স্টাফ রিপোর্টার, ঘাটাল: এক লক্ষ টাকা জমা রাখলে মাসে মাসে ফেরত মিলবে আট হাজার টাকা! এমনই প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হলেন দাসপুরের বেনাই গ্রামের প্রায় দুই শতাধিক গ্রামবাসী। সোমবার টাকা ফেরত ও প্রতারকের শাস্তির দাবিতে দাসপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করলেন প্রতারিতরা। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে দাসপুর পুলিশ। অভিযোগ, দাসপুর দুই নম্বর ব্লকের বেনাই গ্রামের এক দম্পতি হারু পাল ও তনুশ্রী পাল এই প্রতারণার ফাঁদ পেতে প্রায় দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করে চম্পট দিয়েছেন।
জানা গিয়েছে, বেনাই গ্রামের ওই দম্পতি প্রতিবেশী মহিলাদের কাছে জানান তাঁরা একটি বড় কোম্পানীর ডিরেক্টর। ওই কোম্পানীতে এক লক্ষ টাকা জমা রাখলে মাসে মাসে আট হাজার টাকা ফেরত পাবেন। গ্রামের পরিচিত মানুষকে বিশ্বাস করে অনেকেই মোটা অংকের টাকা জমা রাখছিলেন। অনেকে আবার লোভ সামলাতে না পেরে ব্যাঙ্ক (Bank) থেকে ঋণ (Loan) নিয়ে তাঁদের হাতে টাকা তুলে দেন। চারমাস ঠিকঠাকই প্রতি মাসে আট হাজার টাকা ঢুকে যেত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। গোল বাঁধল লোকসভা ভোটের সময়। স্থানীয় বাসিন্দা সুকান্ত রং বলেন, "গ্রামেরই বাসিন্দা বলে আমরা কেউই তাঁদের সন্দেহ করিনি। বিশ্বাস করে কথা মতো টাকা তুলে দিয়েছি, টাকা জমার কোনও রসিদ ছাড়াই। গত পাঁচ মাস ধরে টাকা জমা না পড়ায় আমাদের সন্দেহ জাগে। টাকা ফেরত চাইতেই দুজনেই ঘরে তালাচাবি দিয়ে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছেন।"
[আরও পড়ুন: বাতিল রাজ্যপালের চোপড়া সফর, শিলিগুড়িতে সাক্ষাতে নারাজ নির্যাতিতরা]
সুকান্তবাবুর মতো গ্রামের প্রায় দুইশোর মতো বাসিন্দা এই প্রতারণা চক্রের ফাঁদে পড়েছেন বলে জানা গিয়েছেন। তাঁদের মধ্যেই বেশিরভাগই মহিলা বলে জানা গিয়েছে। কারও কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা তো কারও কাছ থেকে দুই লক্ষ টাকাও নিয়েছে বলে দাবি করেছেন মহিলারা।
জানা গিয়েছে, এসডিএফএক্স গ্লোবাল নামে ওই ভুয়া সংস্থার নামে টাকা তুলতেন দম্পতি। বেনাই গ্রামের বাসিন্দা শীলা পাত্র জমা দিয়েছেন এক লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। ৬০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন রাখী হাইত। তাঁরা বলেন, "ঋণ করেই ওই টাকা জোগাড় করেছিলাম আমরা। প্রথম প্রথম টাকা জমা পড়ত। তা দেখে অনেকেই এগিয়ে আসেন। গত পাঁচ মাস ধরে আর টাকা জমা পড়ছে না। ফলে ঋণের টাকাও জমা দিতে পারছি না আমরা। সর্বস্বান্ত হয়ে গেলাম। আমরা বার বার জানতে চাইতে গেলে আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন ওঁরা। আচমকাই দেখি ঘরে তালাবন্ধ। বেপাত্তা হয়ে গিয়েছেন দুজনেই। তাই বাধ্য হয়ে আমরা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।" এদিকে, বার বার অভিযুক্ত ওই দম্পতির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয় নি। কখনও মোবাইল সুইচ অফ তো কখনো নট রিচেবল ছিল। ফলে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন গ্রামের প্রতারিত বাসিন্দারা। দাসপুর দুই নম্বর ব্লক তৃণমূল সভাপতি সৌমিত্র সিংহরায় বলেন, "ঘটনাটি শুনেছি। এখনও গ্রামের মানুষ এই ধরনের প্রতারণার ফাঁদে পড়ছেন জেনে খুবই খারাপ লাগছে। দেখছি কী করা যায়।"