shono
Advertisement

Breaking News

নেতাজির প্রেমে পড়েছিলেন পদ্মজা নাইডু?

গবেষকের চন্দ্রচূড়ের নতুন বইতে পরের পর বিস্ফোরক তথ্য।
Posted: 10:15 AM Jan 31, 2022Updated: 10:15 AM Jan 31, 2022

কুণাল ঘোষ: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে নিয়ে সৃজিতের ‘গুমনামি’ দেখেছেন?
প্রসেনজিৎ নেতাজির ভূমিকায়। আর অন্তর্ধান রহস্যের তদন্ত যাঁকে কেন্দ্র করে এগিয়েছে, চিত্রনাট্যের সেই ভরকেন্দ্র চন্দ্রচূড় ঘোষ। পর্দায় চরিত্রটিতে অভিনয় করেছেন অনির্বাণ।
চন্দ্রচূড় নেতাজি (Netaji Subhas Chandra Bose) গবেষক। দীর্ঘকাল তিনি, অনুজ ধর এবং সহকর্মীরা কাজ করছেন নেতাজির উপর। অতীতে আমি যখন রাজ্যসভায় নেতাজি প্রসঙ্গে সরব হই, তার তথ্য যেমন চন্দ্রচূড়ের কাছ থেকে পাওয়া, তেমনই আজ এ বিষয়ে বহু বক্তা, পরিচালকের তথ্যভাণ্ডার চন্দ্রচূড়ই। এবং তিনি অবিরাম কাজ করে চলেছেন। সব ঠিকঠাক থাকলে ফেব্রুয়ারি মাসেই তিনি একটি বিস্ফোরণ ঘটাতে চলছেন। তাঁর নতুন বইটি সামনে আসবে এবং নিশ্চিত, তাতে ঝড় উঠবে।

Advertisement

চন্দ্রচূড় এবং অনুজের আগের বই ‘কনানড্রাম’ ছিল নেতাজির অন্তর্ধানের বিষয়ে। তাঁদের গবেষণার যে অংশ তদন্ত কমিশন গুরুত্ব দেয়নি, তার সবটার সংকলন। ক্যাচলাইন­ ‘সুভাষ বোসেজ লাইফ আফটার ডেথ’। তাঁরা দেখিয়েছেন তথাকথিত বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়নি। বরং গুমনামিবাবাকে ঘিরে আরও তদন্তের অবকাশ রয়েছে, কারণ সামঞ্জস্য প্রবল।

[আরও পড়ুন: অবৈধভাবে ইটালি পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা, প্রবল ঠান্ডায় মাঝ সমুদ্রে প্রাণ গেল ৭ বাংলাদেশির]

আর এবার চন্দ্রচূড়ের বইটি আসছে- ‘বোস- দ্য আনটোল্ড স্টোরি অফ অ্যান ইনকনভিনিয়েন্ট ন্যাশনালিস্ট’। এতে অন্তর্ধান পর্ব নেই। এই কাহিনি শেষ হচ্ছে ষোলোই আগস্ট সিঙ্গাপুরে। এটিতে মূলত জোর দেওয়া হয়েছে স্বাধীনতা এনে দেওয়ায় নেতাজি এবং আইএনএ—র ভূমিকার উপর। আর তার সঙ্গে থাকছে নানা অকথিত ঘটনা। পাশাপাশি কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা। নেতাজি নিয়ে শতসহস্র জীবনীমূলক বইয়ের থেকে যা আলাদা। তার অন্যতম কারণ চন্দ্রচূড় এতে চিরাচরিত ইতিহাসের সঙ্গে তাঁদের গবেষণা এবং পরবর্তীকালে কিছু ডিক্লাসিফায়েড ফাইল থেকে পাওয়া তথ্যের সমন্বয় ঘটিয়েছেন। এমনকী যেসব অতিসংবেদনশীল বা স্পর্শকাতর বিষয় সাধারণ জীবনীকাররা এড়িয়ে যান, চন্দ্রচূড় তার অনেকগুলিই তাঁর বইতে ধরে রেখেছেন।

 

যেমন, ডিক্লাসিফায়েড ফাইল থেকে এমিলি শেঙ্কলের সঙ্গে নেতাজির বিয়ের বিষয়টি সম্পর্কে কী পর্যবেক্ষণ আসছে? আবার চন্দ্রচূড় লিখেছেন, পদ্মজা নাইডু কি নেতাজির প্রতি রোম্যান্টিক মানসিকতা দেখিয়েছিলেন? তখন নেহরু পদ্মজাকে কী পরামর্শ দিয়েছিলেন? উল্লেখ্য, পদ্মজার সঙ্গে জওহরলাল নেহরুর সম্পর্ক বহুচর্চিত। এবং পদ্মজা সারা জীবন বিয়ে করেননি। অথচ এই নেহরুর চিঠি থেকেই এমন ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে, যেখানে কোথাও যেন সুভাষচন্দ্রর প্রতি পদ্মজার প্রেমজনিত দুর্বলতার ইঙ্গিত ছিল।

