনা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী রেমালে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকতে সরকারি আধিকারীকদের নির্দেশ দিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের জন্য বৃহস্পতিবার (৩০ মে) পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় আসার কথা রয়েছে হাসিনার।
[আরও পড়ুন: দাগি আসামির বাড়িতে ডিএসপির ‘মোচ্ছব’! পুলিশ হানা দিতেই লুকোলেন শৌচাগারে]
প্রধানমন্ত্রী হাসিনা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রককে নির্দেশ দিয়েছেন, যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার যথাযথ হিসাব বের করতে হবে। এদিকে, রেমালের জেরে ৩০ ঘণ্টা ধরে জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত গোটা বাংলাদেশের সুন্দরবন। এতে বন্যপ্রাণী ও মিষ্টি জলের পুকুরগুলোতে ঢুকে পড়েছে সাগরের নোনা জল। হরিণ, হনুমান-সহ একের পর এক বিভিন্ন প্রাণীর দেহ মিলছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত বনের বিভিন্ন স্থান থেকে ৩০টি হরিণের মরদেহ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার ১৭টি হরিণকে চিকিৎসা শেষে বনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সুন্দরবনের বিভিন্ন খাল থেকে ভেসে আসছে মৃত প্রাণীর দেহ। বন জুড়ে তল্লাশি চলছে। বন্যপ্রাণীর সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে বনবিভাগ।
এছাড়া বনের ভেতরে ২৫টি ফাঁড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো জানান, বিশাল এই বনের আসল ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ বের করা সময় সাপেক্ষ বিষয়। ঝড়ে গাছপালার ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা চলছে। প্রাথমিকভাবে বনের ভেতরে ৬ কোটি টাকার স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদিকে জোয়ারের জল বৃদ্ধি পাওয়ায় সেন্টমার্টিন দ্বীপের কিছু এলাকা প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি দ্বীপের কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙন ধরেছে। সেখানে সাগরে জোয়ারের জল স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে জেলার উপকুল ও নিম্নাঞ্চলের অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ঘর-বাড়িসহ শতাধিক দোকান ভেঙে গিয়েছে। ঝড়, বৃষ্টি ও জলোচ্ছ্বাসে দেশের বিভিন্ন জেলার মতো উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে অসংখ্য ঘরবাড়ি। নষ্ট হয়েছে ফসল। গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে তার ছিঁড়ে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অসংখ্য এলাকা।