ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: রোগ সারাতে টোটকা, ঝাড়ফুঁকের ব্যবহার অনেকেই জানে। কিন্তু পায়ের ব্যাথা কমাতে শিকড়-সহ গাছের গোড়া হাঁটুতে ঢুকিয়ে দেওয়া? পরিজনের সৌজন্যে এমনই বিচিত্র চিকিৎসার শিকার হয়েছিলেন সুন্দরবনের বৃদ্ধা। রোগের উপশম তো দূরের কথা, অবস্থা আরও খারাপ হয়। শেষমেশ কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে যখন হাজির, ততক্ষণে পায়ের হাল বেহাল। রোগিণীর হাঁটুর তিন জায়গায় প্রোথিত তিন-তিনটি শিকড় দেখে ডাক্তারবাবুরা আঁতকে ওঠেন। তাঁদের বক্তব্য, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ বা গুজরাটে এমন ঘটনা সংবাদমাধ্যমে এলেও পশ্চিমবঙ্গে স্মরণকালের মধ্যে শোনা যায়নি।
যা-ই হোক, আপৎকালীন ভিত্তিতে চিকিৎসার পরে বৃদ্ধা এখন সুস্থ। শপথ নিয়েছেন, রোগবালাই হলে আর জড়িবুটি-শিকড়বাকড়-তন্ত্রমন্ত্র-তাবিজ-কবচ নয়, সোজা সরকারি হাসপাতালে যাবেন। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত গ্রামের একেবারে নিম্নবিত্ত মৎস্যজীবী পরিবারের বৃদ্ধা গৃহকর্ত্রীর স্বামী অশক্ত বৃদ্ধ। বাড়িতেই থাকেন। ছেলে ও আত্মীয়স্বজনের পেশা মাছধরা, তা-ও পরের জাল-নৌকা নিয়ে। স্বাভাবিক ভাবেই কোনওক্রমে দিন গুজরান। কোনও দিন ডাক্তার দেখিয়েছেন বলে মনে পড়ে না। বছর পঁয়ষট্টির বৃদ্ধার পা হঠাৎ ফুলতে শুরু করেছিল, সঙ্গে জ্বর, শরীরময় ব্যথা। ক্রমশ অসুস্থ হতে শুরু করেন সত্তর ছুঁইছুঁই বৃদ্ধা। তখনই তাঁর উপর টোটকা প্রয়োগ হয়। বাড়ির এক জনের কথায়, ‘‘রাতে ফিরে দেখি, ওঁর হাঁটুর উপর কয়েকটা ছোট ছোট শিকড় লাগানো। মনে হয়, ব্লেড দিয়ে কাটা হয়েছিল।’’
[আরও পড়ুন: একটানা ১২ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ, রাতে গ্রেপ্তার ‘কালীঘাটের কাকু’]
রাতটা কোনওরকমে কাটলেও পরদিন সকাল থেকে অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাতে শুরু করেন বৃদ্ধা। এলাকার ডাক্তারকে দেখিয়েও কোনও সুরাহা না মেলায় বৃদ্ধাকে নিয়ে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে নৌকা করে ট্রেনে-বাসে চড়ে সোজা হাজির এসএসকেএম হাসপাতালে। পিজি হাসপাতালের দু-তিনটি বিভাগ ঘুরে বৃদ্ধা হাজির হন ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড পেন ম্যানেজমেন্টের প্রধান অধ্যাপক ডা. রাজেশ প্রামাণিকের কাছে।
বৃদ্ধার ক্ষত দেখে কার্যত বিস্মিত হয়ে যান। রক্তের কয়েকটি পরীক্ষা করেই বুঝে যান হাই ব্লাড সুগারে ভুগছেন। রোগ অনুযায়ী ওষুধ দিতেই ক্রমশ সুস্থ হয়ে ওঠেন বৃদ্ধা। বৃদ্ধার ছেলের কথায়,‘‘ক’দিন আগে এলে অন্তত এই ভোগান্তি হত না। কষ্টও কম হত।’’ তাঁদের কথায়,‘‘চিকিৎসার সময় ডাক্তারবাবু যেন মায়ের যন্ত্রণা অনুভব করতেন। আস্তে-আস্তে হাত বুলিয়ে দিতেন ব্যথায়।’’ রাজেশের কথায়, ‘‘হয়তো এমন ঘটনা আরও কত হয়। আমরা জানতেও পারি না। আমাদের কাজ রোগ সারানো। কিন্তু সমাজের কুসংস্কারের ব্যাধি যতদিন না সরবে, এমন ঘটনা হতেই থাকবে।’’