স্টাফ রিপোর্টার: নেপথ্যে কারা? কাদের জন্য বারে বারে ভেস্তে যাচ্ছে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে রাজ্য সরকারের আলোচনা? যেখানে ভোরের সূর্য ওঠার আগেই আলোচনা চেয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে ই-মেল পাঠাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা, সেখানে দুপুর গড়াতেই কেন ফের বেঁকে বসলেন জুনিয়র ডাক্তাররা? প্রশ্ন উঠেছে, কাদের ‘কুমন্ত্রণা’য় এগিয়ে এসেও ফের পিছিয়ে গেলেন জুনিয়র ডাক্তাররা? ডাক্তারদের আন্দোলনের পিছনে রাজনৈতিক শক্তির অস্তিত্ব স্পষ্ট বলে ফের অভিযোগ করেছে রাজ্য সরকার। স্বাস্থ্যভবনের সামনে ডাক্তারদের অবস্থানে বিজেপি ও সিপিএম নেতানেত্রীদের ঘোরাঘুরি থেকে নেপথ্যের রাজনৈতিক শক্তিকে বুঝতে কোনও সমস্যা হচ্ছে না বলে অভিমত রাজনৈতিক মহলেরও।
মঙ্গলবার রাতেই অবস্থানে দেখা গিয়েছিল অভিনেত্রী ঊষশী চক্রবর্তীকে। বুধবার কোকেন কাণ্ডে গ্রেপ্তার হওয়া বিজেপি নেত্রী তথা প্রাক্তন মডেল পামেলা গোস্বামীকে দেখা গিয়েছে অবস্থানে ডাক্তারদের মধ্যে বিস্কুট-চকোলেট ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্য বিলি করতে। পামেলা বিজেপি যুবমোর্চার সাধারণ সম্পাদক। মডেলিং ও অভিনয় ছেড়ে ২০১৯ সালে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। ২০২১ সালে তাঁকে কোকেন পাচারের অভিযোগে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ধর্মতলার বিজেপির ধরনা মঞ্চ ছেড়ে বুধবার পামেলা হাজির হয়েছিলেন স্বাস্থ্যভবনের সামনে ডাক্তারদের অবস্থানে। পামেলা চক্রবর্তীর উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের মিডিয়া কমিটির সদস্য কুণাল ঘোষ। এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, 'বিজেপি নেত্রী, একদা মাদক কান্ডে ধৃত পামেলা গোস্বামী গিয়েছিলেন জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে, সাহায্যও করেছেন। অরাজনৈতিক!!!'
ঊষশী চক্রবর্তীর সিপিএম পরিচয় নিয়ে কোথাও কোনও সংশয় নেই। ডাক্তারদের আন্দোলনে দেখা যাচ্ছে সিপিএম হিসেবে পরিচিত অভিনেতা বাদশা মৈত্রকেও। পামেলা-ঊষশী-বাদশাদের আন্দোলনে থাকা নিয়ে ডাক্তাররা কিন্তু কোনও প্রশ্ন তুলছেন না। সল্টলেকের অবস্থানে বিপুল পরিমাণে খাদ্যসামগ্রী থেকে শুরু করে মিনারেল ওয়াটার কারা যোগান দিচ্ছেন, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেও বিশেষ বেগ পেতে হচ্ছে না বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত।
বুধবার সকালেই অবস্থান মঞ্চে দেখা গিয়েছে লরি ভর্তি মিনারেল ওয়াটার ও চকোলেট-বিস্কুটের মতো শুকনো খাবার ব্লিঙ্কিট, সুইগি, জোম্যাটোর ডেলিভারি বয়দের। কারা এই খাবার পাঠিয়েছে সেই প্রশ্নের উত্তরে ডেলিভারি বয়রা জানিয়েছেন, তাঁদের শুধু বলা হয়েছে এগুলি অবস্থান মঞ্চে পৌঁছে দিতে। শুধু খাবার নয়, ফেসবুকে চাওয়া মাত্র গাদা গাদা পেডেস্টাল ফ্যান, বায়ো টয়লেট পৌঁছে গিয়েছে অবস্থান মঞ্চে। কাদের টাকায় এইসব হচ্ছে সেই প্রশ্ন ঘুরছে রাজ্যের চিকিৎসক ও রোগীর পরিবারের মধ্যেও। পামেলার খাবার বণ্টনের ছবি থেকে অনেকেই বলছেন এইসব যোগান দিচ্ছে বিজেপি। যাদবপুরের সল্টলেক ক্যাম্পাস থেকে রান্না করা খাবার সরবরাহের পিছনে অনেকে এসএফআই ও সিপিএমের ছায়া দেখছে।
শর্তের পর শর্ত চাপিয়ে আলোচনা ভেস্তে দেওয়ার নেপথ্যে কোন শক্তি ? আর মুখ্যসচিব ১২/১৫ জন বললেও কেন ৩০ জন প্রতিনিধি চাইছেন? তাহলে কি নিজেদের মধ্যে কেউ কাউকে বিশ্বাস করেন না? তাই পারস্পরিক অবিশ্বাস থেকেই ৩০ জন নবান্নে যেতে চাওয়া? এটা কার পরিকল্পনা?
আর জি কর কাণ্ডে জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতি আন্দোলনের প্রথম দিন থেকেই সহানুভূতিশীল ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি রেখেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। তাঁরই নির্দেশে জুনিয়র ডাক্তারদের নবান্নে প্রথম ই-মেল পাঠিয়ে আলোচনার জন্য ডেকে পাঠানো হয়। শুধু তাই নয়, মুখ্যমন্ত্রী সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের জন্য অপেক্ষাও করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জুনিয়র ডাক্তাররা ‘স্যর’ আর ‘ম্যাডাম’ লেখা নিয়ে যেভাবে অজুহাত তুলে পিছিয়ে গিয়েছেন, তা শুধুই আলোচনা ও রোগীর স্বার্থে নেওয়া উদ্যোগ ভেস্তে দেওয়ার জন্যই বলে মনে করছেন রাজ্যের চিকিৎসকদের একটা বড় অংশই। প্রকাশ্যে এক দু’জন সিনিয়র ডাক্তার গিয়ে উসকানি দিলেও বাকিরা সবাই বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করে জমিয়ে রোজগার করছেন। কিন্তু রাজ্য সরকার গরিব মানুষের স্বার্থে, সাধারণ রোগীদের কথা মাথায় রেখে আলোচনার দরজা খুলে রাখলেও একটি স্বার্থান্বেষী মহল যে তাদের নিজস্ব অঙ্কেই দ্বিপাক্ষিক বৈঠক ভেস্তে দিতে চাইছে তা স্পষ্ট।