[আরও পড়ুন: কালো তালিকাভুক্ত হয়েও ৪ বছর ধরে চলছে ধর্মতলার দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাস! তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য]

চন্দ্রচূড় চেষ্টা করেছেন নেতাজির জীবনীস্রোতের পুনরাবৃত্তিতে না গিয়ে বিষয়টি সমকালীন ও চিরকালীন দৃষ্টিতে গবেষণার দলিল করে তুলতে। কংগ্রেস নেতৃত্বের সঙ্গে ঠিক কোন কোন কারণে নেতাজির সংঘাত, আন্তর্জাতিক শক্তিবিন্যাসের সমীকরণের নেপথ্য কাহিনির ময়নাতদন্তে ঢুকেছেন লেখক। নেতাজি রাজনৈতিকভাবে কখন কাদের বা কোন গোষ্ঠীকে সঙ্গে পাচ্ছেন, বারবার কেন তাৎপর্যপূর্ণ শিবিরবিন্যাস, তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা থাকছে। কংগ্রেস, বামপন্থী শিবির, মুসলিম লিগ, হিন্দু মহাসভা, প্রতিটি পর্যায় বিশ্লেষণ—সহ তুলে ধরেছেন তিনি। আজকের ভারতের প্রেক্ষাপটে যে ইতিহাস আরও বেশি করে প্রাসঙ্গিক। বিভিন্ন চরম ও নরমপন্থী শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেও তিনি ভারসাম্য রেখেছেন এবং বঙ্গ রাজনীতিতে প্রবল প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন, তার ধারাভাষ্য। সঙ্গে থাকছে সুভাষবাবু সম্পর্কে সেই সময়ের বহু কাগজের প্রতিবেদন, প্রকাশিত তথ্য, বিশিষ্টদের মূল্যায়ন। এদের মধ্যে কেউ আবার মূল্যায়নে বদলও এনেছিলেন। লেখক চেষ্টা করেছেন অলিখিত, উপেক্ষিত বা স্বল্পচর্চিত বিষয়কে সর্বসমক্ষে এনে নেতাজিকে নতুন করে আবিষ্কারের।

বস্তুত, গবেষক চন্দ্রচূড় মনে করেন, নেতাজির ইমেজ আমাদের কাছে এক বিদ্রোহীর। যিনি প্রবল বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে পরাজিত হন। এই বীরের ইমেজের আড়ালে নেতাজির দক্ষ রাজনৈতিক সত্তাটিকে ধামাচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে আজকের প্রচলিত ইতিহাসে। নতুন বইতে এই সত্তাটিকেই খুঁজেছেন লেখক। উদাহরণ: নাৎসি জার্মানি, ফ্যাসিস্ট ইতালি এবং সাম্রাজ্যবাদী জাপানের বিরুদ্ধে সাধারণ জনমত থাকা সত্ত্বেও নিজের রাজনৈতিক কেরিয়ার বাজি রেখে সুভাষবাবু সেদিকে হাত বাড়ালেন কেন? শুধুই অন্ধ ব্রিটিশ বিরোধিতা থেকে? কিংবা দেশীয় কমিউনিস্টরা তাঁর বিরুদ্ধে জেনেও তিনি ভাবলেন কী করে সোভিয়েত রাশিয়া তাঁর পাশে থাকবে? কেন ব্রিটিশরা বারবার আলোচনায় গান্ধী, নেহরু, প্যাটেলকে ভরসা করলেও সুভাষ বসু ব্রাত্য? এই ধরনের বহু জটিল ঘূর্ণাবর্তকে নতুন বইতে সামনে এনেছেন চন্দ্রচূড়। ডিক্লাসিফায়েড তথ্যকে চর্চিত ইতিহাসের সঙ্গে মিশিয়ে গভীরে পৌঁছনোর চেষ্টা করেছেন তিনি।

নেতাজির রাজনৈতিক প্রবল তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা, ব্যক্তিজীবনের নেপথ্য কাহিনি এবং স্বাধীনতায় আইএনএ-র ভূমিকা, এই সব নিয়েই পাঠকের দরবারে নতুন চেহারায় নেতাজিকে পেশ করবেন চন্দ্রচূড় ঘোষ।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement