স্টাফ রিপোর্টার: অভিযুক্তর বক্তব্যে অসঙ্গতি। মেলানো যাচ্ছে না বহু তথ্য। প্রচণ্ড মদ্যপান করার ফলে অনেক কিছুই মনে নেই বলে সিবিআইয়ের কাছে দাবি করছে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়। তাই আর জি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসক খুন ও ধর্ষণে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে পলিগ্রাফ পরীক্ষা করানোর ব্যাপারেও আলোচনা করছেন সিবিআই আধিকারিকরা।
তদন্ত শুরু করার পর থেকে অভিযুক্ত কলকাতা পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে টানা জেরা করছে সিবিআই। এই বীভৎস ও নারকীয় ঘটনাটির পিছনে সঞ্জয় ছাড়াও একাধিক ব্যক্তি রয়েছে কি না, তদন্তের ক্ষেত্রে সেই ব্যাপারেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ঘটনার সময় কেউ উপস্থিত না থাকলেও পিছন থেকে তাকে কেউ মদত জুগিয়েছে কি না, তা-ও তদন্তসাপেক্ষ। কিন্তু সিবিআইয়ের মতে, জেরার মুখে সঞ্জয় বেশ কিছু তথ্য চেপে যাচ্ছে। জেরায় সম্পূর্ণ সহযোগিতা করছে না সঞ্জয়। তার বয়ানেও রয়েছে বহু অসঙ্গতি। ঘটনার আগে ভোররাতে কেন সঞ্জয় ট্রমা কেয়ারে ভর্তি এক রোগীর দেখভালের নাম করে অত্যন্ত মদ্যপ অবস্থায় আর জি কর হাসপাতালে গেল, তা নিয়ে তার বক্তব্য অনেক সময়ই মিলছে না। বরং বেশি প্রশ্ন করলেই সঞ্জয় সিবিআইয়ের কাছে দাবি করছে, যেহেতু সে সন্ধ্যার পর থেকে একাধিক যৌনপল্লিতে মদ্যপান করেছিল, তাই তার অনেক কিছুই মনে নেই।
[আরও পড়ুন: লালবাজারের জোড়া তলব, গ্রেপ্তারির আশঙ্কায় হাই কোর্টের দ্বারস্থ সুখেন্দুশেখর রায়]
উত্তর কলকাতার সোনাগাছি এলাকা থেকে সে আর জি কর হাসপাতালে যায়। তখন ভোর সাড়ে তিনটে পেরিয়ে গিয়েছে। এর পর সে ঘুরে বেড়াতে থাকে আর জি কর হাসপাতালের বিভিন্ন তলায়। এই ব্যাপারে তাকে প্রশ্ন করলেও সে দাবি করতে থাকে যে, প্রচণ্ড মদ্যপান করেছিল বলে তার বিশেষ কিছুই মনে নেই। অথচ চারতলায় গিয়ে সে সরাসরি পৌঁছে যায় সেমিনার হলে, যেখানে তরুণী চিকিৎসক ঘুমোচ্ছিলেন। সূত্রের খবর অনুযায়ী, সঞ্জয়কে সিবিআই আধিকারিকরা পর পর প্রশ্ন করেন যে, কেউ কি তাকে রাতে আর জি করে যেতে বলেছিল? সেমিনার হলে নির্যাতিতা যে ঘুমোচ্ছেন, সেই তথ্য কি কেউ তাঁকে দিয়েছিল? কেন সে রাতে সেই সেমিনার হলেই গেল? সে কি নির্যাতিতাকে আগে থেকেই চিনত? কোনওভাবে তাঁকে কি সে টার্গেট করেছিল? সে নির্যাতিতাকে শুধু কি ঘুমন্ত অবস্থায় দেখেছিল, না কি আগেই তাঁর উপর কোনও অত্যাচার হয়েছে, এমন অবস্থায় দেখেছিল সে?
সিবিআইয়ের সূত্র জানিয়েছে, এই প্রশ্নগুলিতে সঞ্জয়ের উত্তরে বহু অসঙ্গতি রয়েছে। একাধিকবার এই ধরনের বেশ কিছু প্রশ্ন তাকে করা হয়। কিন্তু উত্তরে বহু অমিল রয়েছে। সেই কারণেই সিবিআই আধিকারিকরা তাকে ‘লাই ডিটেক্টর’ যন্ত্রের সামনে বসিয়ে জেরা করা যায় কি না, তা নিয়ে আলোচনা করছেন। জানা গিয়েছে, আগে অভিযুক্তকে পলিগ্রাফ পরীক্ষার জন্য ‘লাই ডিটেক্টর’ যন্ত্রের সামনে বসাতে গেলে দিল্লি নিয়ে যেতে হত। কিন্তু এখন কলকাতায় কেন্দ্রীয় ফরেনসিক পরীক্ষাগারে রয়েছে ‘লাই ডিটেক্টর’ যন্ত্র। প্রয়োজনে এই যন্ত্রের সামনে বসিয়ে সিবিআই অভিযুক্তকে প্রশ্ন করতে পারে। উত্তর দেওয়ার সময় তার রক্তচাপ, নাড়ির গতি, শ্বাস, ত্বক পরিবাহিতা মেপে দেখেন চিকিৎসকরা। সেই অনুযায়ী সে সত্যি কথা বলছে কি না, তা নির্ধারণ করা যায়। সিবিআইয়ের দাবি, গত কয়েক বছরে সারা দেশে বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্তদের পলিগ্রাফ পরীক্ষা করিয়ে ফল মিলেছে। তাই সঞ্জয়ের পলিগ্রাফ পরীক্ষা করানো নিয়েও আলোচনা করছে সিবিআই।