সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তাঁর হোয়াটসঅ্যাপের ডিপিতে থাকত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (PM Modi) ছবি। গাড়ির পিছনে বহু বছর ধরেই লাগানো ছিল প্রধানমন্ত্রীর বিরাট পোস্টার। এহেন স্বঘোষিত মোদি-ভক্ত আরএসএস (RSS) কর্মী অমিত জয়সওয়ালের মৃত্যু হল করোনা (Coronavirus) আক্রান্ত হয়ে। তাঁর মোদি-ভক্তি এমনই প্রবল ছিল, সেই ঢেউ পৌঁছে গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ফলো করতেন টুইটারে! কিন্তু অমিতের পরিবারের অভিযোগ, শেষ সময়ে বারবার সাহায্যও চেয়েও কোনও লাভ হয়নি। প্রথমদিকে হাসাপাতালে বেড মেলেনি। পরে তা কোনও মতে মিললেও চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সাহায্য মেলেনি।
ভাইয়ের এমন অকালপ্রয়াণ মেনে নিতে পারছেন না দিদি সোনু আলঘে। ৯ দিন হাসপাতালে লড়াইয়ের শেষে ভাইয়ের মৃত্যুর পরই তিনি গাড়ি থেকে সরিয়ে দিয়েছেন মোদির পোস্টার। জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর পক্ষে কখনও প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমা করা সম্ভব হবে না। ক্ষুব্ধ তাঁর স্বামী রাজেন্দ্রও। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে এবিষয়ে কথা বলতে গিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ উগরে শোকসন্তপ্ত রাজেন্দ্র জানাচ্ছেন, ‘‘অমিত ওর সারা জীবন নরেন্দ্র মোদিকে নিয়েই কাটিয়ে দিল। মোদি তার বিনিময়ে কী দিলেন? এমন প্রধানমন্ত্রীর আমাদের কী প্রয়োজন? আমরা তাই পোস্টারটা ছিঁড়ে ফেলেছি।’’
[আরও পড়ুন: ‘করোনায় মানসিক চাপ কমাতে ডার্ক চকোলেট খান’, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে তুঙ্গে বিতর্ক]
৪২ বছরের অমিত ছিলেন মোদির অন্ধ ভক্ত। কেবল মোদিই নয় যোগী আদিত্যনাথের নামে কেউ নিন্দার্থে কিছু বললেই তাঁদের ধরে মারার হুমকি দিতেন। সেই অমিত গত ১৯ এপ্রিল করোনা আক্রান্ত হন। অনেক চেষ্টা করে এক বেসরকারি হাসপাতালে বেড মেলে। কিন্তু চিকিৎসা ঠিকমতো না এগনোয়, তাঁকে মথুরায় এক হাসপাতালে ভরতি করা হয়। এতেও সমস্যার সমাধান হয়নি। মিলছিল না রেমডেসিভির। বিপদে পড়ে দিদি সোনু ভাইয়ের টুইটার হ্যান্ডল থেকেই সাহায্য চেয়ে পোস্ট করেন। সেই পোস্টে ট্যাগ করেন নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহকে। কিন্তু কোনও রকম সাড়া মেলেনি। পরে ওষুধ মিললেও আর বাঁচানো যায়নি অমিতকে।
অমিতের মৃত্যুর ১০ দিনের মধ্যে মারা গিয়েছে তাঁর মা’ও। মাত্র কয়েক সপ্তাহেই জীবনটা আমূল বদলে গিয়েছে সোনুর। এদিকে ঘাড়ের উপরে ঝুলে রয়েছে হাসপাতালের লম্বা বিল! অমিতের বিল ৪.৭৫ লক্ষ টাকা। তাঁর মায়ের বিল ১১ লক্ষ টাকা। এই বিপুল অঙ্কের অনেকটাই এখনও মেটানো সম্ভব হয়নি। কী করে এত বিল হল সেটাও বুঝতে পারছেন না তাঁরা।
[ আরও পড়ুন: অনেক আসনেই দু’হাজারের কম ভোটে হার, পুনর্গণনা চেয়ে কোর্টে যাবে বিজেপি]
তবে তাঁদের মতে, তাঁরা কোনও মতে এই টাকাটা দিয়ে দিতে পারলেও গরিব পরিবারদের পক্ষে কী করে এমন অঙ্কের বিলের মোকাবিলা করা সম্ভব ভেবে পাচ্ছেন না তাঁরা। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁদের অনুরোধ, ‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার কাছে আমরা প্রার্থনা করছি। আপনিই এদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। দয়া করে কিছু করুন।’’