shono
Advertisement

Breaking News

Binisutoy Movie Review: ঋত্বিক-জয়া জুটির এ ছবি স্বপ্ন আর বাস্তবের পার্থক্য বোঝায়

এ যেন সাহিত্যের সঙ্গে সিনেমার সহবাস।
Posted: 08:04 AM Aug 20, 2021Updated: 01:00 PM Aug 20, 2021

নির্মল ধর: বেশ কিছুদিন ধরেই পরিচালক অতনু ঘোষ (Atanu Ghosh) সিনেমার ব্যকরণ, যতিচিহ্ন, ফর্ম, এককথায় ফিল্মের ভাষা নিয়ে টুকটাক পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর ‘রবিবার’, ‘রূপকথা নয়’ বা ‘অ্যাবি সেন’ ছবির কিছু কিছু দৃশ্য বিন্যাসে, দৃশ্যের শৈল্পিক উপস্থাপনায় মনে হচ্ছিল তিনি সাহিত্যের সঙ্গে সিনেমার সহবাস করানোর প্রয়াস নিচ্ছেন। এবার নতুন ছবি ‘বিনিসুতোয়’ (Binisutoy: Without Strings) সেই মনে হওয়াটা প্রায় নিশ্চিত করে দিল। সাহিত্যের বুননের সঙ্গে সিনেমার বুননকেও যে সুন্দর মিলিয়ে দেওয়া যায়, তা এ ছবি না দেখলে এতটা স্পষ্টভাবে বোঝা যেত না।

Advertisement

মানুষের জীবন ছোট, বড়, মাঝারি গল্পের ইঁট দিয়ে তৈরি। সেখানে কল্পনার বালি সিমেন্ট লাগাতে হয় সঠিক পরিমাণে। সেই কল্পনা যে কখন কোন চেহারা নেবে সেটা মানুষ নিজেই জানে না। অবচেতনে থাকে, কল্পনায় সে নানা আকার আকৃতি নেয়, কখনওবা নেয় না। সেই কল্পনার গল্পগাছা নিয়েই মানুষের জীবন প্রবাহ, চলমান জীবন! ‘বিনিসুতোয়’ ঋত্বিকের চরিত্র তেমনই এক কল্পনাবিলাসী মানুষ। সে স্ত্রী চান্দ্রেয়ী ও কিশোর সন্তানকে নিয়ে সুখী নিজের মত। ছেলে ভূগোল-বিজ্ঞান-অঙ্ক তেমন ভালবাসে না, ভালবাসে সাহিত্য-গল্পো। ঠিক বাবার মতোই। মা চায় ছেলেকে ভাল বোর্ডিং স্কুলে পাঠাতে। জয়া এবং ঋত্বিকের চরিত্র তাদের আপাত সুখী জীবনের বাইরে হৃদয়ের শান্তি খুঁজতেই গল্প সাজানো বা তৈরির চেষ্টা করে চলে। আগেও করেছে।

 

ঋত্বিকের পাশাপাশি এ ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় জয়া আহসান (Jaya Ahsan), এক বড় কোম্পানির অন্যতম অংশীদার। কিন্তু কোথায় যেন তাঁর মধ্যেও লুকিয়ে আছে একজন গায়িকা ও মধ্যবিত্ত শিক্ষিকা। এঁরা দু’জনেই নিজেদের ভাবনা নিয়ে খেলতে চান। ছবির শুরুতেই সেই খেলা দেখান পরিচালক। কোনও চ্যানেলে কাজের জন্য অডিশন দিয়ে পাশ করলেই পঞ্চাশ হাজার টাকা পাওয়া যাবে। সেখানেই যায় দুই চরিত্র। দু’জনেরই দরকার টাকা। এটা পরিচালকের শুধু ‘আলিবাই’। আসল উদ্দেশ্য ঋত্বিক ও জয়াকে মুখোমুখি করিয়ে দিয়ে দু’জনের বানানো জীবনের গল্পকে এক সমান্তরাল লাইনে নিয়ে আসা। সেই সাজানো গল্পই তাঁদের আত্মতৃপ্তি। মায়ের মৃত্যুদিনে যখন আবার আচমকাই জয়া ওরফে শ্রাবণী বড়ুয়া আর কাজল সরকার ওরফে ঋত্বিক একই জায়গায় এসে দাঁড়ায়, তখন বুঝতে অসুবিধে হয় না আবার এক নতুন গল্পের শুরু হল।

[আরও পড়ুন: দর্শক তৈরি, হল তৈরি নয়! ‘Bell Bottom’ ছবির প্রথম শোতেই Inox Swabhumi-তে প্রযুক্তি বিভ্রাট]

