সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’র সঙ্গে অদ্ভুতভাবে জড়িয়ে যায় বিধানচন্দ্র রায়ের নাম। ‘পথের পাঁচালী’ সম্পর্কীত নানা প্রবন্ধ, সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, ‘পথের পাঁচালী’ ছবি তৈরির সময় যখন অর্থ জোগার করতে পারছিলেন না সত্যজিৎ। ঠিক তখনই তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন পরিচালক। এও শোনা যায়, বিধান রায় নাকি সত্যজিৎকে বলেছিলেন গল্পের শেষটা বদলে দিতে। এবং ছবির শেষে গ্রাম-পঞ্চায়েত নিয়ে কিছু দেখালে, তবে নাকি পঞ্চায়েতের প্রচারপত্র হিসেবে সিনেমার অর্থ বরাদ্দ করা সম্ভব হবে। তবে শুধু ছবির শেষাংশ নয়, ‘পথের পাঁচালী’র আরও অনেক দৃশ্য নিয়ে নিজের আপত্তির কথা শোনা যায়। পুরনো কিছু গসিপ ম্যাগাজিন থেকে জানা যায় ‘বীণা’ সিনেমায় ‘পথের পাঁচালী’ ছবিটা দেখতে গিয়েছিলেন বিধান রায়। তবে পুরোটা তিনি দেখেননি। এমনকী, পুকুরের জলে কুকুরের প্রতিফলনের দৃশ্য দেখে দৃশ্যটা সোজা করে দেখানোর রসিকতাও করেছিলেন নাকি বিধানচন্দ্র রায়।
‘পথের পাঁচালী’র কথা উঠলে বিধান রায়কে নিয়ে পর পর বহু তথ্য পাওয়া যায়। যা কিনা সব সময়ই আলোচনার কেন্দ্র হয়ে ওঠে। কিন্তু এই তথ্য়েরও আরেকটা দিক রয়েছে। যা কিনা তর্কের বিষয়। তৎকালীন সিনে সমালোচক, সিনে সাংবাদিকদের মধ্য়ে কেউ কেউ আবার এই তথ্যগুলোকে শুধুমাত্রই গুঞ্জন বলে মনে করেছেন। এই ধারণার পিছনে রয়েছেন দুই নামকরা সত্যজিৎ জীবনীকার। মারি সেটন লিখছেন, বিধান রায় নাকি ছিলেন “a man with no pronounced love of art and no knowledge of film as an expressive medium.” অ্যান্ড্রু রবিনসন এককাঠি এগিয়ে বিধান রায় সম্পর্কে তাঁর বিখ্যাত বই ‘ইনার আই’তে লিখেছেন “from the beginning, misunderstood the film’s nature, seeing it as a documentary.”
এই দুই লেখকের থেকে পাওয়া ধারণার উপর নির্ভর করেই এই তথ্যগুলোর উলটো মত তৈরি হয়েছে। যেখানে জানা যায়, সিনেমা তৈরির টাকা দেওয়া হয়েছিল পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের টাকা থেকে। কারণ তৎকালীন সরকার নাকি সিনেমার নাম দেখে ভেবেছিলেন এটা গ্রামের রাস্তা বানানোর একটি তথ্যচিত্র।
[আরও পড়ুন: প্রেসিডেন্সি যেন ‘মহব্বতে’র ‘গুরুকূল’! প্রেমে ফরমান, সৃজিতের প্রশ্ন ‘ধাপার মাঠে যাবে?’]
পরিচালক হিসেবে কোনও অর্থ পাননি সত্যজিৎ রায়। শুধু সিনেমা তৈরির জন্য়ই টাকা দেওয়া হয়েছিল। জানা যায়, সরকারি আধিকারিকরা নাকি বারবার বলেছিলেন এ ছবিতে টাকা না ঢালতে। কিন্তু বিধান রায় তাঁদের কথা নস্যাৎ করে দেন।
উপরের এই তথ্যগুলোকেই একেবারে নসাৎ করে দেয় সত্যজিৎ বিশেষজ্ঞ ছন্দক সেনগুপ্ত। তাঁর লেখা বইয়ে উড়িয়ে দেন উপরের সবকটি তথ্যকে। বিশেষ করে রবিনসনের তথ্যকে। ছন্দক সেনগুপ্তর লেখা অনুযায়ী, সত্যজিৎ রায়ের এই ছবি তৈরি করা উচিত কিনা তা নিয়ে একটা উপদেষ্টা কমিটি তৈরি হয়েছিল। যেখানে ছিলেন পি এস মাথুর। তিনি ছবির কিছুটা অংশ দেখেই মুগ্ধ হয়ে যান। বোঝেন এই ছবির মেরিট রয়েছে। তারপর পঙ্কজ মল্লিক ও বিধান রায় ছবির রাফ কাট দেখেন এবং তাঁর পছন্দ হয়। ছবির টাকা আদৌ পি ডব্লু ডি থেকে আসেনি। এসেছিল লোকরঞ্জন শাখা থেকে। সত্যজিৎ নিজে ফোক ইসাকসনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন এ-কথা।
সত্য়জিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’র বিশ্বজয়। এই ছবি ভারতীয় চলচ্চিত্রের একটি দলিলস্বরূপ। এই ছবি নিয়ে যখনই আলোচনা হবে, ততবারই উঠে আসবে বিধানচন্দ্র রায়ের নাম। আর বার বার উঠে আসবে এই বহুচর্চিত তথ্যগুলো।
তথ্যসূত্র- ছন্দক সেনগুপ্ত, ইন্টারভিউস- সত্যজিৎ রায়