স্টাফ রিপোর্টার: RG Kar কাণ্ডে নির্যাতিতার দেহ ময়নাতদন্তের জন্য অন্য কোনও হাসপাতালে পাঠাতে রাজি হননি প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। এমনই অভিযোগের আঙুল তুলেছে সিবিআই। সেই সূত্র ধরেই মঙ্গলবার, পঞ্চম দিনেও সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সন্দীপ ঘোষকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করেন সিবিআই আধিকারিকরা। একইসঙ্গে কে গত ৯ আগস্ট সকালে সন্দীপ ঘোষ বা আর জি কর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রথম এই ঘটনাটির কথা জানান, তাঁকে খুঁজছে সিবিআই।
মঙ্গলবার সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে কলকাতা পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইন্সপেক্টর অনুপ দত্তকে তলব করে সিবিআই। আর জি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসক খুন ও ধর্ষণের অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এই এএসআই। এদিন সিজিও কমপ্লেক্সে আসামাত্রই সঞ্জয় সংক্রান্ত প্রশ্ন শুনেই সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলার জন্য রীতিমতো দৌড়ে ভিতরে ঢুকে যান অনুপ। সিবিআই জেনেছে, কলকাতা পুলিশ ওয়েলফেয়ার কমিটির নেতা বলে পরিচিত এই এএসআইয়ের সঙ্গে তিনদিনের জন্য মেদিনীপুরের সালুয়ায় গিয়েছিল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়। তারা ফিরে আসার পর সঞ্জয় আর জি করে যায়। এর পরের ভোররাতেই ঘটে তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনা।
সিবিআই চতুর্থ ব্যাটালিয়নে গিয়ে জানতে পারে যে, ব্যারাকে অনুপের ঘরেই তাঁর সঙ্গে থাকত সঞ্জয়। সিভিক ভলান্টিয়ার হওয়া সত্ত্বেও অনুপ তাঁকে নিজের কাছে রাখতেন। ঘটনার পর সকালে সঞ্জয় সকালেই অনুপকে ফোন করে। অনুপের দাবি, সঞ্জয় তাঁকে জানায় যে, সে ব্যারাকে আসছে। কিন্তু সকালে তাঁকে সঞ্জয় তার কুকীর্তির কথা অনুপকে জানিয়েছিল কি না, ফোনে কী কী কথা হয়েছিল, সেই তথ্যই অনুপের কাছ থেকে সিবিআই জানতে চায়। নারকীয় ঘটনাটি ঘটিয়ে মদ্যপ হয়ে আসার পর তার অভিব্যক্তি কী ছিল, সেই তথ্য জানার চেষ্টা করছে সিবিআই।
[আরও পড়ুন: বিয়ের দুমাসের মধ্যেই ফ্ল্যাট বেচার বিজ্ঞাপন! হল কী সোনাক্ষীর?]
আধিকারিকদের কাছে খবর, নিজেকে ব্যাটালিয়নে অত্যন্ত ক্ষমতাবান বলে পরিচয় দিতেন অনুপ। এদিকে, এদিন আরও চারজন চিকিৎসক, যাঁরা মহিলা চিকিৎসকের সঙ্গে রাতে ডিনার করেছিলেন, তাঁদের সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদ করে। অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের বক্তব্যে বহু অসঙ্গতি রয়েছে বলে দাবি সিবিআইয়ের। সেই কারণে সঞ্জয়কে লাই ডিটেক্টরের সামনে বসিয়ে পলিগ্রাফ পরীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত নেয় সিবিআই। তার জন্য এদিনই সঞ্জয়কে শিয়ালদহ আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে পেশ করে তার যে এই পরীক্ষায় কোনও আপত্তি নেই, তা নথিভুক্ত করার কথা ছিল।
কিন্তু এদিন দুপুরে সিবিআই শিয়ালদহ আদালতে এসিজেএমের এজলাসে গিয়ে আবেদন জানিয়ে বলে, আদালতে নিয়ে আসা-যাওয়ার সময় সঞ্জয়ের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। তার জন্য এদিন তাকে আর পেশ করা হয়নি। তবে বুধবার বা বৃহস্পতিবারও তাকে এই কারণে আদালতে পেশ করা হতে পারে। তবে শুক্রবার তার সিবিআই হেফাজত শেষ হচ্ছে। তাই সেদিন তাকে পেশ করতেই হবে। এদিকে, আদালত সূত্রের খবর, সম্প্রতি শিয়ালদহ আদালতের এসিজেএমকে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাঁকে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় বদলি করা হয়েছে। উল্লেখ্য, গ্রেপ্তারির পর এই আদালতেই সঞ্জয় রায়কে পেশ করা হয়েছিল।
এদিকে, সন্দীপ ঘোষকে সিবিআই প্রশ্ন করে, তিনি নির্যাতিতার দেহের ময়নাতদন্ত অন্য হাসপাতালে পাঠানোর জন্য সুপারিশ করেননি কেন? যেহেতু আর জি কর হাসপাতালেই তাঁর দেহ উদ্ধার হয়েছে, তাই একই হাসপাতালে দেহের ময়নাতদন্ত হওয়ায় নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ময়নাতদন্তের দায়িত্বে থাকা কয়েকজন চিকিৎসককে ইতিমধ্যেই জেরা করেছে সিবিআই। ময়নাতদন্তে কোনও প্রভাব খাটানো হয়েছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। এদিকে, আর জি কর হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশকর্মী ও আধিকারিকদের কাছে রাতে হাসপাতালে টহল দেওয়ার জন্য নির্দেশিকার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হয়েছে। ঘটনার রাতে টহল ও নজরদারির ক্ষেত্রে পুলিশের কোনও গাফিলতি ছিল কি না, তা জানার চেষ্টা করছে সিবিআই।
ধৃত সঞ্জয় রায়ের ঘনিষ্ঠ কলকাতা পুলিশের এএসআই অনুপ দত্তকে তলব করে সিবিআই।
সঞ্জয় তার কুকীর্তির কথা অনুপকে জানিয়েছিল কি না, ফোনে কী কী কথা হয়েছিল, সেই তথ্যই অনুপের কাছ থেকে সিবিআই জানতে চায়।