অর্ণব আইচ: আর জি কর হাসপাতালের মর্গ থেকে বেআইনিভাবে দেহ পাঠানো হয় চিকিৎসকদের ওয়ার্কশপের জন্য। আর জি করে দুর্নীতির ঘটনায় সিবিআইয়ের হাতে এসেছে এই অভিযোগ। এই ঘটনাটির পিছনেও আর জি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে সিবিআইয়ের হাতে। ইতিমধ্যে এই হাসপাতালের মর্গ থেকে দেহ ও দেহের অংশ বাইরে পাচারের মতো অভিযোগ পেয়েছে সিবিআই। এই দুর্নীতির পিছনেও বিপুল টাকার লেনদেন হয় বলে অভিযোগ সিবিআইয়ের। তারই ভিত্তিতে আধিকারিকরা তদন্ত করছেন।
সিবিআইয়ের সূত্র জানিয়েছে, ২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর, আর জি কর হাসপাতালের(RG Kar Hospital) তৎকালীন ইএনটি বিভাগের প্রধান প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে চিঠি লিখে জানান যে, ইএনটি বিভাগের পক্ষ থেকে ডাক্তারি ছাত্রছাত্রীদের জন্য একটি ওয়ার্কশপ আয়োজন করা হয়েছে। এই ওয়ার্কশপের জন্য ৬টি দেহের প্রয়োজন। এই বিভাগটির পক্ষ থেকে সন্দীপ ঘোষকে অনুরোধ জানানো হয় যে, তিনি যেন ফরেনসিক বিভাগকে বলে এই দেহগুলির ব্যবস্থা করেন। এই আবেদনে রাজি হন সন্দীপ ঘোষ। যদিও শেষ পর্যন্ত ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ থেকে ৬টি দেহ পাঠানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু গত বছর ৫ জানুয়ারিতে মর্গ থেকে পাঁচটি দেহ ইএনটি বিভাগে পাঠায় ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগ।
সিবিআইয়ের কাছে আসা খবর অনুযায়ী, এই পাঁচটি দেহ ডাক্তারি ছাত্রছাত্রীদের ওয়ার্কশপের কাজে লাগে। কিন্তু এর পরই পুরো ঘটনাটির মোড় ঘোরে। দেহগুলি ইএনটি থেকে ফের ফরেনসিক বিভাগে অর্থাৎ মর্গে ফেরৎ পাঠানো হয়। মর্গে ওই দেহগুলির ময়নাতদন্ত হয়। ময়নাতদন্তের পর আর জি করের মর্গ থেকে কলকাতা পুলিশকে রিপোর্ট পাঠানো হয়। এরকমই একটি রিপোর্টের তথ্য এসেছে সিবিআইয়ের হাতে। সেখানে বলা হয়েছে যে, একটি দেহের নাকের উপর ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। ওই চিহ্নটি হয় মৃত্যুর পর। এর পরই সিবিআইয়ের অভিযোগ, কলকাতা অথবা তার আশপাশের এলাকায় কোনও অস্বাভাবিক মৃত্যুর পর দেহটি আর জি কর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
কিন্তু মর্গ থেকে দেহগুলি তাঁদের আত্মীয় বা পরিজনদের অনুমতি ছাড়াই কোনও ওয়ার্কশপ বা গবেষণার কাজে পাঠানো হত। সন্দীপ ঘোষ নিজের ক্ষমতাবলে তাঁরই ঘনিষ্ঠ ফরেনসিক বিভাগের প্রধানকে নির্দেশ দিতেন দেহগুলি অন্যান্য বিভাগে পাঠাতে। যেখানে সাধারণভাবে দেহ মর্গে আসার একদিনের মধ্যে তার ময়নাতদন্ত হয়, সেখানে সন্দীপের নির্দেশে দেহগুলির ময়নাতদন্ত হওয়ার আগেই চলে যেত অন্য বিভাগে। অনেক সময় এক সপ্তাহ পর তা মর্গে আসার পর তার ময়নাতদন্ত হত। মৃত ব্যক্তির পরিবার ও পরিজন দেহ চাইলে প্রভাব খাটিয়ে তাঁদের চুপ করিয়ে রাখা হত। এর ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘন হলেও সেদিকে সন্দীপ ঘোষ ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের কোনও নজর ছিল না বলে জানিয়েছে সিবিআই।