shono
Advertisement

‘শচীনই আদর্শ, ভাবিনি ওঁর অধিনায়ক হব’, বলছেন রোহিত শর্মা

শচীন তেণ্ডুলকর আমার কাছে ঈশ্বরের ঠিক পরেই: রোহিত।
Posted: 11:00 AM Apr 23, 2023Updated: 01:41 PM Apr 23, 2023

রোহিত শর্মা: সালটা ২০০৪-’০৫। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ট‌্যুর ম‌্যাচের ঠিক আগে। সিসিআইয়ের নেটে আমি প্র্যাকটিস করছি। আর ঠিক সেই সময়ই শচীন পাজিকে আমার প্রথম কাছ থেকে দেখা।

Advertisement

পাজি সিসিআইয়ে এসেছিলেন আমাদের নেট সেশনের সময়। আমি কী করি না করি, দেখছিলেন উনি। বলতে কোনও অসুবিধে নেই যে, প্রবল নার্ভাস হয়ে পড়েছিলাম ভিতরে ভিতরে। যা খুব স্বাভাবিক। আমার মধ‌্যে ক্রিকেট খেলার যে বাসনা জন্মগ্রহণ করেছিল, তার কারণই তো উনি–শচীন পাজি। আমাদের বাড়িতে ক্রিকেট বলতে সবাই বুঝত শচীন তেণ্ডুলকর। টিভির সুইচ অন এবং অফ করা নির্ভর করত শচীন তেণ্ডুলকর কেমন ব‌্যাট করছে, তার উপর। আর সেই লোক যদি আপনার পিছনে দাঁড়িয়ে আপনার ব‌্যাটিং দেখে, টেনশন তো হবেই। আপনি স্বাভাবিক ভাবেই চাইবেন, আপনার আরাধ‌্যকে খুশি করতে। শচীন পাজির চোখে প্রচ্ছন্ন প্রশংসাই তখন একমাত্র অভীষ্ট ছিল আমার। তার পর ওঁর সঙ্গে ২০০৬ সালে রনজি ফাইনাল খেলেছি আমি। যা জিতেছিল মুম্বই। আর আমি খুব কাছ থেকে পাজির থেকে শেখার মতো অনেক কিছু পেয়ে গিয়েছিলাম। সত‌্যি বলতে, করার মতো একটা কাজই ছিল আমার। শচীন পাজি কী করছেন, সেটা মন দিয়ে দেখে যাওয়া। খেয়াল করা। বিভিন্ন ড্রিলের সময় উনি কী করছেন, সে সব মনোযোগ দিয়ে দেখা। নিখুঁতের সংজ্ঞা হওয়া সত্ত্বেও নেটে ব‌্যাটিং করার সময় উনি কী করছেন, সে সব নোট করা। সমস্ত দেখতাম, আর নিজের ক্রিকেটে তা আমদানি করতে চাইতাম। জানতাম, আমি যতটুকুই যা শিখি না কেন ওঁর থেকে, তাতে আমারই ভাল হবে।

[আরও পড়ুন: ‘শিশুর প্যাশনই টানত শচীনকে’, ‘সোনার ছেলের’ প্রশংসায় ফ্যানবয় অভিনব বিন্দ্রা]

শচীন পাজির সঙ্গে আমার প্রথম মনে রাখার মতো পার্টনারশিপ হয়, অস্ট্রেলিয়ায় সিবি সিরিজ ফাইনালে। ম‌্যাচটা জেতার জন‌্য আমাদের একটা পার্টনারশিপ প্রয়োজন ছিল। আর পাজি ব‌্যাটিংটা করছিলেনও অনবদ‌্য। আমার কাজ ছিল, উইকেটে থেকে ওঁকে সাপোর্ট দিয়ে যাওয়া। ফাইনালটা খেলা হচ্ছিল এমন একটা সময়ে, যখন টেস্ট সিরিজ শেষ হয়েছে। এবং অনেক কিছু নির্ভর করে রয়েছে ম‌্যাচটার উপর। অস্ট্রেলিয়া দাবি করে গিয়েছিল যে, তিন ম‌্যাচের ফাইনালকে ওরা দু’ম‌্যাচে শেষ করে দেবে। তাই আমাদের নিজেদের সেরাটা বার করে আনতে হত। আমরা সেটা করেছিলাম। ওদেরই ২-০ হারিয়ে। তৃতীয় ফাইনালের দরকারই পড়েনি। আর দুটো ফাইনালেই পাজি দারুণ খেলেছিলেন। বোলাররা কী করতে পারে না পারে, মুহূর্তে ধরে ফেলছিলেন উনি। আর আমাকে এসে বলছিলেন, আমার বিরুদ্ধে অস্ট্রেলীয় বোলারদের কী স্ট্র্যাটেজি হবে। আমি চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস রেখেছিলাম শচীন পাজির উপর। রেজাল্টও পেয়েছিলাম। ভারতকে ম‌্যাচ জিততে সাহায‌্য করতে পেরেছিলাম আমি। আর শেষে পাজি আর আমার পার্টনারশিপটাই ম‌্যাচ জেতানো পার্টনারশিপ হয়ে যায়। যা কি না পাজি, আমার নিজের এবং গোটা টিমের কাছে তৃপ্তির ব‌্যাপার ছিল।

