চারুবাক: বৃন্দাবন ও বেনারস একটা সময়ে অসহায় বাঙালি বিধবার একমাত্র আশ্রয়স্থল ছিল। কিশোরী, তরুণী বা মাঝবয়সী যে বয়সের বিধবা হোক না কেন, সংসারে “বাড়তি” হয়ে পড়লেই তাঁদের একমাত্র গন্তব্য ছিল বৃন্দাবন বা কাশী। কাশীতে তো “মুক্তি ভবন” নামে একটি বাড়িই আছে এমন অসহায় বিধবাদের একমাত্র আশ্রয়! সাহিত্যিক প্রফুল্ল রায় সেই “মুক্তি ভবন” নিয়ে একটি উপন্যাসও লিখেছিলেন, এবং সেই গল্প নিয়ে বাংলায় একটি ছবিও হয়েছিল। সেই কাহিনিতে অবশ্য অন্য একটা টুইস্টও ছিল। কাশীতে চলতি প্রবাদ আছে মৃত্যুপথযাত্রী কোনও মানুষ ওখানে গিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ফেললে তাঁর নাকি সরাসরি স্বর্গবাস হয়।
পরিচালক রাজর্ষি দে তাঁর নতুন ছবি ‘সাদা রঙের পৃথিবী’তে বাঙালি অসহায় বিধবাদের তেমনই এক মুক্তি ভবনকে ঘিরে স্বর্গবাস নয়, নিশ্চিত নরকবাসের এক অমানবিক, নারকীয় কাহিনির চিত্ররূপ দিয়েছেন। যেখানে সাধুর বেশে অসাধু ও অসৎ কাজের কারখানা চালান নিগুরানন্দ নামের এক ভন্ড! সুরমা ও পরমা নামের যমজ দুই বোন শিবানী ও ভবানি ( শ্রাবন্তী) তরুণী বিধবা পাচারে লিপ্ত। রাজর্ষির চিত্রনাট্যে এসেছে এই কুচক্রকে ভাঙার জন্য ছদ্মবেশী পুলিশের কর্তা, সাংবাদিক। এদের নিয়েই তিনি যেমন ঘটনার জটিল ধাঁধা তৈরি করেন, তেমনই কাশীর বিখ্যাত ঘিঞ্জি গলিতে চলে দৌড় প্রতিযোগিতা।
[আরও পড়ুন: প্রাক্তন কিরণকে নিয়ে মুসৌরিতে আমির, ডিভোর্সের পরও অটুট বন্ধন! ছেঁকে ধরল ভক্তরা]
ছবিতে ব্যবসায়িক ফর্মুলা হিসেবে রয়েছে সুরমাসহ কয়েকটি নারী চরিত্রের মুখে গালমন্দ! এমনকী, শ্রাবন্তীর মুখ দিয়ে যৌন সুড়সুড়ি দেওয়া সংলাপও বাদ পড়েনি! তবে ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়ের ভবঘুরে চরিত্রটি কিঞ্চিৎ পজিটিভ ভাবনা প্রসূত!
শ্রাবন্তী অবশ্যই দুটি চরিত্রের অসহায়তা সুন্দর প্রকাশ করেছেন। নিজের যন্ত্রণা প্রকাশের দৃশ্যে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি কতটা কী করতে পারেন। সৌরসেনী মৈত্র সুযোগ কম পান টালিগঞ্জে, এই ছবিতে তিনি আবার প্রমাণ করলেন টলিউড তাঁকে এখনও ঠিক করে ব্যবহার করতে পারেনি। রিচা শর্মা স্বল্প সময়েই নিজের স্বাচ্ছন্দ্য প্রমাণ করেছেন। অনেক নতুন মুখের ভিড়ে অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ ভালো। অরিন্দম শীল হয়েছেন ভদ্রবেশী অসাধু নিগুরানন্দ। বেশ ভালই। রাজর্ষি নিজে বৃদ্ধবয়সী সাধুর পোশাকে অশান্ত প্রেমিকের চরিত্রটি মন্দ করেননি। তবে বলা ভালো ‘সাদা রঙের পৃথিবী’ ছবির থেকেও রাজর্ষিকে মনে রাখব “আবার কাঞ্চনজঙ্ঘা” ছবিতেই। “আবার কাঞ্চনজঙ্ঘা” ছবিকে ছাপিয়ে যেতে পারল না রাজর্ষির ‘সাদা রঙের পৃথিবী’।