shono
Advertisement

মিষ্টি নাকি প্রেমের গল্প? কেমন হল ‘রসগোল্লা’?

হলে যাওয়ার আগে জেনে নিন। The post মিষ্টি নাকি প্রেমের গল্প? কেমন হল ‘রসগোল্লা’? appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 04:12 PM Dec 21, 2018Updated: 04:12 PM Dec 21, 2018

নতুন নায়ক উজান এবং কিশোরী অবন্তিকার অভিনয় মন কাড়ে। লিখলেন জয় গোস্বামী

Advertisement

রসগোল্লা নামক জনপ্রিয় ও ঘরে ঘরে পরিচিত মিষ্টান্নটি কী করে সৃষ্টি হল তাই নিয়েই এই চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছে। এই উৎকৃষ্ট ও সুস্বাদু মিষ্টির উৎপত্তির পিছনে রয়েছে বয়সে তরুণ এক কারিগরের জীবনসংগ্রাম। সেই কারিগর নিতান্ত কিশোর বয়সেই সংকল্প নিয়েছিল যে, সে একজন ময়রা হবে। পিতৃহারা কিশোরটির জননী পুত্রের এই সংকল্প শুনে তাকে উৎসাহিত করেন। কিন্তু ভাগ্যবিড়ম্বনায় শ্বশুরঘর থেকে পুত্র-সহ বিতড়িত হতে হয় সেই জননীকে। পুত্র এক প্রতিষ্ঠিত মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীর দোকানে কাজ খুঁজে নেয়। কিন্তু নতুন মিষ্টি উদ্ভাবনের তাড়না তার মনে সবসময় কাজ করে চলে। তবে সেকাজে ওই তরুণ কারিগর সফল হতে পারে না কিছুতেই। প্রতিষ্ঠিত মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীর দোকানের ওই কাজ থেকে সে বহিষ্কৃত হয়। ইতিমধ্যে ওই তরুণ কারিগরের বয়স কুড়িতে পৌঁছেছে এবং তার জীবনে এসে পড়েছে একটি কিশোরীর প্রতি মুগ্ধতা।

কিশোরীটি স্বভাবে অতি দুরন্ত ও চপল। কিশোরীটির কোলে মাঝেমাঝেই দেখা যায় একটি ছোট্ট ছাগলছানা। আবেগপ্রবণ ওই তরুণ কারিগর বারবার সেই কিশোরীর সংস্রবে এসে পড়ে কিছুটা যেন ভাগ্যবলেই। সেই কিশোরী ওই তরুণটিকে একটি নতুন মিষ্টান্ন প্রস্তুত করতে বলে। তরুণটি প্রতিশ্রুতি দেয় যে ওই কিশোরীর মনের মতো সেই নতুন মিষ্টান্ন সে সৃষ্টি করবেই। ইতিমধ্যে, কিছুটা ভাগ্যবলেই, ওই কিশোরী এবং সেই তরুণের বিয়ে হয়ে যায়। তরুণটি নতুন দোকান করে। কিন্তু তরুণের যাত্রাপথে প্রতিবন্ধকতার আর যেন শেষ নেই। তরুণটি তার পরিকল্পিত নতুন মিষ্টি কিছুতেই তৈরি করতে সক্ষম হয়ে উঠতে পারে না। বারবার ব্যর্থ হয়। ওদিকে তরুণটির গৃহেও অশান্তি দেখা দেয়। অশান্তির মূল কারণ অর্থাভাব। দোকান ভাল চলছে না। ঋণগ্রস্ত হতে হচ্ছে। তাই অশান্তি লেগেই আছে। তরুণটি রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে যায় প্রায় কোনও নিরুদ্দেশ যাত্রায়। নদীর তীরে বসে থাকে। নদী মানে গঙ্গা। এক কীর্তনের দল চলেছে নদীপথে, নৌকায়। তরুণটি তাদের সঙ্গী হয়। এবং সঙ্গী হয়ে যেখানে গিয়ে পৌঁছয় সেখানে। আবারও যেন কিছুটা ভাগ্যবলেই তার সামনে খুলে যায় নতুন মিষ্টান্ন আবিষ্কারের সম্ভাব্য পথ। সে বাড়ি ফিরে আসে। এবং নতুন মিষ্টি উদ্ভাবনে সফল হয়।

স্মৃতি-সত্তা-ভবিষ্যতের কথা বলে ‘রিইউনিয়ন’ ]