সত্যি বলতে, পাজির সঙ্গে আমার প্রচুর ভাল ভাল স্মৃতি রয়েছে, গল্প রয়েছে। সব যদি বলতে যাই, তা হলে পুরো খবরের কাগজ লেগে যাবে। তার চেয়ে বরং গোটা কয়েক বলি। আমি মুম্বইয়ের ছেলে। তাই শচীন তেণ্ডুলকর আমার কাছে ঈশ্বরের ঠিক পরেই ছিলেন। আমার বেড়ে ওঠার অংশ ছিলেন, আমার ক্রিকেট খেলতে আসাই ওঁকে দেখে। উনিই আমার অনুপ্রেরণা, যতটুকু যা হয়েছি, ওঁকে দেখেই হয়েছি। বললাম না, আমাদের বাড়িতে ক্রিকেট আর শচীন তেণ্ডুলকর সমার্থক শব্দ ছিল। শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড ছিল। আমরা যা-ই করতাম, সামনে চূড়ান্ত শ্রেষ্ঠত্বের নিশান হিসাবে পাজি থাকতেন। বলতে পারেন, উনিই ছিলেন আমাদের অদৃশ‌্য কোচিং ম‌্যানুয়াল। আর তার পর যখন ওঁর সঙ্গে খেলার সুযোগ পাই আমি, কী যে অনুভূতি হয়েছিল বলে বোঝাতে পারব না। মনে হয়েছিল, যেন পৃথিবী জয় করে ফেলেছি। ওঁর সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করা, স্ট্র্যাটেজি তৈরি করা, প্ল‌্যান করা–মনে হত, স্বপ্নের মধ‌্যে দিয়ে হাঁটছি যেন। আমরা মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়েও খেলেছি দীর্ঘদিন। আর সব সময় পাজি আমাকে সমর্থন করে গিয়েছেন, আমার পাশে থেকেছেন। শেষ পর্যন্ত ২০১৩ সালে আমি সেই লোকটার অধিনায়ক হই, যাকে দেবতাজ্ঞানে ভক্তি করি। আদর্শ হিসেবে মানি। ভেবে দেখুন একবার। যিনি কি না আমার রোলমডেল, আমি কি না তাঁরই অধিনায়ক আইপিএলে!

[আরও পড়ুন: ইচ্ছা করে সিনিয়রকে রান আউট করেছিলেন! শচীনকে নিয়ে মজার গল্প শোনালেন চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত]

আর একটা ঘটনার কথা আমি বলতে চাই। পাজির থেকে আমার টেস্ট ক‌্যাপ পাওয়ার দিনটা। নভেম্বর ২০১৩। সেই টেস্টটা পাজির ১৯৯তম ছিল, সামনেই হাতছানি দিচ্ছিল দুশোতম টেস্ট। যা নিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিল গোটা দেশ। পাজি তার আগে ঘোষণা করে দিয়েছিলেন যে, ওটাই তাঁর শেষ সিরিজ। তাই আবেগের মাত্রাটাই বদলে গিয়েছিল পুরো। আমাদের প্রত‌্যেককে আবেগ গ্রাস করেছিল। আমি প্রবলভাবে চাইছিলাম, উনি আমাদের সঙ্গে যতক্ষণ আছেন, তার প্রতিটা মুহূর্তকে স্পেশ‌্যাল করে রাখতে। টিম হিসাবেও আমরা চাইছিলাম, স্পেশ‌্যাল কিছু করতে। তাই আমরা ঠিক করি, সিরিজটা জিততে হবে। তাই ইডেনে আমার অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরিটা তৃপ্তি দেয়। আমরা ৮৩-৫ হয়ে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে আমি সেঞ্চুরি করি, যা টিমের প্রভূত কাজে আসে। পাজি খুব খুশি হয়েছিলেন আমার ইনিংস দেখে। আমি নিজেও হয়েছিলাম। পাজির ১৯৯তম টেস্টে অভিষেক করে টিমের জন‌্য অবদান রাখা, সব সময় আমার কাছে উপভোগ‌্য স্মৃতি হয়ে থাকবে। তার পর ওয়াংখেড়েতে পাজির শেষ টেস্ট ম‌্যাচে আমি আবার সেঞ্চুরি করি। উনি নিজেও দুর্ধর্ষ ৭৪ রান করেন। যা বোঝায়, নিজের দুশোতম ম‌্যাচেও কতটা ফোকাসড ছিলেন উনি।

আমরা যারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলি, তাদের কাছে সেঞ্চুরি একটা বিশেষ মানদণ্ড। কারণ, সেঞ্চুরি করা সহজ তো নয়ই, বেশ কঠিন। সেঞ্চুরি করতে হলে দায়বদ্ধতা লাগে যেমন, তেমনই অখণ্ড মনোসংযোগও লাগে। আর সেখানে চব্বিশ বছর ক্রিকেট খেলে একশোটা সেঞ্চুরি করতে হলে, আপনাকে অন‌্য পর্যায়ের হতে হবে। পাজি যা ছিলেন। আমি ভাগ‌্যবান যে ওঁর সঙ্গে খেলার সুযোগ পেয়েছি। শুভ জন্মদিন পাজি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement