সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: 'মেয়েরা রাত দখল করো: দ্য নাইট ইজ আওয়ারস'। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ঘটনার (RG Kar Doctor Death) প্রতিবাদেই এই অভিযানের ডাক দেওয়া হয়েছে। ১৪ আগস্টের রাতে মহিলাদের ঘর ছেড়ে রাস্তায় বের হওয়ার ডাক দেওয়া হয়েছে। সোশাল মিডিয়ার পাশাপাশি হোয়াটসঅ্যাপেও এই বার্তা দিয়ে পোস্টার শেয়ার করা হচ্ছে। তা ফেসবুকে শেয়ার করেই এক কাল্পনিক 'মেয়েবেলা'র কথা লিখেছেন অভিনেতা তথা পরিচালক তথাগত মুখোপাধ্যায়।
নিজের পোস্টে তথাগত লেখেন, "এটা যেন সত্যি হয়... সাঁ সাঁ শব্দ করে সাইলেন্সারহীন যে বাইকটা পাশ দিয়ে বেরিয়ে গেল সেটার চালক একজন মহিলা। যে দু-তিনজন বন্ধু গালিগালাজ করতে করতে হালকা বেসামাল হয়ে পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে তারাও সবাই মেয়ে। পানশালায় ছেলেটির পোল ডান্স দেখে যারা চিৎকার করছে, সিটি দিচ্ছে তাদের মধ্যে একজনও ছেলে নেই। অন্ধকার গলির মুখে জটলা করে যে কজন মদ খেয়ে হল্লা করছে, তারা সবাই মেয়ে। লরি থামিয়ে ঘুষের দশ টাকা নিচ্ছে একজন মহিলা কন্সটেবল। ফুটপাতে শুয়ে থাকা মেয়েটা একটা খারাপ স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে যাওয়ায় একটা বিড়ি ধরাল। সিনেমা শেষ হতে অনেক রাত হয়েছে তাই প্রেমিককে বাড়ি পৌঁছতে এসেছে প্রেমিকা। যে চারজন আজ রাতে ডাকাতি করতে বেরিয়েছে কালো মাঙ্কি ক্যাপ পড়ে তারা সবাই মেয়ে।"
[আরও পড়ুন: ‘পুরুষ মানেই সম্ভাব্য ধর্ষক…’, অভিনেত্রী গুলশানারা খাতুনের মন্তব্যে তোলপাড় সোশাল মিডিয়া ]
এর পরই তারকার সংযোজন, "স্যানিটারি ন্যাপকিন কুচিয়ে ছিঁড়ে জানলা দিয়ে ওড়াচ্ছে ছোট দুই বোন, হাওয়ায় ভাসছে, ছড়িয়ে পড়ছে শহরের দিকে। ছেলের ফিরতে রাত হয়ছে তাই মা রাস্তার মোড় অবধি খালি পায়চারি করছে। তিনটে মহিলা পুলিশের আজ সারারাত ডিউটি পড়েছে সোনাগাছিতে, পরশু একটা ছেলে বেশ্যা খুন হয়েছে ওখানে। একটা মেয়ের গলা পাচ্ছি কারুর নাম ধরে রাস্তায় খিস্তি দিচ্ছে। আর আমি ঘরে লুকিয়ে আছি, যেন সিগারেট অবধি কিনতে বেরোতে না হয়। আমি তো কাপুরুষ, ভীতু, ধান্দাবাজ, ধর্ষকদের প্রতিনিধি। আমায় যেন রাতে কোথাও বেরোতে না হয়। কারণ রাত এখন শুধু মেয়েদের। শহরে মধ্যরাত শাসন করে শুধু মেয়েরা।"
কেন এই পোস্ট? এই প্রশ্নের উত্তরে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে তথাগত বলেন, "কোথাও গিয়ে মেয়েরা মেয়েদের ছোট করতে হবে এই ধারণাটা ঢুকিয়ে দেয়। কোনও পুরুষ ও মহিলা যদি একটি রেস্তরাঁয় বসে খায় আর সেখানে যদি কোনও মেয়ে খোলামেলা পোশাক পরে যায় এবং পুরুষটি যদি ওই মেয়ের দিকে তাকায় তাহলে দেখবে মহিলা মেয়েটিকেই গালমন্দ করে। স্লাট শেমিংও হয়। কিংবা দুজনের সম্পর্কে যদি কোনও তৃতীয় ব্যক্তি ঢুকে পড়ে তাহলে মেয়েদের দোষই আগে ধরা হয়। আমাদের মারা ছোটবেলা থেকেই কে কী পোশাক পরল, কে হাফপ্যান্ট পরল কে ফুলপ্যান্ট পরল, কার কাঁধের কতটা দেখা যাচ্ছে, কার ব্লাউজের ডিপ কাট বেশি, এগুলো নিয়ে কিন্তু মহিলারাই আলোচনা করে বেশি অধিকাংশ ক্ষেত্রে। যে কারণে ছেলেদের মাথাতেও একটা ধারণা বোধহয় ঢুকে যায় যে মহিলাদের হয়তো এভাবেই পোশাকের বিচারে দেখতে হয়। তাই মেয়েদেরকে কোথাও গিয়ে মেয়েদেরকে সম্মান করতে হবে। পুরুষ ও মহিলা আলাদা স্পিসিস, তাঁদের আলাদা ভালো ও মন্দও রয়েছে এবং পুরুষরা সবসময় চাইবে মহিলাদের ডমিনেট করতে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় মহিলারা সবচেয়ে বেশি মহিলাদের ডমিনেট করতে চায় এবং সেটা পুরুষের মাধ্যম দিয়ে। এটা প্রাথমিকভাবে কাটানো উচিত। তার পর সমানাধিকার ও বাকি সবটা।"