সুপর্ণা মজুমদার: 'ধন্যিমেয়ে' সিনেমার শেষ দৃশ্য। মনসাকে (জয়া বচ্চন) বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে কালী দত্ত অর্থাৎ বাংলার মহানায়ক উত্তমকুমার। তার পর সেই সংলাপ,
তপেন চট্টোপাধ্যায়: বলছি দিদি জামাইবাবু না... সত্যিকারের স্পোর্টসম্যান।
উত্তমকুমার: আর স্পোর্টসম্যান মানে?
তপেন চট্টোপাধ্যায়: জেন্টালম্যান!
ছবি: পবিত্র রায়চৌধুরী
এই সংলাপ আজ বাংলায় বাস্তব। ঘোরতর বাস্তব। ইলিশ-চিংড়ি এক পাতে থাকতে পারে তা দেখিয়ে দিলেন মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকরা। ফুটবলের মাঠে প্রতিবাদের ভাষা মিলে মিশে একাকার। তাতেই মিশে গিয়েছে লাল-হলুদ, সবুজ-মেরুন আর সাদা-কালো রং। আকাশে বাতাসে শুধু একটাই স্বর। বিচার চাই, We Want Justice! এই দাবিতেই রাস্তায় নেমেছিলেন শিলাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়। হালতুর যে ছেলেটা রাস্তায় টেবিল পেতে পোলাও-মাংস বিক্রি করে, সেই কাঁধে তুলে নিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল সমর্থককে। অভয়ার বিচারের দাবিতে বাংলা ময়দানের দুই প্রধানের এই সম্প্রীতির ছবি সোশাল মিডিয়ায় দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। তাতেই আবেগের জোয়ারে ভাসেন ইস্টবেঙ্গলের তারকা সমর্থক দেবদূত ঘোষ। প্রতি বিজয়ায় শিলাদিত্যর মাকে প্রণামের অঙ্গীকার করেন তিনি।
ভাইরাল ছবি নিজের ফেসবুকে পেজে শেয়ার করে দেবদূত লিখেছিলেন, "ভাই তোর ঠিকানা দিস... আমি আজীবন ইস্টবেঙ্গল! কিন্তু তুই আমার ভাইকে কাঁধে নিয়েছিস। বিজয়ার দিন, যতদিন বেঁচে আছি... তোর মাকে প্রণাম করে আসব। জয় মোহনবাগান! জয় ফুটবল!"
[আরও পড়ুন: মাঝরাতে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি, বাইক আরোহীকে ধাক্কা, গ্রেপ্তার অভিনেতা সম্রাট মুখোপাধ্যায় ]
দেবদূতের এই বার্তা পৌঁছে দিতে ফোন করা হয়েছিল শিলাদিত্যকে। শুনেই হালতুর যুবক বলে উঠলেন, "আপনি হয়তো দেখতে পারবেন না এখন, তবে যে শব্দগুলো উনি লিখেছেন তাতে এখন আমার চোখে জল। আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আমি জানি না আমি কী বলব, অনেক ছোট হই ওঁর থেকে। আমার মায়ের হয়তো এই সম্মানটা প্রাপ্য। আমি জানি না আমি কী করেছি, মনে হয় আমি মানুষের মতো কাজ করতে পেরেছি। মানুষের মতো কাজ করার দরকার ছিল। ওইটুকুই তো করতে পেরেছি। এর থেকে বেশি জানিও না, বুঝিও না।"
দেবদূত বাড়ি এলে কী খাওয়াবেন? শিলাদিত্যর জবাব, "আমার মায়ের হাতের পোলাও, মাংস খাওয়াব। উনি যে কথাটা বলেছেন সেটাই অনেক। আমি সত্যিই ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। কী বলব জানি না। মানে মুখে কোনও শব্দ নেই এটা শোনার পর। ভালো থাকবেন আপনাদের মতো মা-বোনেরা। আপনাদের জন্যই লড়ছি।"