shono
Advertisement

‘দাঙ্গা যাদের ধর্ম তারা আমার বন্ধু নয়’

যে রাজ্যে দুর্দিনেও আশ্চর্য নীরবতা শিল্পীদের ধর্ম হয়ে উঠেছে, সেখানে কবির ধর্মই পালন করলেন শ্রীজাত। বুঝিয়ে দিলেন, তাঁর কলম অন্তত একপেশে হয়ে ওঠেনি। The post ‘দাঙ্গা যাদের ধর্ম তারা আমার বন্ধু নয়’ appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 02:25 PM Jul 07, 2017Updated: 08:55 AM Jul 07, 2017

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের সমালোচনা কবিতায় ছন্দোবদ্ধ হয়ে উঠে এসেছিল তাঁর কলমে। ত্রিশূল ও কন্ডোমের সেই সহাবস্থান অনেকেই মেনে নিতে পারেননি। কবি শ্রীজাতর নামে দায়ের হয়েছিল এফআইআর। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে কেন তিনি নীরব? কেন ধূলাগড় বা বসিরহাট উঠে আসছে না তাঁর কলমে? সে সবের জবাব দেওয়া নয়, কবির ধর্মই পালন করলেন শ্রীজাত। তাঁর কবিতাই জানিয়ে দিল, দাঙ্গা যাঁদের ধর্ম তাঁরা কখনও বন্ধু হতে পারে না।

Advertisement

যেদিন শ্রীজাতর নামে এফআইআর দায়ের হয়েছিল, সেদিন তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল বাংলার শিক্ষিত সমাজ। শিল্পীর স্বাধীনতা রুদ্ধ হোক তা চাননি বাংলার কেউই। তবে অন্য এক মতের সমান্তরাল স্রোতও বইছিল। অনেকেই জানতে চাইছিলেন, কেন ধুলাগড় নিয়ে মুখ খোলেননি শ্রীজাত? সাম্প্রতিক বসিরহাট প্রসঙ্গে তা আরও জোরাল হচ্ছিল। কোনও কোনও অতি উৎসহাহী কটাক্ষ করে বলছিলেন, এবার চুপ করে থেকেই ‘জাত’ চেনালেন শ্রীজাত। কিন্তু তাঁর পাঠকমাত্রই জানেন, তিনি কোনওদিনই চুপ করে থাকেননি। কফিটির নাম আইরিশ যে কবি বলেন, তিনিই তো তুলে ধরেছিলেন অন্ধকার লেখাগুচ্ছ। মৌলবাদ প্রসঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে এতটা সরব হতে সাম্প্রতিক সময়ে অন্তত কোনও কবিকে দেখা যায়নি। সস্তা প্রচারের লোভে কেউ কেফ সমালোচনায় মেতেছিলেন, ধারাবহিকভাবে যাঁরা তাঁকে পড়েননি তাঁরা নানা প্রশ্ন করে বাজার সরগরম করেছিলেন। কিন্তু তাঁর পাঠকরা অপেক্ষা করছিলেন, কখন কবিতা এসে এই আগুনে সমালোচনা ধুয়ে দিয়ে যাবে, সেই মুহূর্ত। দিলও তাই। লালনের আরশিনগরকে আপন করে নিয়ে কবি যেন বিভাজনে দীর্ণ মানুষের চোখের তারায় আয়না তুলে ধরলেন। তাঁর কবিতা জানিয়ে দিল,

ঘরের পাশে আরশিনগর। বসত করে কে?

মারবে ব’লে তোমায়, কারা ধর্ম জ্বেলেছে।

কিন্তু তারা বিধর্মী সব, ঘুণের মতো ক্ষয়…

 

দাঙ্গা যাদের ধর্ম তারা আমার পক্ষ নয়।

সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দাঙ্গার সূত্রপাত। সোশ্যাল মিডিয়াতেই তা রুখতে এগিয়ে এসেছেন মানুষ। অনেকেই বলছেন, যাঁরা প্ররোচনামূলক পোস্ট করবেন, তাঁদের বাদ দেওয়া হবে বন্ধুতালিকা থেকে। রাস্তায় রাস্তায়, পাড়ায় পাড়ায় বন্ধুদের মধ্যে হাজারও আলোচনা। তাঁদের মুখপাত্র হয়েই যেন শ্রীজাতর কবিতা যেন জানিয়ে দিল,

হিংসা ছড়ায় উত্তেজনা। দ্বন্দ্ব অসন্তোষ।

বারুদ জড়ো করছি যখন, আগুনে কোন দোষ?

কাদের পাড়ায় পুড়ছে বাড়ি? কাদের পাড়ায় ভয়?

 

দাঙ্গা যাদের ধর্ম তারা আমার বন্ধু নয়।

এই ঘোর দুর্দিনে শিল্পীদের সামাজিক দায়িত্ববোধ নিয়েও প্রশ্ন উঠছিল। কে কার দলে, তাইই যেন আজ বড় বাস্তবতা হয়ে দেখা দিয়েছিল। আর শ্রীজাতর কবিতা শুনিয়ে দিল,

অনেক আগেই পেরিয়ে গেছে পথে নামার দিন –

মুখোশ যাদের সত্তা এবং দু’মুখো আস্তিন…

এই মাটিতে তাদের যেন না-জোটে আশ্রয় –

 

দাঙ্গা যাদের ধর্ম তারা আমার সঙ্গী নয়।

আগুনের শিখা যতই ভয় দেখাক, এখনও বাংলার মানুষ বিশ্বাস করে, এ তাদের সংস্কৃতি নয়। এ মাটি আজও সহাবস্থান, সম্প্রীতির সংস্কৃতিকেই লালন করে। তাই অনেক ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই জেগে থাকে সেই আশাবাদ, আর শ্রীজাত বলে ওঠেন

উটকো কিছু মিথ্যে মানুষ, ঘরভাঙানো লোক

ভালবাসার সামনে তাদের শাস্তি দেওয়া হোক।

এই ভাষাতে হাসন রাজা, লালন কথা কয়…

 

দাঙ্গা যাদের ধর্ম তারা আমার পড়শি নয়।

 

যে রাজ্যে দুর্দিনেও আশ্চর্য নীরবতা শিল্পীদের ধর্ম হয়ে উঠেছে, সেখানে কবির ধর্মই পালন করলেন শ্রীজাত। বুঝিয়ে দিলেন, তাঁর কলম অন্তত একপেশে হয়ে ওঠেনি। অন্ধকার লেখাগুচ্ছ থেকেই আশা ও ভরসার আলো আজও তিনি জ্বালিয়ে তুলতে পারেন। আর তাই সোশ্যাল মিডিয়াতেই বাংলার মানুষ দ্বিধাহীন তাঁকে জানাচ্ছেন, ধন্যবাদ শ্রীজাত।

The post ‘দাঙ্গা যাদের ধর্ম তারা আমার বন্ধু নয়’ appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement