shono
Advertisement

রঙ্গমঞ্চে চেতনা নাট্য গোষ্ঠীর ‘কুসুম কুসুম’, কেন আজও প্রাসঙ্গিক এমন নাটক?

গিরীশ কারনাডের 'ফ্লাওয়ারস' নাটকের অনুপ্রেরণায় তৈরি নতুন নাটকটি।
Posted: 04:58 PM Nov 24, 2021Updated: 04:58 PM Nov 24, 2021

নির্মল ধর: গিরীশ কারনাডের ‘ফ্লাওয়ারস’ নামের নাটকটিতে ধর্ম ও যৌনতা নিয়ে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত ছিল মন্দিরের দেবী, পুরোহিত এবং পুরোহিতের এক রক্ষিতাকে কেন্দ্র করে। গল্পের চরিত্র তিনটিকে পরিবর্তন না করে, নাট্যকার উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় এক অভিনব, নতুন এবং অনেক বেশি সাম্প্রতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন ‘কুসুম কুসুম’ নামের নতুন বাংলা নাটকে।

Advertisement

ব্যবহারিক ধর্মীয় গোঁড়ামির সঙ্গে অন্ধ বিশ্বাস, রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে জড়িয়ে দেওয়া, অনুপস্থিত রাজার চরিত্রের মাধ্যমে আজকের ধর্ম ও রাজনীতির মিশেল নিয়েও উপযুক্ত ব্যঙ্গ মিশিয়ে দিয়েছেন তাঁর নতুন নাটকের বিন্যাসে। ফলে কালহীন এক চেহারা পরিগ্রহ করে ফেলে ‘কুসুম কুসুম’, যা মূল রচনায় ছিলই না।

গিরিশের রচনায় যৌনতা এবং অন্ধ বিশ্বাসই প্রাধান্য পেয়েছিল। এখানে নাটকটি বৃহৎ এক ব্যাপ্তি পেয়ে যায় রাজনীতির প্রসঙ্গ আনায়। নাট্যদল ‘চেতনা’ তাদের প্রাক সুবর্নজয়ন্তী বছরে এই নতুন প্রযোজনা উপহার দিয়ে জানিয়ে দিল, অন্যান্য বহু দলের মত মেরুদণ্ড বাঁকিয়ে দেবী প্রণাম জানাতে এখনও অভ্যস্ত হয়ে উঠতে চায় না।

[আরও পড়ুন: ‘অন্যের রান্নাঘরে যৌন মিলন করেছিলাম’, নুসরতের শোয়ে গোপন কথা ফাঁস ঋতাভরীর]

হ্যাঁ, প্রায় একক অভিনয়ের মধ্যেও একাধিক জায়গায় পুরোহিত অভয়ের (সুজন মুখোপাধ্যায়) সঙ্গে বারবণিতা কুসুমের সঙ্গে শারীরিক মিলনের ইঙ্গিত রয়েছে বটে, কিন্তু সেটা কখনই স্পষ্ট নয়। ইঙ্গিতময় এবং রুচিপূর্ণ ও শিল্প সুসমন্বীত। স্ত্রী বনহির চরিত্র মঞ্চে এসেছে প্রতীকী চেহারা নিয়ে। পরিচালক অবন্তী চক্রবর্তী অবশ্যই এমন প্রকরণ ভাবনার জন্য সাবাশি পাবেন। চেতনা দলের সঙ্গে অবন্তীর এটি প্রথম কাজ। তিনি উজ্জ্বলের রচনাকে ইঙ্গিতময় করেও বেশ পরিষ্কার, স্পষ্ট এবং দর্শকের চোখ ও মন ভরিয়ে দেন।

অভয়া দেবীর মন্দিরের সেটটিও সাজানো মিনিমালিস্ট কৌশলে। আবহে লাইভ মিউজিকের ব্যবহার অন্য এক মাত্রা এনে দিয়েছে এই প্রযোজনায়। বিশেষ করে সঠিক জায়গায় ঢাকের বাজনা। এমন একটি পৌরাণিক কাহিনিতে দু’টি রবীন্দ্র গানের ব্যবহার সত্যিই চমকে দেয়, এবং ভাবতে হয় রবীন্দ্র গানের কতরকমই না প্রয়োগ হতে পারে। “আমি যখন তার দুয়ারে…” ও “মহারাজ একী সাজে…” গান দুটির প্রয়োগ গায়ে কাঁটা দেয় বইকি। আর অভিনয়! মঞ্চে সুজন একাই একশো বলছি না, সংলাপহীন নিবেদিতা দশের মাধ্যে অন্তত বিশ নম্বর নিয়ে নেবেন। তাঁকে বাদ দেওয়া সম্ভব নয়। অভয়ের অন্তর্যন্ত্রণা, দ্বিধা, দ্বন্দ্ব, রাজার প্রতি বিদ্বেষ, রাগ প্রকাশে সুজন যেমন স্বাভাবিক, তেমনই সহজ সাবলীল অনুশোচনায়, সন্তানপ্রাপ্তির আনন্দে এবং শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তায়ও।

‘কুসুম কুসুম’ সত্যি বলতে সুজনের প্রায় একার কাঁধে বয়ে নিয়ে যাওয়া প্রযোজনা। পরিচালক অবন্তী তাঁকে যোগ্য সহায়তা করেছেন, নির্দেশনায় সঠিক মুহূর্তগুলো বুঝিয়ে দিয়েছেন। ভাবতে ভালো লাগছে, চেতনা দলটি এখনও ‘জগন্নাথ’-এর মত সামাজিক দায়বোধ এর ধারাটি বহন করে চলেছে, পথচ্যুত হয়নি। সুবর্ন জয়ন্তী বছরে প্রাপ্তির আশা আরও বাড়িয়ে দিলেন অরুণ মুখোপাধ্যায়ের দুই আত্মজ সুজন এবং সুমন। অপেক্ষায় রইলাম।

[আরও পড়ুন: ‘সক্কাল সক্কাল… অর্গাজম’! পোস্টে কীসের ইঙ্গিত শ্রীলেখা মিত্রর?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement