সুকুমার সরকার, ঢাকা: মানবিকতার খাতিরে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্ব মানচিত্রে ব্রাত্য মায়ানমারের ওই জনগোষ্ঠীর জন্য দরজা খুলে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এবার জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড়সড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই শরণার্থীরা। দ্রুত এদের দেশে ফেরত না পাঠালে এই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ আরও ছড়িয়ে পড়বে বলেই মনে করেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
বৃহস্পতিবার ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে (আইইউবি) একটি বইয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন বিদেশমন্ত্রী মোমেন। সেখানে রোহিঙ্গা সংকট ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় আঞ্চলিক পরিকল্পনা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি। শুধু তাই নয়, মোমেন আরও বলেন, “বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের (Rohingya) দ্রুত মিয়ানমারে ফেরত না পাঠানো গেলে জঙ্গিবাদ গোটা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে।” এদিন ‘রোহিঙ্গা ক্যাম্প ন্যারেটিভস: টেলস ফ্রম দ্য লেসার রোডস ট্রাভেলড’ শীর্ষক বইটির উদ্বোধন করএ মোমেন বলেন, “যেমনটা এই বইয়ে বলা হচ্ছে, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি খুবই জটিল অবস্থায় আছে। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে রোহিঙ্গারা মাদক ও মানব পাচারের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তারা জঙ্গিবাদের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়তে পারে।”
[আরও পড়ুন: ভারতের সেনাপ্রধানের পরেই বাংলাদেশ সফরে চিনের বিদেশমন্ত্রী, তুঙ্গে জল্পনা]
উল্লেখ্য, ধর্ষণ, হত্যা, অগ্নিসংযোগ-সহ মায়ানমার (Myanmar) সেনাবাহিনীর বর্বরোচিত নির্যাতন-নিপীড়নের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে নতুন করে সাড়ে সাত লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা সাগর ও সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল কক্সবাজার জেলায় আশ্রয় নেয়। এর আগে বিভিন্ন সময়ে আরও চার লক্ষ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের পাহাড়ি এলাকায় আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছিল। সব মিলিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে এগারো লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গার বাস। তবে সমুদ্রঘেঁষা কক্সবাজারের ওপর থেকে রোহিঙ্গাদের চাপ সামলাতে সরকার এক লক্ষ রোহিঙ্গার জন্য নোয়াখালীর ভাসানচরে পুনর্বাসন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মায়ানমারে রোহিঙ্গা (Rohingya) জঙ্গিদের মদত দিচ্ছে পাকিস্তানের কুখ্যাত গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। মায়ানমারের জঙ্গি সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি তথা আরসা-কে মদত দিচ্ছে তারা। আর সেই প্রভাব এসে পড়ছে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবিরগুলিতে। বিগতদিনে শরণার্থীদের মধ্যে জঙ্গিদের তৎপরতা বেড়েছে বলেও একাধিক রিপোর্টে জানিয়েছে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা সংস্থাগুলি। এহেন পরিস্থিতিতে শরণার্থী শিবিরে ফের রোহিঙ্গা নেতা খুন হওয়ায় রীতিমতো উদ্বিগ্ন দেশের প্রশাসন ও নিরাপত্তামহল।