সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নারী নিরাপত্তায় রাজ্য সরকারের আনা প্রকল্প 'রাত্তিরের সাথী'র বিজ্ঞপ্তি সংশোধনের নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের। প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, "কীভাবে বলেন, রাতে মহিলারা কাজ করতে পারবেন না?" রাজ্যের প্রতিটি সরকারি হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্ব থেকে সিভিক ভলান্টিয়ারদের সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে জোরাল সওয়াল চিকিৎসকদের যৌথমঞ্চের আইনজীবী করুণা নন্দীর। একই দাবিতে সওয়াল জুনিয়র চিকিৎসকদের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংয়ের।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের ডিভিশন বেঞ্চে চলছে আর জি করের পিজিটি ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুন মামলার শুনানি। এদিনের শুনানিতে চিকিৎসকদের যৌথমঞ্চের আইনজীবী করুণা নন্দী জানান,"নিরাপত্তার অভাববোধে এখনও কাজে ফিরছেন না আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরা। তবে তা সত্ত্বেও রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ভেঙে পড়েনি। কারণ, রোগীদের চিকিৎসার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন সিনিয়র চিকিৎসকরা। এর পরই আদালতে নারী নিরাপত্তার স্বার্থে রাজ্য সরকারের প্রকল্প 'রাত্তিরের সাথী'র প্রসঙ্গ তোলেন আইনজীবী নন্দী। তিনি বলেন, "বেসরকারি সংস্থা থেকে ১ হাজার ৫১৪ জন নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হচ্ছে। তা মেনে নেওয়া যায় না। যেহেতু ধৃত অভিযুক্ত একজন সিভিক ভলান্টিয়ার, তাই অবিলম্বে সরানো হোক। সিভিকদের নিষিদ্ধ করে পুলিশকর্মীদের নিরাপত্তার স্বার্থে মোতায়েন করা হোক।"
এর পর 'রাত্তিরের সাথী' প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন রাজ্যের আইনজীবী। তিনি বলেন, "মহিলা চিকিৎসকদের ১২ ঘণ্টার বেশি ডিউটি না দেওয়া, নাইট শিফট না দেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে।" একথা শুনে প্রায় বিরক্তির সুরে রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বলকে উদ্দেশ্য করে প্রধান বিচারপতি বলেন, "কীভাবে বলেন রাতে মহিলারা কাজ করতে পারবেন না? মহিলা চিকিৎসকদের কেন এভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন? তাঁরা এই আলাদা ছাড় চান না। মহিলারা সমস্ত শিফটে কাজ করতে প্রস্তুত। কপিল সিব্বল এই বিষয়টিতে দেখুন। আপনাদের উপযুক্ত নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করতেই হবে।" এর পরই 'রাত্তিরের সাথী'র বিজ্ঞপ্তি সংশোধনের নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি।
রাজ্যের তরফে আদালতে জানানো হয়েছে, হাসপাতালে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য রেস্ট রুম তৈরি হচ্ছে। ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে। একই সময়ের মধ্যে সিসিটিভি ক্যামেরাও বসানো হবে একাধিক। সম্পূর্ণ হবে অতিরিক্ত শৌচাগারের কাজও। সিব্বলকে আদালতের প্রশ্ন, ৪১৭ টি সিসিটিভি বসানোর কথা। তবে এখনও পর্যন্ত বসেছে মাত্র ৩৭ টি। জবাবে সিব্বল জানান, অতি দ্রুত কাজ হবে। তবে নিরাপত্তার দায়িত্বে কেন চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ করা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে আদালত। প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, "৭ দিনের ট্রেনিংয়ে কাউকে নিয়োগ করা হলে নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত হবে? কীভাবে চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের উপর ভরসা করে সরকার চলতে পারে?" জেলাশাসক-সহ পুলিশ প্রশাসনকে হাসপাতালের নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের। নিরাপত্তা সংক্রান্ত সওয়াল জবাব চলাকালীন প্রধান বিচারপতি স্বাস্থ্যসচিবকে প্রশ্ন করেন, "কথা হচ্ছে ১৮ থেকে ২৩ বছরের ছেলেমেয়েদের নিয়ে। সকলে আতঙ্কিত। যে কারও সঙ্গে এই ঘটনা ঘটতে পারে। মহিলাদের রেস্টরুমে কেন বায়োমেট্রিক নেই?" নিরাপত্তার স্বার্থে সমস্ত মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল, সিনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে জেলাশাসককে কথা বলার নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের। আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে সমস্ত হাসপাতালে সিসিটিভি বসানোর চূড়ান্ত সময়সীমাও বেঁধে দেন প্রধান বিচারপতি। এছাড়া সরকারি হাসপাতালের সংরক্ষিত জায়গায় বায়োমেট্রিক হাজিরা চালুর উপরেও জোর দেয় সুপ্রিম কোর্ট।