সন্দীপ্তা ভঞ্জ: আর জি কর কাণ্ডের পর নারীসুরক্ষার দাবিতে পথে নেমে প্রথম সারিতে প্রতিবাদ করেছেন। তিলোত্তমার মৃত্যুর পর সরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপের বিরুদ্ধেও গর্জে উঠেছিলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। তবে শনিবার আন্দোলনকারী ডাক্তারদের ধরনা মঞ্চে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেওয়ার বার্তাকে 'দৃষ্টান্তমূলক' বলে সাধুবাদ জানালেন অভিনেতা-পরিচালক।
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় বললেন, "প্রথমত, নিঃসন্দেহে সাধুবাদ জানানোর মতো পদক্ষেপ। আমার স্মৃতিতে ভারতবর্ষে এর আগে কখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো পদাধিকারী কোনও নেতা-মন্ত্রী এমন পদক্ষেপ করেছেন বলে মনে পড়ছে না। অন্তত যাঁরা তাঁর সরকারের বিরুদ্ধেই আন্দোলন করছেন, তাঁদের মধ্যে চলে যাওয়া যায়, এরকম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বলে আমার জ্ঞাতসারে নেই। রাজনীতির প্রেক্ষাপট থেকেই হোক বা যে কোনও জায়গা থেকে যদি এই বিষয়টা ভাবি, তাহলে এটা অত্যন্ত ইতিবাচক, প্রশংনীয় তথা দৃষ্টান্তমূলকও একটা পদক্ষেপ বটে! আগেও তো আমরা অনেক আন্দোলন দেখেছি, ওঁর পদাধিকারী কেউ কখনও এভাবে সোজাসুজি সাহস করে আন্দোলনকারীদের মধ্যে যাননি। অন্যান্য রাজ্যে কীভাবে আন্দোলন দমিয়ে দেওয়া হয়, আন্দোলনকারীদের কণ্ঠরোধ করা হয়, সেই উদাহরণও রয়েছে অনেক। সেই জায়গা থেকেই আন্দোলনকারীদের ধরনা মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিত হওয়াকে দৃষ্টান্তমূলক এবং ইতিবাচক বলছি। তবে এখানে একটা কিন্তু রয়েছে!"
তিলোত্তমার ন্যায়বিচার চেয়ে বিগত ৩৪ দিন ধরে আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা। ঝড়-বাদলও টলাতে পারেনি তাঁদের। আর শনিবার অচলাবস্থা কাটাতে বৃষ্টি মাথায় করেই নজিরবিহীন পদক্ষেপ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। স্বাস্থ্যভবনের সামনে জুনিয়র ডাক্তারদের ধরনা মঞ্চে গিয়ে সাফ বললেন, “মুখ্যমন্ত্রী নয়, বড় দিদির মতো এসেছি।” তবে মমতার এহেন পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানানোর পাশাপাশি পরমব্রত ডাক্তারদের ন্যায্য দাবিগুলোও পূরণ হওয়ার পক্ষে সরব হলেন। তাঁর কথায়, "এই বৃত্ত তখনই সম্পূর্ণ হবে, যখন ধরনা মঞ্চে দাঁড়িয়ে ওঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ হবে। স্বাস্থ্যক্ষেত্র দুর্নীতিমুক্ত হলে তবেই সাধুবাদ দেওয়াটা সার্থক হবে।"
ধরনা মঞ্চে যাওয়ার পর শনিবার বিকেলেই কালীঘাটের বাড়িতে বৈঠক ডেকেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরমব্রতর কথায়, "মুখ্যমন্ত্রীর আজকের পদক্ষেপকে সম্পূর্ণ তখনই বলা যাবে, যখন ডাক্তারদের যে দাবিগুলো রয়েছে, বিশেষত যেগুলো আশু দাবি, সেগুলো যখন পূরণ হবে। এই যে বাস্তু ঘুঘুর বাসাগুলো তৈরি হয়েছে প্রত্যেকটা সরকারি হাসপাতালে, সেগুলো যখন ভাঙা হবে, তখনই এই সাধুবাদ দেওয়াটা সার্থক হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে সাহস করে চলে গেলেন ওখানে, সেটা সদর্থে পূর্ণতা পাবে তখনই। প্রতিনিয়ত চিকিৎসকদের সঙ্গে হওয়া অন্যায়গুলো যাতে না হয়, যাতে আরেকটা অভয়া কাণ্ড না ঘটে। এবং স্বাস্থ্যক্ষেত্রে যে 'থ্রেট কালচার' চলছে- যেমন টাকার বিনিময়ে পাশ-ফেল নির্ধারণ করা, রাজনৈতিক ভয় দেখিয়ে দুর্নীতি করা, সেই সমস্যাগুলো যেদিন নির্মূল হবে, সেদিন এই অত্যন্ত ইতিবাচক পদক্ষেপটা সার্থক হবে। এবং সেই বৃত্ত পূরণ হবে।"
শনিবার আন্দোলনকারীদের ধরনা মঞ্চ থেকে মমতা বলেন, “আমি আপনাদের আন্দোলনকে কুর্নিশ জানাই। আমি ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসা লোক। আমি জানি আমার পদটা বড় কথা নয়। কাল সারারাত ঝড়-জল হয়েছে, আপনাদের যেমন কষ্ট হয়েছে। আমারও কষ্ট হয়েছে। এই ঝড়জলের মধ্যে আপনারা যেভাবে বসে আছেন আমারও কষ্ট হয়েছে। রাতের পর রাত আমিও ঘুমাইনি। কষ্ট না করে যদি আপনারা কাজে ফিরতে চান, প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আপনাদের দাবিগুলো সহানুভূতির সঙ্গে খতিয়ে দেখব। ভাবব, চিন্তা করব। যদি কেউ দোষী হয়, সে শাস্তি পাবেই। আমি চাই তিলোত্তমার বিচার হোক। ডাক্তারদের কাছে আবেদন জানাব, আমাকে একটু সময় দিন। যদি আপনাদের আমার উপর আস্থা, ভরসা থাকে।” মুখ্যমন্ত্রীর এহেন পদক্ষেপকে ইতিবাচক বলেই মনে করছেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়।