বিধান নস্কর, দমদম: ‘সন্দেশখালি দ্বিতীয় নন্দীগ্রাম’, দিল্লি যাওয়ার পথে ফের বিস্ফোরক দাবি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর। এর আগে অবশ্য বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষও একই কথা বলেছিলেন। এমনকী অগ্নিমিত্রা পলের ভাইরাল অডিও ক্লিপেও ‘নন্দীগ্রাম মডেলে’র আভাস পাওয়া গিয়েছে। বঙ্গ বিজেপির একের পর এক নেতার দাবির পরেও ষড়যন্ত্রের তত্ত্বেই এককাট্টা তৃণমূল। শাসক শিবিরের দাবি, লোকসভা নির্বাচনের মুখে তৃণমূলকে কলুষিত করছে বিজেপির ইন্ধনেই জ্বলছে সন্দেশখালি।
জমি, ভেড়ি দখলের অভিযোগকে কেন্দ্র করে অশান্ত সন্দেশখালি। ৫১ দিন ধরে দফায় দফায় জ্বলছে গ্রামের পর গ্রাম। সময় যত গড়াচ্ছে ততই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ‘ভুল’ যে হয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারও। গ্রামবাসীদের দাবি, নালিশের পাহাড় যার বিরুদ্ধে সেই শেখ শাহজাহানকে ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। অথচ নিরীহ গ্রামবাসীদের পাকড়াও করা হচ্ছে। বাদ যাচ্ছে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীও। তাকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় থানায়। ক্ষোভের আগুনে ফুঁসছেন স্থানীয়রা। পুলিশি ধরপাকড়ের প্রতিবাদে পথে নেমে আন্দোলনে শামিল গ্রামেরই বধূরা। উর্দিধারীদের রুখতে কেউ রাস্তায় শুয়ে পড়েছেন। আবার কোথাও কোথাও ফেলা হয়েছে গাছের গুঁড়ি, কাঁটা গাছের ডালপালা। অনেকেই বলছেন, এই আন্দোলনের প্রকৃতিই নাকি নন্দীগ্রাম আন্দোলনের স্মৃতিকে চাঙ্গা করেছে।
[আরও পড়ুন: থানার মালখানা থেকে উধাও নেশার সামগ্রী! এডিজি উত্তরবঙ্গকে তদন্তের নির্দেশ হাই কোর্টের]
শনিবার দিল্লি যাওয়ার পথে সন্দেশখালির সঙ্গে নন্দীগ্রামের আরও একবার তুলনা টানেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বলেন, “সন্দেশখালিতে বশ্যতার বিরোধী সংগ্রাম চলছে। নন্দীগ্রাম শুরু হয়েছিল জমি অধিগ্রহণ দিয়ে। এটা শুরু হয়েছে মেয়েদের উপর অত্যাচার দিয়ে। তার সঙ্গে জমি অধিগ্রহণ তো রয়েছেই। তবে যেটা নন্দীগ্রামে ছিল না সেটা এখানে রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারে আসার পরে ২০১৩ সাল থেকে কেউ ভোট দিতে পারেননি।” এর আগে দিলীপ ঘোষও প্রায় একই দাবি করেছিলেন, “নন্দীগ্রাম একটা গেম চেঞ্জার ছিল। এটা দেখেও বহু মানুষ প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে পাবেন। নন্দীগ্রামের মতো পরিস্থিতি অনেক জায়গায় তৈরি হবে। সাধারণ মানুষ নিজের হাতে ঝাণ্ডা তুলে প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে নিচ্ছেন। তারা এখন কোনও রাজনৈতিক দলকেই খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। মানুষকে নিজের রাস্তা নিজেই খুঁজে নিতে হচ্ছে।”
যদিও তৃণমূলের দাবি, শুভেন্দুরাই ষড়যন্ত্র করে সন্দেশখালিতে অস্থিরতা জিইয়ে রাখছে। সন্দেশখালিকে নন্দীগ্রাম বানানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের অন্যতম নেতা ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। ‘নন্দীগ্রাম মডেল’কে মাথায় রেখেই সন্দেশখালির ঘটনা নিয়েও শুভেন্দু গোড়া থেকে সক্রিয়। সম্প্রতি অগ্নিমিত্রা পলের সঙ্গে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির ভাইরাল অডিও ক্লিপে সেই আভাস মিলেছে বলেই দাবি শাসক শিবিরের। তবে ওয়াকিবহাল মহলের মতে, নন্দীগ্রাম ও সন্দেশখালির বিতর্কের প্রেক্ষাপট বেশ আলাদা। নন্দীগ্রামে চাষের জমি জোর করে অধিগ্রহণ করতে চেয়েছিল সরকার। সন্দেশখালিতে সেই পরিস্থিতি নেই। গ্রামবাসীদের শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ। অর্থাৎ সন্দেশখালি কাণ্ডের সঙ্গে নন্দীগ্রামের তুলনা টানা মোটেও ঠিক নয়।