সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ভাইরাসের আঘাতে তারা দিশাহীন। অথই জলে ভবিষ্যৎ। প্রতিপদে দু’ হাতে তাদের ঘিরল স্নেহের দেওয়াল। সে দু’হাতের এক বাহু যদি হয় ভারত সেবাশ্রম সংঘ, তো অন্য বাহু ‘সংবাদ প্রতিদিন’। করোনায় স্বজন হারানো শিশুদের পাশে দাঁড়াতে হাত ধরাধরি করে বনস্পতি হল ভারত সেবাশ্রম সংঘ ও ‘সংবাদ প্রতিদিন’।
লক্ষ্যপূরণের এ দৌড় শুরু হয়েছিল মাস দুয়েক আগে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিশান্তদেব ঘটকের চেম্বার থেকেই। চিকিৎসকের কথায়, “বছর দুয়েক আগেও যারা মা-বাবার সঙ্গে চেম্বারে আসত। করোনা আবহে আকস্মিক একদিন দেখি মা শিশুদের নিয়ে একাই আসছেন। জিজ্ঞেস করে জানতে পারি কোভিড ছিনিয়ে নিয়েছে বাবাকে।” চিন্তার এই স্ফুলিঙ্গ থেকেই ‘আদর’ এর জন্ম। কে কোথায় রয়েছে ছড়িয়ে? শুরু হয় খোঁজ। ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর দপ্তরে ফোন আসে অগুনতি শিশুর পরিবারের। মেদিনীপুর থেকে হুগলি, চন্দননগর, নদিয়া কিংবা উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত গ্রামে যাদের অভিভাবকহীন করেছে করোনা (Coronavirus)। মাত্র দেড় বছরেই কারও বাবা আকাশের তারা হয়ে গিয়েছেন, একমাত্র উপার্জনকারীর মৃত্যুতে একাদশ শ্রেণিতে কারও পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার মুখে।
[আরও পড়ুন: গর্ভস্থ যমজের একজন মৃতপ্রায়, বিশেষ পদ্ধতিতে সুস্থ সন্তানকে বাঁচিয়ে নজির চিকিৎসকদের]
প্রতিকূলতা কাটাতে প্রয়োজন অর্থের। সে কাজে নিজেদের অ্যাকাউন্ট চালু করে ভারত সেবাশ্রম সংঘ। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে দুস্থ মানুষদের সাহায্যার্থে অকুণ্ঠ পরিশ্রম করছে এই সংস্থা। ‘সংবাদ প্রতিদিন’ নেয় প্রচারের ভার। এমন শিশুদের খবর চাউর হতেই বাংলার প্রতিটি কোনা থেকে উঠে আসে সাহায্যের আশ্বাস। সে আশ্বাসে যেমন ছিল আঠারো বছরের তরুণ, তেমনই অবসরপ্রাপ্ত প্রৌঢ়। ৫০ টাকা থেকে ২০ হাজার, যে যেমন পেরেছেন সাহায্য করেছেন। আরও বলিষ্ঠ হয়েছে আদরের হাত। স্বপ্ন সাকার করার ইচ্ছে দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়েছে। বৃহস্পতিবার এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সফল হল ‘আদর’-এর প্রথম ধাপ। ছোট ছোট শিশুদের একজোট করে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হল সাহায্যের প্রথম কিস্তি। প্রত্যেক শিশুর জন্য ১০ হাজার টাকা।
[আরও পড়ুন: আমজনতার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তৎপর লালবাজার, কলকাতার সব পুজোর নজরদারিতে পুলিশ]
এ সাহায্য মহাসাগরের ঢেউ মাত্র। আগামী দিনেও তাঁদের পাশে থাকবে ভারত সেবাশ্রম এবং ‘সংবাদ প্রতিদিন’। এদিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারত সেবাশ্রম সংঘের স্বামী বিশাত্মানন্দজি, দেবাশিস মহারাজ, ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর সম্পাদক সৃঞ্জয় বোস, সহকারী সম্পাদক কিংশুক প্রামাণিক, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নিশান্তদেব ঘটক। তাঁদের হাত থেকেই ‘আদর’ এর পরশ লেগেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের সুচিত্রা মাইতি, রামজীবনপুরের শুভশ্রী নিয়োগী, হুগলি হরিপালের রুমা পাত্র, হাওড়ার শুক্লা লাহা, চন্দননগরের তন্দ্রা দেব শর্মা, বাঁশদ্রোণীর ধ্রুবজ্যোতি চক্রবর্তীদের মুখে। সকলের চোখে হাসি ফুটিয়েছে আদরের প্রয়াস। প্রাপকরা জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে এই সাহায্য তাঁদের প্রয়োজন শুধু নয়, অত্যন্ত আবশ্যক ছিল। শারোদোৎসবের (Durga Puja) আগে যা সামান্য হলেও তাদের সাহায্য করবে।
বন্যা এবং পরিবহণের সমস্যায় অনেকেই বালিগঞ্জের ভারত সেবাশ্রম দফতরে এদিন পৌঁছতে পারেননি। তাঁদের হাতে আর্থিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার কথা ভাবছে ‘আদর’। ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের সাধারণ সম্পাদক স্বামী বিশ্বাত্মানন্দজি জানিয়েছেন, মারণ ভাইরাসের আকস্মিক ছোবলে তটস্থ সারা পৃথিবী। অগুনতি শিশু মা-বাবা হারিয়েছে। তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সংবাদ প্রতিদিনকে অসংখ্য ধন্যবাদ। দেবীপক্ষ শুরু হয়ে গিয়েছে। শরতের আকাশে এখনও কালো মেঘের আনাগোনা। যেমনটা এই স্বজন হারানো শিশুদের জীবনেও। তবু ‘আদরে’র প্রয়াস প্রমাণ করল মেঘ যতই কৃষ্ণকায় হোক, সোনারোদ উঠবেই।