নির্মল ধর: বেশ কিছু সময় ধরেই ইন্দ্রনীল ঘোষ (Indranil Ghosh) নামটি বাংলা সিনেমার জগতে পরিচিত। জন্মসূত্রে তিনি প্রয়াত ঋতুপর্ণ ঘোষের (Rituparno Ghosh) সহোদর এবং তাঁর অধিকাংশ ছবির শিল্প নির্দেশক। সুতরাং সিনেমা পরিচালনায় তাঁর আসাটা চলতি কাজেরই এক্সটেনশন বলতে পারি। কিন্তু আশ্চর্যের ঘটনা, প্রায় পাঁচ বছর আগে প্রযোজক পেয়ে ‘শিরোনাম’ (Shironaam) ছবিটি বানিয়েও তিনি রিলিজ করতে পারেননি। কিংবা এমনও হতে পারে কোনও অজানা কারণে প্রযোজক নিজেও তেমন আগ্রহ দেখাননি ছবির মুক্তির ব্যাপারে। যাই ঘটুকনা কেন, শেষ পর্যন্ত এই প্যানডেমিক পরিস্থিতিতে ছবিটি শিরোনাম হতে পারল। পাঁচ বছর আগের বাংলা সিনেমার প্রেক্ষাপট বিচার করলে ‘শিরোনাম’ বাণিজ্যিক বিষয়, সেই ভঙ্গী ও কৌশলকে প্রাধান্য দিয়েই তৈরি। থ্রিলার ঘরানার ছবির বাজার তখন ছিল বেশ ভাল। অবশ্য এখনও তেমন ভাঁটা পড়েনি।
একটি চ্যানেলের বড় কর্তা রজত(অঞ্জন দত্ত) এক উগ্রপন্থী নেতার এক্সক্ল্যুসিভ সাক্ষাৎকার নিতে পাঠায় সাংবাদিক সুজিত(শাশ্বত) ও বিশেষ ফটোগ্রাফার অভিনকে(যিশু)। মতলব, এই সাক্ষাৎকারটি হবে চ্যানেলের TRP বাড়ানোর রঙিন তাস! পরিকল্পনামতো ঠিক জায়গায় পৌঁছেও দু’জনে আলাদা হয়ে পড়ে। অভিন নিরুদ্দেশ হলে চ্যানেলে সম্প্রচার করা হয় তাঁকে অপহরণ করেছে উগ্রপন্থীদের দল। বাড়িতে তাঁর লিভ-ইন পার্টনার আনন্দী (স্বস্তিকা) আর বন্ধু পরিজনেরা চিন্তিত হয়। অন্যান্য চ্যানেল সেই খবর নিয়ে তোলপাড় করে। পরে জানা যায় অপহরণ হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু উগ্রপন্থী নয়, এক দেহোপজীবিনীর হাতে। এবং এক মর্মান্তিক পরিণতিও ঘটেছে। পুলিশ মারফত সব জানতে পারলেও চ্যানেলের বড়কর্তা চেপে যাবার চেষ্টা করে। কিন্তু তা প্রকাশ হলে সব ব্যাপারটাই বিয়োগান্তক মুহূর্তে পৌঁছায়।
[আরও পড়ুন: কঙ্গনাকে ধর্ষণের হুমকি আইনজীবীর, তীব্র বিতর্কের মুখে কী সাফাই অভিযুক্তের?]
ইন্দ্রনীল ঘোষ ছবির শুরু থেকেই রহস্য ও থ্রিলারের মেজাজে ছবিটি বেঁধে রাখেন। “হোক কলরব…” গানটি দিয়ে সন্ধ্যার আড্ডায় যে মেজাজ তৈরি করেন, একটু পরেই সেটা থ্রিলারে বদলে যায়। গাড়ি নিয়ে সাংবাদিক-ফটোগ্রাফারের সফর বেশ ফুরফুরে মেজাজেই। কিন্তু দু’জন আলাদা হয়ে পড়ার পর থেকে ছবির গ্রন্থনা ফিরে যায় থ্রিলার মোডেই! এবং সেই মেজাজটাই পরবর্তী সময় সুন্দর বজায় রাখেন তিনি। তাল কাটে পঞ্চায়েত প্রধান ও কিছু উটকো নেতার গভীরতাহীন সংলাপে। আবার থ্রিলার মেজাজ ফিরে আসে অভিনের দুর্ঘটনায়। এই পর্বে অঙ্কিতা অভিনীত ‘বাজারি মেয়ে’র সঙ্গে অভিনের আলাপ আলোচনা-পর্ব একটু দীর্ঘ। তবে অঙ্কিতা ও যিশু (Jisshu Sengupta) দুজনেই অভিনয়ের জোরে ধরে রাখেন দৃশ্যটি! ছবির শেষে প্রশ্ন থাকে, এই ভাবে চ্যানেলের অনৈতিক কাজে পরোক্ষভাবে সম্মতি দেওয়া হল নাকি?
পরিচালনার কাজে ইন্দ্রনীল প্রায় ত্রুটিহীন। শীর্ষ রায়ের মসৃণ সিনেম্যাটোগ্রাফি, রাজা নারায়ণ দেবের একটু ভিন্ন ধাঁচের আবহ নিশ্চিতভাবেই ছবিকে অন্য চেহারা এনে দিয়েছে। স্বস্তিকা (Swastika Mukherjee) ঘরোয়া পরিবেষ্টন তৈরিতে সুন্দর সহযোগিতা করেছেন। তাঁর অভিনয় চোখ কাড়ে। শাশ্বত (Saswata Chatterjee) কিন্তু প্রায় একই ধাঁচের কাজ করে চলেছেন, এবার নিজেকে একটু পালটান প্লিজ!
আসলে বাংলা সিনেমা এখন শুধুই বিনোদিনী। দায়দায়িত্বের ঝুঁকি নিতেই চায় না, পাছে কোনো রাজনৈতিক স্ট্যাম্প পরে যায়! আর এখানেই পিছিয়ে পড়ছে আজকের বাংলা সিনেমা, অন্তত মালয়ালম ও মারাঠি সিনেমার কাছে। ভুলে যাচ্ছি(ইচ্ছেকরেই) আমাদের অতীত ঐতিহ্য, পুরনো দিনগুলো! থ্রিলার বা প্রেম কিংবা নিছক ব্যবসার ফাঁদেই আটকে গেছে বাংলা সিনেমা। এবছরের পুজোয় মুক্তি পাওয়া সব ক’টা ছবিই একই ঘরানার।