‘রসগোল্লা’ নামক চলচ্চিত্রটির এই হল মূল বিষয়। এই ছবিতে অতি পুরনো দিনের কলকাতাকে দেখানো হয়েছে অত্যন্ত মুনশিয়ানার সঙ্গে। রাস্তায় চলছে ঘোড়ার গাড়ি। লালমুখো গোরা সাহেবদের এক-আধবার পথচলতি অবস্থায় দেখা যায়। কলকাতার বাবু বেরিয়েছেন পথে, পিছনে পিছনে মস্ত দণ্ডযুক্ত গোল ছাতা ধরে চলেছে বাবুর ভৃত্য। কিশোরী আর তরুণটি একবার নৌকায় বসে গঙ্গার শোভা দেখছে তখন কিশোরীটির কথাসূত্রে জানা যাচ্ছে এই গঙ্গার উপরে নাকি বিরাট এক পুল বা ব্রিজ বানানো হবে, তখন আর হাওড়া যাওয়ার প্রয়োজন হলে কাউকেই নৌকো করে গঙ্গা পেরতে হবে না। পুল দিয়ে হেঁটেই নদীর ওপারে হাওয়া চলে যাওয়া যাবে। প্রখ্যাত মিষ্টান্ন প্রস্তুতকারক ভীম নাগকে এই ছবিতে অন্তত তিনটি দৃশ্যে দেখা যায়। পথ খুঁজতে খুঁজতে দিশাহারা তরুণ কারিগরকে ভীম নাগ প্রথমে কথা দিয়ে অনুপ্রেরণা দেন। পরবর্তী সময়ে সেই তরুণ কারিগর যখন সমস্যায় পড়েছে, তখন সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন। এই চলচ্চিত্রে নানা ধরনের সংগীতের প্রয়োগ আছে। ফকিরি গান, কীর্তন গান তো আছেই- তার পাশাপাশি আছে বাইজিদের গাওয়া গান। একটি মেহফিলও দেখানো হয়েছে।

এই ছবিতে আবেগঘন নাট্যমুহূর্ত তৈরি হয়েছে অনেকবার। তরুণ কারিগরকে তার স্বপ্নের মিষ্টান্ন প্রস্তুত করে তুলতে কতখানি সংগ্রাম করতে হয়েছে তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বোঝানো হয়েছে।

‘কেদারনাথ’-এ সারা-সুশান্তের প্রেম কতটা মন ছুঁল দর্শকদের? ]

ক্যামরার কাজ সুন্দর। কিছু কিছু ভিস্যুয়াল চোখে লেগে থাকে। এ ছবির বড় সম্পদ অভিনয়। তরুণ কারিগর নবীনচন্দ্র দাশের ভূমিকায় নতুন মুখ উজান গঙ্গোপাধ্যায় খুবই ভাল অভিনয় করেছেন। তবে, নবীনের কিশোরী প্রণয়িনী তথা বধূর চরিত্রে অবন্তিকা বিশ্বাসের অভিনয় অতুলনীয়। ইনিও নিশ্চয়ই নতুন। এঁকে আগে কোনও ছবিতে দেখিনি। অবন্তিকার কাজটি কঠিন ছিল। তিনি সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছেন। রজতাভ দত্ত যে চরিত্রেই অভিনয় করুন না কেন, তাঁর ব্যক্তিত্বই চরিত্রটিকে বৈশিষ্ট মণ্ডিত করে তোলে। এই ছবিতেও তিনি যেকটি দৃশ্যে এসেছেন, দর্শককে তাঁর অভিনয় ভুলতে দেবেন না বলেই এসেছেন। নবীনের জননীর ভূমিকায় বিদীপ্তা চক্রবর্তীও দর্শকের মনে আগাগোড়া ছাপ রেখে যান। তাঁকে মানিয়েছিল সুন্দর। অপরাজিতা আঢ্য যে একজন শক্তিশালী অভিনেত্রী, এই ছবিতে আরও একবার তার প্রমাণ রাখলেন। খরাজ মুখোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রেও সেই একই কথা বলা যায়। খরাজ এক হিন্দিভাষী চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ভাঙা বাংলা আধো হিন্দি মেশানো তাঁর সংলাপ ও অভিব্যক্তি অসাধারণ। শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় তাঁর চরিত্রের প্রতি যথাযথ সুবিচার করেছেন। ছোট্ট একটি টাইপ চরিত্রে কৌশিক সেন অসামান্য। কৌশিকের এই ভূমিকাটির সবচেয়ে জোরালো দিক হল প্রতিবার তাঁর স্বল্পক্ষণ উপস্থিতির পর আমাদের মনে হতে থাকে আবার কখন তাঁকে দেখতে পাব পর্দায়।

এই ছবি পরিচালনা করেছেন বয়সে অত্যন্ত তরুণ এক পরিচালক। তাঁর নাম পাভেল। সার্থক একটি চলচ্চিত্র পরিচালনার কাজে সফল হওয়ার জন্য পাভেলকে আমাদের অভিনন্দন। সবশেষে আমাদের বিষণ্ণ শ্রদ্ধার্ঘ্য আমরা জানাই এই ছবির সংগীত পরিচালক কালিকাপ্রসাদ ভট্টাচার্যকে।

আজকের যুগের ছেলেমেয়েদের সাদামাটা গল্প? নাকি অন্যরকম ছবি ‘জেনারেশন আমি’? ]

The post মিষ্টি নাকি প্রেমের গল্প? কেমন হল ‘রসগোল্লা’? appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement