স্টাফ রিপোর্টার: ভিনরাজ্যের রোগী পশ্চিমবঙ্গের হাসপাতালে চিকিৎসা করতে এলে আধার কার্ড দেখাতে হবে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের ‘রেফার প্রেসক্রিপশন’ দেখাতে হবে। তবেই চিকিৎসা মিলবে। তবে তাঁরাও নিখরচায় চিকিৎসা পাবেন কি না তা খতিয়ে দেখছে স্বাস্থ্যভবনের হাসপাতাল প্রশাসন বিশেষজ্ঞ কমিটি।
ভিনরাজ্য ও প্রতিবেশী দেশের রোগীর চাপ ক্রমশ বাড়ছে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি হাসপাতালে। দেশের মধ্যে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গে নিখরচায় চিকিৎসা হয়। তাই অন্যরাজ্যের রোগীর চাপে হিমশিম অবস্থা সিংহভাগ সরকারি হাসপাতালের। সমস্যা এতটাই প্রকট যে রাজ্যের রোগীদেরই অনেক সময় এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ঘুরতে হয়। তাই বছরের শুরুতেই নতুন নিয়ম চালু করতে চলেছে স্বাস্থ্যদপ্তর। স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেছেন, ‘‘দেশের মধ্যে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গে সরকারি হাসপাতালে মাত্র দুটাকায় হার্ট, সেরিব্রাল স্ট্রোকের অস্ত্রোপচার-সহ সব চিকিৎসা হয়। ভিনরাজ্যের রোগীরাও চিকিৎসা করতে এসে এই সুযোগ পান। তবে রাজ্যের রোগীদের স্বার্থে নতুন নিয়ম চালু হবে। সব প্রস্তাব খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।’’
[আরও পড়ুন: কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতিদের সংঘাত, মেডিক্যাল মামলা নিজের হাতে নিল সুপ্রিম কোর্ট]
ভিনরাজ্য তো বটেই, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান এমনকী মায়ানমার থেকেও ফি-বছর রোগীরা চিকিৎসা করতে আসেন। আবার প্রতিবেশী দেশের রোগী চিকিৎসা করাতে এলে সংশ্লিষ্ট দেশের হাই কমিশন থেকে ছাড়পত্র খতিয়ে দেখা হবে। এদিকে পিজি, এনআরএস, আরজিকর ছাড়াও সাব ডিভিশন হাসপাতালগুলির হিমশিম অবস্থা। গত বছর সরকারি হাসপাতালে রাজ্যের প্রায় ৭৫ শতাংশ রোগী পরিষেবা পেয়েছেন। কিন্তু একটা বড় অংশের রোগীকে শয্যার অভাবে বিভিন্ন হাসপাতাল অন্যত্র রেফার করতে বাধ্য হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান বিধায়ক ডা. সুদীপ্ত রায় বলেছেন, ‘‘ভিন রাজ্য ছাড়াও প্রতিবেশী দেশের রোগী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করে সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে যায়। রাজ্যের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা সন্তোষজনক বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। তবে রাজ্যের রোগীদের যাতে ঘুরতে না হয় তাও বিবেচনায় রাখতে হবে।’’
বি সি রায় শিশু হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. দিলীপ পালের কথায়, ‘‘স্থানীয় আত্মীয়-বন্ধুর ঠিকানা দিয়ে চিকিৎসা করাতে আসেন। ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলার সময় বলেন তাঁরা ভিন রাজ্যের।’’ একই অভিমত মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. অঞ্জন অধিকারীর। তাঁর কথায়, ‘‘অন্যরাজ্যের রোগী বলে চিকিৎসা হবে না, এমনটা কখনও নয়। তবে ক্রমশ যে হারে রোগীর চাপ বাড়ছে তাতে শয্যা বাড়িয়েও রোগী সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’’ রাজ্যের যেকোনও সরকারি হাসপাতালে ক্যানসার, সেরিব্রাল স্ট্রোক, হৃদরোগের মতো জটিল রোগের অত্যাধুনিক চিকিৎসা সম্ভব। আর এই সুযোগে উত্তরপ্রদেশে, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, বিহার, ওড়িশার মানুষ ট্রেন বাসে সটান হাজির হচ্ছেন কলকাতার পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। শিয়ালদহ বা হাওড়া স্টেশন থেকে ভিনরাজ্যের নাগরিকদের প্রথম টার্গেট থাকে এস এস কে এম হাসপাতাল। না হলে ন্যাশনাল, এন আর এস অথবা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।