সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইহলোকের মায়া কাটিয়ে অমৃতলোকে পাড়ি দিলেন কবি-পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত (Buddhadeb Dasgupta)। বৃহস্পতিবার সকাল ছ’টা নাগাদ দক্ষিণ কলকাতার বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কিডনির অসুখে ভুগছিলেন কবি-পরিচালক। ডায়ালিসিসও চলছিল তাঁর। বিশিষ্ট পরিচালকের মৃত্যুতে বিনোদুনিয়ায় শোকের ছায়া। শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও (Mamata Banerjee)।
দীর্ঘদিন ধরে নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন সাতাত্তর বছর বয়সি বিশিষ্ট কবি-পরিচালক। বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিল কিডনির সমস্যাও। ডায়ালিসিসও চলছিল তাঁর। বৃহস্পতিবারও তাঁর ডায়ালিসিস হওয়ার কথা ছিল। তবে তার আগে বুধবার রাতে কবি-পরিচালকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। বৃহস্পতিবার সকালে নিজের ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন তিনি। তাঁর স্ত্রী ঘুম থেকে ডাকতে যান। তবে কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে আঁতকে ওঠেন। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসককে ডেকে পাঠান। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর মৃত্যু সংবাদ জানান।
[আরও পড়ুন: সম্পর্কের হার-জিত নিয়ে ইনস্টাগ্রামে তরজা শ্রাবন্তী-রোশনের]
১৯৪৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পুরুলিয়ার আনাড়ায় জন্ম বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর। ন’জন ভাইবোনের পরিবারে তৃতীয় সন্তান ছিলেন তিনি। তাঁর বাবা তারাকান্ত দাশগুপ্ত পেশায় চিকিৎসক ছিলেন। রেলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। তাই একাধিক জায়গায় ঘুরে ফিরে বড় হয়েছেন কবি-পরিচালক। মাত্র ১২ বছর বয়সে কলকাতায় চলে আসেন। হাওড়ার দীনবন্ধু স্কুলে পঠনপাঠন শুরু হয় তাঁর। স্বাধীনতার পর তাঁর বাবার খড়গপুর এবং ঝাড়খণ্ডে বদলি হয়ে যায়। অর্থনীতি নিয়ে স্কটিশ চার্চ কলেজেও পড়াশোনা করেছেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ শ্যামসুন্দর কলেজে অধ্যাপনা করেছেন তিনি।
এরপর সিনেমা তৈরির ভাবনাচিন্তা শুরু করেন। কলকাতা ফিল্ম সোসাইটির সদস্যপদ গ্রহণ করেন তিনি। ১৯৬৮ সালে ১০ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র তৈরির মধ্য দিয়ে পরিচালনায় হাতেখড়ি তাঁর। তারপর একে একে ‘দূরত্ব’, ‘নিম অন্নপূর্ণা’, ‘গৃহযুদ্ধ’, ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’, ‘স্বপ্নের দিন’, ‘উড়োজাহাজ’-এর মতো ছবি করেছেন তিনি। তাঁর বহু ছবি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছে। ‘বাঘ বাহাদুর’, ‘চরাচর’, ‘লাল দরজা’, ‘কালপুরুষ’-সহ একাধিক ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ‘তাহাদের কথা’ বাংলায় সেরা ফিচার ফিল্মের সম্মান পেয়েছিল। এই ছবির জন্য জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছিলেন তিনি। বিনোদুনিয়ার পাশাপাশি সাহিত্য জগতেও অবদান রয়েছে তাঁর। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের মৃত্যুতে শোকে পাথর তাঁর চেনা পরিচিতরা। বিনোদুনিয়াতেও নেমেছে শোকের ছায়া। তাঁর মৃত্যু অপূরণীয় ক্ষতি বলেই জানিয়েছেন অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়।