সুবীর দাস, কল্যাণী: চোখের সামনে একটু একটু করে দেখলেন মারা যাচ্ছেন ছেলে। রোগীর অবস্থা সংকটজনক হলেও ডাক্তার বা নার্স কেউ চিকিৎসার জন্য আসেননি। ছেলের শেষ কাজ করে এসে অসহায় বাবার আর্তি এই ঘটনার বিচার কে করবে? বৃহস্পতিবার আর জি কর হাসপাতালে মৃত্যু (RG Kar Incident) হয়েছে রানাঘাটের আইসমালির বাসিন্দা বছর ২৪-এর নন্দ বিশ্বাসের।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন তিনেক ধরে জ্বরে ভুগছিলেন এই যুবক। সোমবার চিকিৎসার জন্য তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় আর জি কর হাসাপাতালে। ভর্তির পর তাকে কয়েক বোতল স্যালাইন দেওয়া হয়। কিন্তু বৃহস্পতিবার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে কাউকে পাওয়া যায়নি। অভিযোগ, নার্সদের বার বার বলারল পরও তাঁরা জানান, ঠিক সময়ে চিকিৎসা করা হবে।
মৃত যুবককের বাবা জ্যোতিষ বিশ্বাস বলেন, "প্রথমে কয়েকবার স্যালাইন দেওয়া হয়। কিন্তু মঙ্গলবার থেকে আর কোনও স্যালাইন দেওয়া হয়নি। নার্স ও ডাক্তার কেউ আসেননি। ছেলের মুখ থেকে গ্যাঁজলা উঠতে শুরু করলে নার্সের কেবিনে গিয়ে বলেছিলাম। কিন্তু ওঁরা বার বার বলছিলেন,সময়মতো দেখা হবে। শেষ সময়ে চিকিৎসক এসে বলেন ছেলে বেঁচে নেই। ডাক্তার নেই যখন ভর্তি নিল কেন? বলে দিলে হয়তো আমার ছেলেটা বেঁচে থাকত।"
মৃতের পরিবারের অভিযোগ, সোমবার চিকিৎসা শুরু হওয়ার পর যুবক কিছুটা সুস্থ হয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। বন্ধ হয়ে যায় প্রস্রাব এবং পায়খানা। মুখ থেকে গ্যাঁজলা বেরোতে শুরু করে। অভিযোগ, সেই সময়েও ডাক্তারের খোঁজে ছোটাছুটি করছিলেন যুবকের বাবা। কিন্তু ডাক্তার ছিলেন না। পরে এক জন এসে যুবকের বুকে চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু তত ক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছিল। চিকিৎসক জানিয়ে দেন, তাঁর ছেলে মৃত। মৃতের মা বলেন, "আমরাও আর জি করের ওই মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যুর বিচার চাই। কিন্তু আমাদের বিচার কে দেবে? গরিব বলে কি আমাদের জীবনের দাম নেই?"
এর আগেও ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে বিনা চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। হুগলির কোন্নগরের বাসিন্দা বিক্রম ভট্টাচার্যের মৃত্যুর পর একই অভিযোগ তুলেছে তাঁর পরিবার। 'জাস্টিস ফর কোন্নগর' আওয়াজ তুলে প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে।
আর জি কর হাসপাতালের সেমিনার রুম থেকে চিকিৎসক তরুণীর দেহ উদ্ধার হয়। তাঁকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগে উত্তাল রাজ্য। দোষীদের শাস্তি ও একাধিক দাবিতে কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। সুপ্রিম কোর্ট থেকে মুখ্যমন্ত্রী বার বার অনুরোধ করলেও কাজে ফেরেননি তাঁরা।