সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আর জি করে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-হত্যামামলায় একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়েছে রাজ্য। বৃহস্পতিবার, শীর্ষ আদালতে শুনানির দ্বিতীয় দিনও প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ ঘটনা সংক্রান্ত নানা প্রশ্ন করে আইনজীবীদের। বিশেষত তদন্ত রিপোর্ট সাপেক্ষে যে সব জায়গায় ফাঁকফোকর রয়েছে বলে মনে করছেন বিচারপতিরা, সেসব বিষয় স্পষ্ট হওয়ার জন্য জানতে চাওয়া হয়। তার মধ্যেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছিল, ঘটনা ঘটে যাওয়া এবং মামলা রুজু হওয়ার মধ্যেকার সময়ের ব্যবধান নিয়ে। ঘটনার দিন সকালে দেহ উদ্ধার হয়েছে আর একেবারে রাতে থানায় FIR নথিভুক্ত করা হল কেন? সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) এই প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিলেন রাজ্যের আইনজীবী সঞ্জয় বসু।
৯ আগস্ট, ঘটনার দিনের সময় সরণি দেখলে বোঝা যায়, সকাল ৯টা নাগাদ দেহ উদ্ধার হয় আর জি কর হাসপাতালের (RG Kar Hospital) সেমিনার রুম থেকে উদ্ধার হয় তরুণী চিকিৎসকের দেহ। প্রথমে টালা থানায় খবর পাঠানো হয়। জেনারেল ডায়েরি করা হয় সকাল ১০টা ১০ নাগাদ। এর পর সাড়ে ১০ টা নাগাদ পুলিশ পৌঁছয়। বেলা ১১টা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশের হোমিসাইড শাখা। দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে ঘটনাস্থলের ভিডিও তোলার জন্য যান ভিডিওগ্রাফার। দুপুর ১২টা ৪৪ মিনিটে চিকিৎসককে মৃত ঘোষণা করেন আর জি করের এমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার। দুপুর ১টা ৪৭ মিনিটে অস্বাভাবিক মৃত্যুর (UD) মামলা রুজু হয়। এতে বিচারপতিরা প্রশ্ন তুলেছেন, কীভাবে ময়নাতদন্তের আগে ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’ বলে দেওয়া হল? তা হলে ময়নাতদন্তের প্রয়োজন হল কেন?
[আরও পড়ুন: ‘প্রেম করা অপরাধ নয়’, ডেপুটি কমিশনার কাকাকে পালিয়ে বিয়ে ভাইঝির]
পুলিশ শীর্ষ আদালতে জানিয়েছে, ওইদিন দুপুর ৩টে ৫০ মিনিট নির্দেশ জারি করেন অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট। বিকেল ৪টে ১০-এ ঘটনাস্থলে পৌঁছন বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট। বিকেল ৪টে ২০ মিনিট থেকে ৪টে ৪০ মিনিট পর্যন্ত চলছিল সুরতহাল। বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে মর্গে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসকের দেহ। সেখানেও ভিডিওগ্রাফি হয়। এর পর সন্ধে ৬টা ১০ মিনিটে ময়নাতদন্ত শুরু হয়। ৭টা ১০ মিনিট পর্যন্ত চলে। রাত সাড়ে ৮টার সময় পরিবারের হাতে চিকিৎসকের দেহ তুলে দেওয়া হয়। রাত ৮টা ৩০ মিনিট থেকে ১০টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন নমুনা বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া চলে। সবশেষে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে দায়ের করা হয় FIR।
এর পর বিচারপতিরা স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন তোলেন, প্রায় ১৪ ঘণ্টা সময় লাগল কেন FIR দায়ের করতে? শীর্ষ আদালতের এই প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে বৃহস্পতিবার রাজ্যের আইনজীবী সঞ্জয় বসুর ব্যাখ্যা, রাত ১১টা ৪৫ নয়, দুপুর ১টা ৪৭ নাগাদই অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা দায়ের হয়। তবে তদন্তকারী অফিসার (IO) দিনভর তদন্তের কাছে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি যখন কাজ শেষে থানায় ফেরেন, তখন রাত হয়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত রাত ১১টা ৪৫ নাগাদ FIR নথিভুক্ত করা হয়েছে। তার আগে দুপুরেই পুলিশের কাছে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, এ মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। রহস্য রয়েছে।
[আরও পড়ুন: ভারতীয় দলে খেলেছেন বাবা, ইংল্যান্ডের জার্সি গায়ে টেস্ট ম্যাচে নামলেন ছেলে!]
আইনজীবী সঞ্জয় বসুর আরও ব্যাখ্যা, মাঝের সময়টুকুতে তদন্ত ও ময়নাতদন্তের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ চলছিল। দেহ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তবে তার পরও ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র বাজেয়াপ্ত করার কাজ করছিলেন তদন্তকারী অফিসার। তার পর কাজ শেষে FIR নথিভুক্ত করতে রাত ১১টা ৪৫ বেজে গিয়েছে।