দীপঙ্কর মণ্ডল: ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ এই পেশায় চলে না। গ্রাহকের সঙ্গে শারীরিক স্পর্শ আবশ্যিক। স্বাস্থ্যকর্মী এবং পুলিশের মতো অপরিচিতদের কাছাকাছি থাকতে হয়। এঁরা যৌনকর্মী। লকডাউনের জেরে লালবাতি এলাকায় সংখ্যা কিছুটা কমলেও রাজ্যে এখন প্রায় ৬০ হাজার যৌনকর্মী আছেন। পেশায় ভাঁটার টানের মাঝেও খদ্দের কিছুটা বাড়ছে। অচেনা খদ্দেরদের সঙ্গে সময় কাটানোর পর বাড়ছে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা। বিনামূল্যে ভ্যাকসিনের দাবিতে তাই ২০ মার্চ কলকাতায় মিছিল করবেন যৌনকর্মীরা।
সোনাগাছি এলাকায় এই মিছিল হবে। যৌনকর্মীদের উন্নয়নে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মুখ্য পরামর্শদাতা স্মরজিৎ জানা জানিয়েছেন, “আমরা যৌনকর্মীদের জন্য বিনামূল্যে ভ্যাকসিন (Corona vaccine) চেয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকে আবেদন করেছি। উত্তর আসেনি। এবার রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরে আবেদন জানাব।” ভ্যাকসিনের দাবিতে রাজপথে মিছিলের রূপরেখা তৈরিতে বুধবার বৈঠকে বসবেন যৌনকর্মীরা (Sex Worker)। সোনাগাছিতে হবে সেই বৈঠক।
[আরও পড়ুন: ঘরের মেয়ে মমতা, নন্দীগ্রামের দোকানে নিজের হাতে চা বানালেন মুখ্যমন্ত্রী]
গিরিশ পার্ক থেকে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ ধরে উত্তরে এগোলে পেট্রল পাম্প। বাঁ-দিকের গলি ধরে কিছুটা এগিয়ে দেখা হল চৈতালীর সঙ্গে। ভ্যাকসিনের দাবিতে সরব তিনি। বৈঠকের আগের বিকেলে বছর তিরিশের চৈতালি জানালেন, “আগের মতো ভিড় না হলেও ধীরে ধীরে গ্রাহকের গতি বাড়ছে। বেশিরভাগ খদ্দের আমাদের অচেনা। অনেকেই ভিনরাজ্যের। কাস্টমার আমাদের কাছে লক্ষ্মী। কাউকে ফেরাতে পারি না। কিন্তু করোনার ভয় তো থাকেই। তাই আমরা ভোটের আগে ভ্যাকসিন চাই।” একটি পুরনো বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন লাভলি। তিনি প্রতিদিন খুঁটিয়ে খবরের কাগজ পড়েন। কোভিডের বিলেতি স্ট্রেনে যে এখন রাজ্যের আটজন সংক্রমিত, তা জানেন এই তরুণ বয়সের যৌনকর্মী। গড়গড় করে তিনি বলেন, “বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে বিলিতি স্ট্রেন নিয়ে মোট ৮ জন ভরতি। সবাই বিদেশ থেকে কলকাতায় এসেছে। কোনওভাবে যদি ওই ভাইরাস আমাদের শরীরে ঢোকে তাহলে তা লাগামহীনভাবে ছড়াবে। সরকার কেন যে এই ছোট্ট বিষয়টা বুঝছে না।”
উল্লেখ্য, বারোদিন আগে দুবাই থেকে আসা যাত্রীদের লালারস পরীক্ষা করে ১১ জনের কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়া যায়। সবার জিনোম সিকুয়েন্স পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয় কল্যাণীর কেন্দ্রীয় ল্যাবরেটরিতে। সাতজনের ইউকে স্ট্রেন, এবং একজনের লালারসে দক্ষিন আফ্রিকার করোনা স্ট্রেনের হদিশ মেলে। এই নতুন উপসর্গ নিয়ে চিন্তায় স্বাস্থ্যদপ্তর।
[আরও পড়ুন: মোদির সভাতেই বিজেপিতে যোগ শিশির ও দিব্যেন্দু অধিকারীর? তুঙ্গে জল্পনা]
ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যকর্মী এবং পুলিশের করোনা ভ্যাকসিনেশন হয়েছে। যৌনকর্মীদের দাবি যে অনায্য নয়, তা স্বীকার করেছেন নবান্নের কর্তারা। তাঁরা জানিয়েছেন, যৌনকর্মীদের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে নির্বাচন কমিশন অনুমতি দরকার। যৌনকর্মীদের সন্তানদের নিয়ে তৈরি শিল্পী সংগঠনের সদস্য রতন দলুই জানিয়েছেন, কমিশনেও আবেদন জানানো হবে। দাবি না মানা হলে আন্দোলনও হতে পারে।