অর্ণব আইচ: লাভ বাইট।
কামড়ের মধ্যে ভালবাসা রয়েছে কি না, সেটা এখন বড় প্রশ্ন নয়। বরং এই কামড় যে সঞ্জয় রায়ের, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে এবার তারই দাঁতের ফরেনসিক পরীক্ষা করছে সিবিআই। এমনকী, সঞ্জয় রায়ের দাঁতে কত জোর, সেই প্রমাণ মিলবে এই ফরেনসিকের ‘বাইট মার্ক অ্যানালিসিস’ পরীক্ষায়। আর জি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসক ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত কি সঞ্জয় রায়, না কি এই ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত, সেই ব্যাপারে সিবিআই নিশ্চিত হতে চায়। নির্যাতিতার দেহে কামড়ের যে বিশেষ চিহ্নটি দেখা গিয়েছে, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে সেটিকে উল্লেখ করা আছে ‘লাভ বাইট’ বলেই। সেই কামড়টি সঞ্জয়ের কি না, সেই প্রমাণ পেতেই এবার সিবিআইয়ের নজর নির্যাতিতার শরীরে ‘লাভ বাইট’-এর চিহ্ন ও সঞ্জয়ের দাঁতের উপর।
বুধবার সিবিআইয়ের একটি টিম ল্যাপটপ ও নথিপত্র নিয়ে শিয়ালদহ আদালতে যায়। প্রেসিডেন্সি জেলে গিয়ে সঞ্জয় রায়ের দাঁতের ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য শিয়ালদহ আদালতের বিচারকের কাছে আবেদন জানান সিবিআই আধিকারিকরা। আদালত আবেদন মঞ্জুর করার পর সিবিআইয়ের টিম এদিন বিকেলেই প্রেসিডেন্সি জেলে গিয়ে কারাকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। রাতেই সঞ্জয়কে বসিয়ে পরীক্ষা করেন ফরেনসিক দন্ত চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা। দাঁত ও চোয়ালের রেডিওগ্রাফ করেন। দাঁতের গড়ন ও ধরন পরীক্ষা করা হয়।
[আরও পড়ুন: ‘বিচার চাই’, জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপে এবার কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি সিনিয়রদের]
সিবিআই সূত্র জানিয়েছে, আর জি করে নির্যাতিতার ময়নাতদন্তে দেখা যায়, দেহের উপরিভাগের ১৬টি আঘাত রয়েছে। এর মধ্যে দশটি আঘাতই মুখ ও গলা বা ঘাড়ের বিভিন্ন জায়গায়। দুটি আঘাত যৌনাঙ্গে। বাকি চারটি আঘাত হাত ও পায়ের বিভিন্ন অংশে। তরুণী চিকিৎসকের দুই গাল, উপর ও নিচের ঠোঁটে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্নের কথা উল্লেখ করা আছে। সেই আঘাতগুলি মারধর ছাড়াও কামড়ানোর জন্যও হতে পারে ধরে ধারণা সিবিআইয়ের। এ ছাড়াও নিচের চোয়ালে থুতনির কাছে একটি ‘এক ইঞ্চি বাই আধ ইঞ্চি’ ও গলার বাঁদিকে কয়েকটি চিহ্ন যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য বলেই ধারণা সিবিআইয়ের। সেগুলির মধ্যে কোন চিহ্নটি ধর্ষণ চলাকালীন ও কোনটি তার আগে মারধরের চিহ্ন, সেই ব্যাপারেও সিবিআই নিশ্চিত হতে চায়।
সিবিআই জানিয়েছে, এ ছাড়াও ময়নাতদন্তেরর রিপোর্টে উল্লেখ করা নবম লাইনে বলা আছে, চোয়ালের ডানদিকের অংশে ও তার কাছেই গলার উপরদিকের অংশে একটি ‘দুই ইঞ্চি বাই দুই ইঞ্চি’ দাগের চিহ্ন রয়েছে। সেই চিহ্নটিকে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে ‘সাকিং মার্ক/লাভ বাইট মার্ক’ বলে স্পষ্ট উল্লেখ করা আছে। প্রাথমিকভাবে ডিএনএ পরীক্ষায় সিবিআই জানতে পেরেছে যে, সঞ্জয় রায় ধর্ষণের ঘটনায় একমাত্র অভিযুক্ত। তাই কামড় সঞ্জয়ের কি না, তা যাচাই করতে চায় সিবিআই। এদিকে, সূত্রের খবর অনুযায়ী, নির্যাতিতার দাঁতে ধাতব ‘ডেন্টাল ব্রেস’ ছিল। ময়নাতদন্তের সময় সেটি উদ্ধার করে আলাদাভাবে রেখে দেওয়া হয়। সিবিআই সেটিকেও ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠাতে চায়।
আরও কয়েকটি দেহের অংশও এইমসে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
[আরও পড়ুন: আর জি করে দুর্নীতির তদন্তে এবার অ্যাকশন ইডির, সাতসকালে শহরের তিন প্রান্তে হানা]
যে অংশগুলিতে কামড়ের দাগ রয়েছে বলে ধারণা, সেই অংশের ছবি ও ভিডিও সিবিআইয়ের হাতে রয়েছে। এভাবে ‘বাইট মার্ক অ্যানালিসিস’ করা ছাড়াও সঞ্জয়ের কামড়ে কত জোর রয়েছে, যে অংশে কামড়ের চিহ্ন মিলেছে, সেটি সঞ্জয়ের হতে পারে কি না, সেই পরীক্ষা করা হচ্ছে। ১৭ সেপ্টেম্বর ফরেনসিক দন্ত চিকিৎসকদের সেই রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে সিবিআই।