গল্পটা ফিজিক্যালি একদিনের, কিন্তু সেটা একাধিক দিনেরও হতে পারে। হয়ও তাই। পরিচয় লুকিয়ে সারাটা দিন দু’জনেই অভিনয় করে চলে। সেই অভিনয়ের মধ্যে অবশ্যই বাস্তব ঘটনাও ঘটে, জয়ার দুর্ঘটনা ঘটলে তাঁকে নিয়ে ডাক্তারখানা নিয়ে যাওয়া, ট্রিটমেন্ট করানো, এগুলো বাস্তব সত্য, আবার হয়তো সত্য নাও হতে পারে! সবটাই দু’জনের কল্পনা! জয়ার মেয়ের দামী ফুলদানি ভেঙে যাওয়া এবং প্রেমিকার জন্য ঋত্বিকের চরিত্রের পঞ্চাশ হাজার টাকা জোগাড় করা তাগিদ – এগুলো অজুহাত মাত্র। সত্যি নয়। সবটাই গল্প তৈরির এক খেলা, যে খেলা নিয়ে ঋত্বিকের চরিত্র বাঁচতে চায়, সংসার থেকে সরে থাকতে পারে। জয়া চরিত্রও পারিবারিক ব্যবসা সামলাতে গিয়ে হাঁসফাঁস করে। কাজ হারানো ভাইয়ের প্রতি সমবেদনা বোধ করে, ভাইয়ের কাছে যায়।

দু’জনে যখন দু’জনেরই খেলার পরিকল্পনাটা বুঝতে পারে, তখন কে কার পরিচয় লুকোবে বা প্রকাশ করবে সেটা অস্পষ্ট রাখেন পরিচালক। হ্যাঁ, ঠিকই করেছেন তিনি। মানুষ বাস্তবে বাঁচার জন্য সর্বদাই নিজের মধ্যে নিজের মনের মত গল্প বুনে চলে। যে গল্পে সে তাঁর নিজের ইচ্ছেমতো বাঁচবে, নিজের শর্তে। অথচ বাস্তবে সেটা হয়ই না। জয়া হয়তো চেয়েছিল শান্ত-স্নিগ্ধ কোনও এক গ্রামের স্কুলে শিক্ষিকার জীবন, রবীন্দ্রনাথের গান তাঁর জীবনপ্রদীপ। কিন্তু বাস্তবটা একেবারেই বিপরীত।

এই দু’জন মানুষকে নিয়ে গল্পের খেলার মধ্য দিয়ে পরিচালক জীবনের অপ্রাপ্তির অশান্তি ও দুঃখের গায়ে আদরের হাত বুলিয়েছেন এবং অসাধারণ এক সমাপ্তি ঘটিয়েছেন। বলতে পারি খানিকটা জাদু বাস্তবের ঢংয়ে। কেমন জাদুবাস্তব – তা ছবি দেখলেই উপলব্ধি করা যাবে। ওই দৃশ্যটার জন্যই অতনু ঘোষকে তিন নয় তিরিশ সাবাশি দেওয়া যায়। জয়ার কণ্ঠে রবীন্দ্র গানের ব্যবহার অনবদ্য। তখন ঋত্বিক নির্বাক, হতবাকও। আর জয়া যেন গল্পের দ্বিতীয় দানে জিতে গিয়েছেন।

পুরো ছবির কাঠামোতেই অতনু গল্পের ভাঙ্গা ও জোড়ার কাজটি করেছেন নিপুণ কাঁথা শিল্পীর মতো। অতীত ও বর্তমান কোথাও মিলেছে বা মেলেনি – কিন্তু কাজটি কি মসৃণ ভঙ্গিতে করেছেন অতনু! আপু প্রভাকরের চিত্রগ্রহণ ও আলোআঁধারি ধোঁয়াশা মিশিয়ে পুরো ছবির শরীরে পরাবাস্তবের চাদর জড়িয়ে দিয়েছে। অভিনয়ে ঋত্বিক (Ritwick Chakraborty) এবং জয়া দু’জনেই চরিত্রের ডুয়ালিটি সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। অভিনয় বরং করেননি বলাই ভাল। ‘বিনিসুতোয়’ এমন এক সম্পর্কের কথা বলে, যা বাস্তব-পরাবাস্তবের মিশ্রণ।

[আরও পড়ুন: Mukhosh Film Review: জটিল রহস্যের গল্পে দুই অনির্বাণ, পরিচালক বিরসার তুরুপের তাস কে?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement